চট্টগ্রাম : খাস জমির অবৈধ দখলমুক্ত করার খবর নেই। উল্টো দখলদারকে রক্ষার অভিযোগ উঠেছে হাটহাজারী উপজেলা ভূমি অফিসের বিরুদ্ধে। এমনটা অভিযোগ উপজেলার চিকনদণ্ডী খন্দকিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. এমরানের। তার অভিযোগ, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সরকারি জমি দখলের প্রমাণ পেয়ে প্রায় এক বছর আগে উচ্ছেদের নোটিশও জারি করেছিল উপজেলা ভূমি অফিস। গত এক বছরেও প্রতিপক্ষের দখলে থাকা সেই জমি উদ্ধারের চেষ্টা না করে উল্টো তার মৌরশী সম্পত্তি চলাচলের রাস্তার একাংশ প্রতিপক্ষের মালিকানাধীন বলে আদালতে বারবার তদন্ত রিপোর্ট দিচ্ছেন সার্ভেয়ার নিরুপম চাকমা।
এমরানের অভিযোগ, নালিশী তফসিলের জমি সরেজমিন পরিমাপ করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ৪০০ বর্গফুট সরকারি জমি দখলে রাখার প্রমাণ পেয়ে ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দেন সার্ভেয়ার নিরুপম। প্রতিবেদনে তার মৌরশী সম্পত্তি চলাচলের রাস্তার (বিএস ১১৪ দাগ) একাংশ প্রতিপক্ষের মালিকানাধীন বলে উল্লেখ করেন।
পরে তিনি (এমরান) আদালতে নারাজি দিলে পুনরায় পরিমাপ করে আদালতে প্রতিবেদন দেন সার্ভেয়ার। কিন্তু আগের প্রতিবেদনে প্রতিপক্ষ কর্তৃক সরকারি জমি দখলের বিষয়টি উল্লেখ করলেও সর্বশেষ দেওয়া প্রতিবেদনে তা পাশ কাটিয়ে যান সার্ভেয়ার নিরুপম। চলতি বছরের ২৪ আগস্ট আদালতে দেওয়া ওই প্রতিবেদনে খন্দকিয়া মৌজার বিএস ১১৪ দাগে বিদ্যমান ৫৪ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৮ ফুট প্রস্থের চলাচলের রাস্তাটির রেকর্ডিয় মালিক বাদী বলে উল্লেখ করলেও রাস্তাটির একাংশ প্রতিপক্ষের বলে মন্তব্য করায় সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ওই প্রতিবেদনে সার্ভেয়ার উল্লেখ করেন, নালিশী বিএস ১৭২ ও ১৭৩ দাগের মোট জমি দশমিক ১৪৪৯ একর। এর মধ্যে দাগের উত্তরে প্রতিপক্ষ লায়লা বেগমের জায়গা শূন্য দশমিক ০৮০৯ একর এবং দক্ষিণে বাদীর (এমরানের) জায়গা শূন্য দশমিক ০৬৪০ একর। আগের তদন্ত প্রতিবেদনে সার্ভেয়ার নিরুপম চাকমা আলোচ্য দাগ দুটোর পূর্বাংশে ৪০০ বর্গফুট সরকারি খাস জায়গা প্রতিপক্ষ দখল করেছেন বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু সর্বশেষ দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে প্রতিপক্ষ কর্তৃক খাস জায়গা দখলে নেওয়ার বিষয়টি ‘রহস্যজনক’ কারণে এড়িয়ে যান সার্ভেয়ার।
এমরানের অভিযোগ, সরেজমিন পরিমাপ করে প্রতিপক্ষের জমির পরিমাণ প্রতিবেদনে সঠিকভাবে উল্লেখ করলেও তাদের (প্রতিপক্ষ) বিদ্যমান সীমানা দেয়ালের বাইরেও আলোচ্য দাগ দুটোর কিছু অংশ রয়েছে এবং তা বিএস ১১৪ দাগে পড়েছে বলে মন্তব্য করে দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ তৈরি করছেন সার্ভেয়ার নিরুপম চাকমা।
‘মূলত ১১৪ দাগের চলাচলের রাস্তাটি আমাদের পারিবারিক এবং মৌরশী সম্পত্তি। উক্ত দাগের বিএস খতিয়ানে প্রতিপক্ষের কারও নাম বা মালিকানা নেই। তবুও সার্ভেয়ার প্রতিপক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে এক বছর ধরে আমাকে হয়রানি করে যাচ্ছেন। এসি-ল্যান্ডের কাছে এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়েও পাইনি। উল্টো আমাদের মৌরশি রাস্তায় কখনও মাটি ফেলে, কখনও ময়লা ফেলে আমাকে হেনস্থা করছেন প্রতিপক্ষের লোকজন’, বলেন এমরান।
এদিকে উপজেলা ভূমি প্রশাসন কর্তৃক বারবার হয়রানির শিকার হয়ে ভুক্তভোগী এমরান দ্বারস্থ হন স্থানীয় চিকনদণ্ডী ইউপি চেয়ারম্যান হাসান জামান বাচ্চুর কাছে। চেয়ারম্যান হাসান জামান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার পরিষদে বৈঠক ডাকা হয়। বিএস ১১৪ দাগের মালিকানা সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি প্রতিপক্ষ। সব দলিল দস্তাবেজ ঘেঁটে প্রমাণ হওয়ায় ১১৪ দাগের রাস্তাটি এমরানের মৌরশী বলে শালিসি রোয়েদাদে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া নালিশী দাগের (১১৪) জায়গার বিষয়ে হাটহাজারী থানার সাবেক ওসি রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে বেসরকারি তিনজন সার্ভেয়ারের সরেজমিন প্রতিবেদন এবং বিজ্ঞ আদালতের সার্ভে কমিশন রিপোর্ট পর্যালোচনা করে ১১৪ দাগে চলাচলের রাস্তাটি এমরানের মালিকানা বা তার মৌরশী বলে প্রমাণিত হয়েছে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাটহাজারী ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার নিরুপম চাকমা একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এমরান বারবার মামলা করে নিরীহ প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে। নিরীহ প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে ৩-৪টি মামলা করেছেন। যাদের বিরুদ্ধে মামলা করে তারা খুবই অসহায় মানুষ। এমরানের বাড়ি পাকা দালান। আর যাদের বিরুদ্ধে মামলা করছে তাদের বাড়ি ভাঙাচোরা। ৬ ফুট প্রস্থের একটি রাস্তা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলা। ওই রাস্তা দিয়ে দু’পক্ষই চলাফেরা করে। ১৭২ ও ১৭৩ দাগে ৩ ফুট এবং ১১৪ দাগে ৩ ফুট। কিন্তু পুরো অংশ নিজের বলে দাবি করছেন এমরান। স্বয়ং আমি কয়েকবার গিয়ে জায়গা পরিমাপ করেছি। পরে তাদেরকে বললাম, আমাদের পরিমাপ না মানলে আপনারা দু’পক্ষ দু’জন করে সার্ভেয়ার নিয়ে আসেন। এমরান সার্ভেয়ার আনেননি।’
একই বিষয়ে জানতে চাইলে হাটহাজারী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু রায়হান একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘সার্ভেয়ার যে প্রতিবেদন দেন, এই প্রতিবেদন যদি আপনার পছন্দ না হয়; তাহলে তার তো নারাজি দেওয়ার সুযোগ আছে। নারাজি দেওয়ার পর এসিল্যান্ডকে তদন্তের নির্দেশ প্রদানের সুযোগ আছে। সব মামলায় তো সরেজমিনে যাওয়ার সুযোগ হয় না। কোর্ট থেকে যদি এসিল্যান্ডকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেয়, তখন সরাসরি যাবো। আমাদের তো কাগজপত্রের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এখন আইন করছে, দলিল যার জায়গা তার। রাস্তা ও রাস্তার পাশের জায়গা নিয়ে সমস্যা হয়েছে। আপনারা নিউজ করেন সমস্যা নেই। সবার প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ আছে।’