রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে স্বপ্ন বুনছে মানুষ

প্রকাশিতঃ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৩:০৩ অপরাহ্ন


জিন্নাত আয়ুব : চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেলের (বঙ্গবন্ধু টানেল) উদ্বোধনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই মানুষের স্বপ্ন ডানা মেলছে। আগামী ২৮ অক্টোবর টানেল চালু করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। টানেল চালু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে এখন নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠতে কোনো বাধা থাকবে না। ইতিমধ্যে টানেলকে ঘিরে মানুষ ব্যক্তিগত নানা প্রকল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মানুষ টানেলের আশপাশে জমি কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। আনোয়ারায় এখন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কিনে রাখা জমির সাইনবোর্ড চোখে পড়ে। কেউ কেউ জমি কিনে সীমানাপ্রাচীরও তৈরি করেছেন। এই এলাকায় জমির দাম হু হু করে বাড়ছে।

টানেলের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আনোয়ারা-কর্ণফূলী অঞ্চলের অর্থনীতির প্রায় পুরোটাই বর্তমানে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। মাত্র ২ শতাংশ জমি শিল্পে ব্যবহৃত হয়। বাকি প্রায় ৪৭ শতাংশ কৃষি জমি। তবে টানেলটি চালু হলে ওই এলাকার প্রায় ২৭ শতাংশ শিল্প উন্নয়নের ব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সাত বছর পর, টানেল চালুর আগেই কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে জমিগুলো যেন সোনায় রুপ নিয়েছে। ইতোমধ্যেই দেশের শীর্ষগ্রুপ এস আলম, আকিজ গ্রুপ, ফোর এইচ গ্রুপসহ শত শত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হাজার হাজার একর জমি ক্রয় করেছেন গত তিন-চার বছরে। এতে আশপাশের জমির দাম বেড়েছে দশগুণের বেশি।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, এক দশক আগেও আনোয়ারায় টানেলের পাশের ও সড়কের আশপাশের জমি বেশ কম দামে কেনাবেচা হতো। সেই সময়ের তুলনায় এখন জমির দাম ১০ গুণ বেশি। উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করার জন্য জমি কিনছেন। আবাসন ব্যবসায়ীরাও জমি কিনছেন।

কর্ণফূলীর দক্ষিণ পাড়ে গার্মেন্টস, জাহাজ নির্মাণ, ভোজ্যতেল, মাছ প্রক্রিয়াকরণ, ইস্পাত, সিমেন্টসহ অন্তত ৮০টি শিল্প কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন ব্যাসায়ীরা। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনও শুরু করেছে। টানেলকে কেন্দ্র করে দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর দক্ষিণ তীরে একটি ইস্পাত কারখানা ও অক্সিজেন প্লান্ট চালু করেছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম শিল্প পরিবার মোস্তফা হাকিম গ্রুপ। এইচ এম স্টিল কারখানা ও এইচ এম অক্সিজেন প্লান্ট নামের প্রতিষ্ঠান দুটিতে বর্তমানে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক কাজ করছে।

এছাড়া কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলায় কারখানা স্থাপনের লক্ষে জমি কিনেছে দেশের শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপ, ফোর এইচ গ্রুপ, ডায়মন্ড সিমেন্ট, এস আলম গ্রুপ ও পারটেক্স গ্রুপ। ইতোমধ্যে গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- কর্ণফূলী উপজেলার জুলধায় সুপার ফার্মাসিক্যাল লিমিটেড, পার্টেক্স পেট্রো লিমিটেড, একর্ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভিস লিমিটেড, বিএন লুব্রিকেন্ট।

কর্ণফুলীর খোয়াজনগর ও ইছানগর এলাকায় উৎপাদন শুরু করেছে বেলামি টেক্সটাইল, এটিপি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, জিএসএল এক্সপোর্ট, বেঞ্চমার্ক অ্যাপারেল, ইউসা ব্যাটারি ফ্যাক্টরি। বঙ্গবন্ধু টানেলের অ্যাপ্রোচ রোড সড়কের কাছাকাছি এলাকায় গড়ে উঠেছে বিশাল পোশাক কারখানা এইচ এস কম্পোজিড টেক্সটাইল। প্রায় এক একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠতে যাওয়া ওই পোশাক কারখানায় তিন থেকে পাঁচ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আধ কিলোমিটার দূরত্বে প্রায় পাঁচ একর জমিতে গড়ে তোলা সাদ মুসা শিল্পপার্কে রয়েছে কটন মিলস, টেক্সটাইল মিল, স্পিনিং মিলস ও কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলসসহ বেশকিছু রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। টানেল চালুর পর অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে এভাবেই শিল্পয়নে মুখর হচ্ছে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়; যাতে এক সময়ের গ্রামগুলো পরিণত হচ্ছে উপশহরে।

আনোয়ারার বৈরাগ ইউনিয়নের বাসিন্দা মহিউদ্দিন কবির বলেন, ‘টানেল ঘিরে ইতোমধ্যে আমাদের এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো জমি কেনাবেচা চলছে। জমির দাম আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। এবং টানেল সংযোগ সড়ককে ঘিরে গড়ে উঠেছে দোকান, মার্কেট, শিল্প কারখানাসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।’

চাতরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন চৌধুরী সোহেল একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘চাতরী চৌমুহনী থেকে একশ মিটার দূরত্বে টানেলের সংযোগ সড়ক। টানেল ঘিরে এখানকার চিত্র আমূল পাল্টে গেছে। অসংখ্য শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে। কয়েকটি কারখানা এই মাসের মধ্যেই উৎপাদনে যাবে। এতে এখানকার গ্রামীণ জনপদের পুরো চিত্র পাল্টে যাবে।’

কর্ণফুলী টানেল দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পর্যটন ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে। এ টানেল মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সারা দেশের সড়কপথে যোগাযোগ সহজ করবে। শুধু আনোয়ারা বা কর্ণফুলীই নয়, মিরসরাই থেকে নদীর পার ধরে কক্সবাজার পর্যন্ত বিনিয়োগের বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হবে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনাল ও চট্টগ্রাম বন্দর—এই দুই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে সহজ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে টানেলটি।

কেইপিজেড, কাফকো, ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি ও সিইউএফএল এর পাশাপাশি গড়ে উঠা নতুন নতুন শিল্প কারখানাকে কেন্দ্র করে আনোয়ারার চাতুরি চৌমুহনী ও বন্দর সেন্টার এলাকায় গড়ে ওঠেছে অসংখ্য অভিজাত রেস্টুরেন্ট, আধুনিক হোটেল-মোটেল।

বঙ্গবন্ধু টানেলের কারণে আনোয়ারার পর্যটনশিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে; বিশেষ করে পারকি সমুদ্রসৈকত পর্যটনের ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। পারকি সৈকতে ক্ষুদ্র ব্যবসার সাথে যুক্ত মো. ইসমাঈল হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ হওয়ার পর এখানে পর্যটকের চাপ বহুলাংশে বাড়বে। তাই ব্যবসা-বাণিজ্যও চাঙা হবে।’

আনোয়ারা উপজেলার বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘টানেলকে ঘিরে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে অনেক বেশি শিল্পকারখানা গড়ে উঠতে শুরু করেছে এবং পর্যটন শিল্পে আরও বেশি প্রসার লাভ করতে শুরু করেছে। এ এলাকা শিল্প স্থাপনের জন্য উপযোগী হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়া এতদিন তা হয়ে ওঠেনি। এখন টানেলকে ঘিরে এ এলাকায় জমির দামও দ্বিগুণ-তিনগুণ পর্যন্ত বেড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আনোয়ারা থেকে সড়কপথে বিমানবন্দর যেতে আগে যেখানে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগতো, টানেল দিয়ে লাগবে মাত্র ৩০ মিনিট।’

স্থানীয়রা মনে করেন, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ, চায়না ইকোনেমিক জোন বাস্তবায়ন ও পিএবি সড়কের চার লাইনের কাজ এবং টানেলমুখি ছয় লেনের মহাসড়কের কাজ সম্পুর্ণ হলে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামের চিত্র পাল্টে যাবে।

বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে শুরুতে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড় আনোয়ারাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে শিল্পায়ন হবে। টানেলের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর, বে টার্মিনাল, মিরসরাই ইকোনোমিক জোনের মধ্যে সহজ যোগাযোগ গড়ে উঠবে। তবে টানেলের প্রভাব হবে আরো সূদুরপ্রসারী। এটি মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প করিডর গড়ে তুলতে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে; পাশাপাশি এটি হবে এশিয়ান হাইওয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইশতিয়াক ইমন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আনোয়ারাকে এখন ওয়ান সিটি টু টাউন বলা হচ্ছে। আনোয়ারাবাসী বঙ্গবন্ধু টানেল নিয়ে খুবই উৎফুল্ল ও গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছে, কবে টানেল উদ্বোধন হবে। উদ্বোধনকে ঘিরে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। একজন নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণের মতো সুযোগ থাকতে হয় একটি উপশহরে। টানেল দিয়ে যোগাযোগ স্থাপনের মধ্য দিয়ে সহজেই আনোয়ারা উপশহর হতে যাচ্ছে।’

বর্তমানে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারমুখী পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করে শাহ আমানত তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু ও কালুরঘাট সেতু দিয়ে। আবার দেশীয় নৌকায় করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ কর্ণফুলী নদী দিয়ে যাতায়াত করে। টানেল চালু হলে শুরুতে কর্ণফুলী সেতু দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের একাংশ সেতুর বদলে টানেল দিয়ে চলাচল করবে। এরসঙ্গে যুক্ত হবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিল্পকারখানার পণ্যবাহী গাড়ি। তবে টানেলের সর্বোচ্চ সুফল পেতে আনোয়ারা-বাঁশখালী-কক্সবাজারের পেকুয়া পর্যন্ত সড়কের উন্নয়ন সময়ের দাবি। কিন্তু টানেলের কাজ শেষ হলেও সেই সড়কটির ব্যাপারে এখনো কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে সওজের দক্ষিণ চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, ‘টানেল চালু হলে গাড়ির চাপ বেড়ে যাবে। এ জন্য প্রাথমিক চাপ সামাল দিতে মহাসড়কের শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে সাতকানিয়ার কেরানীহাট পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার অংশ ১৮ ফুট থেকে ৩৬ ফুটে উন্নীত করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এতে ১১০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। তবে এই কাজ পুরোপুরি শেষ হতে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত লাগবে।’

তিনি মনে করেন, ‘কক্সবাজারের মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর চালু হলে মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার বিকল্প নেই। বর্তমান সড়ক দিয়ে যানবাহনের চাপ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।’

গত ১২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে টানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সভার পর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মনজুর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব টানেল শুধুমাত্র চট্টগ্রামবাসীর জন্য গর্ব নয়, জাতির জন্যও অনেক গর্বের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় টানেল এখন প্রায় প্রস্তুত হয়েছে। আগামী ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী এটা উদ্বোধন করার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এটার প্রি-কমিশনিং থেকে শুরু করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা সবগুলো দেখা হয়েছে। আশা করছি ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধন করার পরদিন থেকে সাধারণ মানুষ যাতায়াত করতে পারবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘টানেল উদ্বোধনের পরও আমাদের কার্যক্রম চলবে। পুলিশের পক্ষ থেকে ফাঁড়ি, ডাম্পিং, স্টেশনের কথা বলা হয়েছে, সেটা করতে পারব, জায়গা রয়েছে। অপারেশনের যারা রয়েছেন, মেইটেনেন্স যারা করবেন তাদের নিজস্ব যানবাহন থাকবে। প্রথমদিকে অন্যদের সাপোর্ট নিয়ে সবার সমন্বয়ে কাজগুলো এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব।’

টানেল চালু হলে ট্রাফিক জট হতে পারে কি না— সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে সেতু সচিব বলেন, ‘ট্রাফিকের প্ল্যান আছে, পুলিশেরও নির্দিষ্ট প্ল্যান থাকতে পারে। সিডিএর পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাব আছে। তারাও কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। টানেলের যে আরও একটি বড় লক্ষ্য আছে সেটা হলো, কক্সবাজারে কিছু বড় প্রকল্প হচ্ছে। আগামী দুই চার বছরের মধ্যে সেই প্রকল্পে যাতায়াতের জন্য টানেলটি ব্যবহার করা হবে। সেক্ষেত্রে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পুলিশের আলাদা প্ল্যান আছে, পরিকল্পনাও আছে। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা সব কাজ করতে চাই।’

ওয়ান সিটি টু টাউনের পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওয়ান সিটি টু টাউনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পতেঙ্গার এক পাশে আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। আরও করা হচ্ছে। আনোয়ারা প্রান্তে পৌনে দুইবছর ধরে যা দেখছি, অনেক পরিবর্তন হয়েছে। চোখের সামনে সেই পরিবর্তন দেখা যায়।’

‘নগরীকে যদি আনোয়ারার ওই প্রান্তে শিফট করা যায় তাহলে এদিকে চাপ কমবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প কারখানা গড়ে উঠা- এগুলোই তো মূল লক্ষ্য। একটি দেশের উন্নয়নে জিডিপিতে পজেটিভ প্রভাব যেটা থাকে সেটা হচ্ছে, আমরা সময় বাঁচাতে পারছি কি না, শিল্প উন্নয়ন ঘটাতে পারছি কি না, ট্যুরিজমে ডেভলপ ঘটাতে পারছি কি না। সব কিছু মিলিয়ে আনোয়ারা প্রান্তে সেই উন্নয়নটা দেখা যাচ্ছে। সেটাই মূল বিষয়। ওয়ান সিটি টাউনের কনসেপ্টটা সেখান থেকেই এসেছে।’
তিন চাকার গাড়ি চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব মনজুর হোসেন বলেন, ‘কোন কোন যানবাহন টানেলে চলবে তা নির্ধারিত করা হয়েছে। টোলও নির্ধারণ করা হয়ে গেছে। টানেলের যে ডিজাইন করা হয়েছে ৮০ কিলোমিটার বেগে প্রতি ঘণ্টায় গাড়ি চলতে পারবে। টানেলের কনসেপ্টটা আমাদের কাছে নতুন। সেজন্য এটার কিছু চ্যালেঞ্জ আছে।’

‘ভেতরে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে সেজন্য রেসকিউ কিভাবে হবে? সেটা অন্য ব্রিজ বা সড়ক থেকে আলাদা। সেক্ষেত্রে আমাদের এই জিনিসটা নিশ্চিত করতে হচ্ছে টানেলও নিরাপদ থাকবে এবং যারা ব্যবহার করবে তারাও নিরাপদ থাকবে। সেই ধারণা থেকে এই মুহূর্তে দুই বা তিন চাকার গাড়ির জন্য এটা নিরাপদ হবে না বলে আমি মনে করি।’

দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য ট্যাক্সি ক্যাব চালুর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ট্যাক্সি ক্যাবটা যে কেউ চালু করতে পারেন। সেজন্য সেতু বিভাগ থেকে আলাদাভাবে প্রকল্প নেওয়ার দরকার নেই। জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিতে পারে। এতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। টানেলে গতকয়েক মাস ধরে ট্রায়াল হচ্ছে। ইলেকট্রিক মেকানিক্যাল কাজ হয়ে যাওয়ার পর প্রি কমিশনিং, সেইফটি এসবই ট্রায়ালের অংশ।’

এর আগে টানেলের উদ্বোধনীর প্রস্তুতিমূলক সভায় সেতু সচিব মনজুর হোসেন বলেন, ‘ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের টানেলের কাজ সমাপ্তি করার কথা থাকলেও তার আগেই কাজ শেষ করেছি। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এখানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। দিনশেষে আমরা সবাই কাজ করছি দেশের জন্য, জাতির জন্য। সবাই মিলে কাজ করলে কোনো সমস্যা হবে না।’

‘এখানে একটি মজার বিষয় হচ্ছে টানেলে ঢুকার আগে যেসব গাড়ি এফএম রেডিও চালু করবে তখন টানেল ব্যবহারের নীতিমালা অটোমেটিক চলতে থাকবে। অধিকাংশ রেডিও স্টেশনে এই নীতিমালা রয়েছে। টানেলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রেডিওতে এই নীতিমালাগুলো পড়ে শুনানো হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২৯ অক্টোবরের আগে টানেলে সাধারণ মানুষ কেউ যেতে পারবে না। ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধনের করার পরদিন ২৯ অক্টোবর সকাল ১০টার পর টানেল সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ইমার্জেন্সি গাড়ি ও প্রশাসনের অন-ডিউটিরত গাড়িকে টোলের আওতায় আনা হবে না। আর সবাইকে টোল দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীও টোল দেন। যেসব জায়গায় যেতে ওনাকে সেতু ব্যবহার করতে হয়েছে সব জায়গায় ওনাকে পুরো গাড়ির বহরের জন্য টোল দিতে হয়েছে।’

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘টানেল চালু হলে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। টানেলর কারণে মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিনিয়োগের বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আবার টানেল ব্যবহার করে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ সারা দেশের কারখানার পণ্য কক্সবাজারের মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরে আনা-নেওয়া করা যাবে দ্রুত সময়ে। টানেলের কারণে আনোয়ারা কেবল উপশহর নয়, দেশের নতুন বিজনেস হাব হতে যাচ্ছে।’