রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যানের পরিবারের সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক

প্রকাশিতঃ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১২:৫৯ অপরাহ্ন


একুশে প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম (রাজা), তার স্ত্রী উম্মে কুলসুম, ছেলে মোহাম্মদ সারোয়ার করিম ও মেয়ে সাজরিন করিম রাইসার সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রাজা পরিবারের সম্পদ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গত ২৩ জুলাই বোয়ালখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর চিঠি দিয়েছে দুদক। চিঠিতে রাজা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে দলিল রেজিস্ট্রির তথ্য চাওয়া হয়েছে।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদারের পাঠানো ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম ওয়াসার জন্য বোয়ালখালী উপজেলায় পূর্ব গোমদন্ডী মৌজার (জেএল নং:৮) অধিগ্রহণকৃত জমির দলিল গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে কয়েক মাসের মধ্যে অস্বাভাবিক মূল্যে জমি হস্তান্তর করে অপ্রদর্শিত আয় প্রদর্শনপূর্বক অবৈধভাবে লাভবান হওয়াসহ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তথ্য, রেকর্ডপত্র সরবরাহ করতে বোয়ালখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)-কে অনুরোধ করা হয় দুদকের চিঠিতে।

দুদক সূত্র জানায়, এলএ মামলা নং ০১/২০২১-২২ এর আওতায় বোয়ালখালীর পূর্ব গোমদন্ডী মৌজার কিছু জমি অধিগ্রহণ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। অধিগ্রহণ করা ওই জমির দলিল গ্রহীতারা কয়েক মাসের মধ্যে অস্বাভাবিক মূল্যে জমি হস্তান্তর করেন।

এভাবে জমির দাম বেশি দেখিয়ে রাজা পরিবারের সদস্যরা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ পায় দুদক। গত ৯ মার্চ দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে রাজা পরিবারের সম্পদের অনুসন্ধানের অনুমোদন দেওয়া হয়। এই প্রেক্ষিতে দুদক অনুসন্ধান শুরু করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকল্পে অধিগ্রহণের আগেই রাজা পরিবারের সদস্যদের নামে জমি হস্তান্তর হয়েছে। বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাজার এক ভাই চট্টগ্রাম ওয়াসায় চাকরি করেন। তার মাধ্যমে চট্টগ্রাম ওয়াসার অধিগ্রহণ সংক্রান্ত তথ্য ফাঁস হয়েছে কিনা, সেই প্রশ্ন এখন উঠছে।

জানতে চাইলে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদার বলেন, ‘অনুসন্ধান শুরু করেছি। এ বিষয়ে আর কিছু বলা যাবে না।’

২০২২-২৩ অর্থবছরে আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী, রেজাউল করিম রাজার নিট সম্পদের পরিমাণ ৭২ লাখ ৯৫ হাজার ৪৯৫ টাকা। আবার ২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী রেজাউল করিম বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে (এফডিআর) বিনিয়োগ করেছেন ২ কোটি ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা।

তার মানে ঋণ নিয়ে সঞ্চয়পত্র বা এফডিআরে বিনিয়োগ করেছেন রেজাউল করিম!

হলফনামায় রেজাউল করিম তথ্য দিয়েছেন, তার কাছে মাত্র ৩০ হাজার টাকার স্বর্ণ রয়েছে; তার স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের কাছে কোনো স্বর্ণ নেই!

হলফনামা অনুসারে রেজাউল করিম রাজার কাছে মাত্র ১০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে; তার স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের কাছে কোনো আসবাবপত্র নেই।

বোয়ালখালীর একজন সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘হলফনামায় উল্লেখ করা রেজাউল করিম রাজার সম্পদের এসব তথ্য অস্বাভাবিক। চট্টগ্রাম নগরের বাদুরতলার রমজু মিয়া সওদাগর লেইনে নিজের বাবার নামে গড়ে তোলা ‘রাজ্জাক ভিলা’ ভিলা নামের একটি ভবনে বসবাস করেন তিনি। বোয়ালখালী শ্রীপুরেও তার বাড়ি আছে। অথচ তিনি আসবাবপত্রের দাম দেখিয়েছেন মাত্র ১০ হাজার টাকা। এটা কীভাবে সম্ভব?’

রেজাউল করিম রাজার হঠাৎ উত্থান সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ভোট নয়, প্রয়াত মোছলেম উদ্দিনের এক ঘোষণায় উড়ে এসে দলটির উপজেলা সাধারণ সম্পাদক পদে জুড়ে বসেন রেজাউল করিম রাজা। এরপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান তিনি।

গত ১৭ মার্চ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন রেজাউল করিম রাজা। মোট ভোটার ২ লাখ ৬ হাজার ১৬৭ জনের বিপরীতে তিনি পেয়েছিলেন মাত্র ৩০ হাজার ৯৮৪ ভোট। শতকরা ভোটের হার মাত্র ১৫.০২ ভাগ।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম (রাজা) একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, এগুলো সব মিথ্যা। আমার জমি আমি হস্তান্তর করেছি। এতে কার কী? এগুলো মৌজা রেট অনুসারে সরকারকে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুদক তদন্ত করলে করুক। যদি আমার দোষ পায় তাহলে ব্যবস্থা নিবে। অসুবিধা তো নাই।’

এসময় প্রতিবেদন প্রকাশ না করতে এ প্রতিবেদককে অনুরোধ করে রেজাউল করিম রাজা বলেন, ‘ভাই, আপনি এগুলো নিয়ে নিউজ করিয়েন না৷ এটা অনুরোধ থাকলো।’