চট্টগ্রাম: কম সময়ে অধিক টাকা কামানোর নেশায় অন্ধ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য জড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা ব্যবসায়। লাভের এই ব্যবসায় জড়িয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাহিনীগুলোর কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছে, হারিয়েছে চাকরিও।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সেক্টরের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা প্রায়ই অধিনস্থদের হুঁশিয়ার করে থাকেন কঠোর শাস্তির ভয় দেখিয়ে। ইয়াবাসহ সকল প্রকার মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, ইয়াবার সর্বনাশা গ্রাস থেকে এমনিতেই মুক্তি মিলছে না কিছুতেই। একের পর এক অভিযানে ধরা পড়ছে ইয়াবার চালান।
গত ২০ আগস্ট নগরের সদরঘাট থানা এলাকা থেকে ইয়াবাসহ এক আনসার সদস্য এবং এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। গ্রেফতার আনসার সদস্য রফিকুল ইসলাম (৪৭) খুলনার কয়রা থানার মঠবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পে কর্মরত। অন্যজন মিয়ানমারের নাগরিক নূর আহম্মেদ (৫০) কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা এবং তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী।
গত ১৫ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে নগরীর বন্দর থানাধীন গোসাইলডাঙ্গা এলাকা থেকে কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের সদস্য লাট মিয়া ওরফে ইমন ও তার সহযোগী আক্তার হোসেনকে আটক করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে তিন হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দুজনকে আসামি করে বন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে পুলিশ। লাট মিয়াকে কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সর্বশেষ গত ২৬ আগস্ট দুপুরে চট্টগ্রামে ইয়াবা ট্যাবলেটসহ এক পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। আফাজউল্লাহ নামের ওই পুলিশ কর্মকর্তা নগরীর হালিশহর থানায় উপপরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এঘটনার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. আকরামুল হোসেন বলেন, ইয়াবাসহ গ্রেফতারের ঘটনায় হালিশহর থানার এসআই আফাজকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি আরও তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে।
ইতোপূর্বেও কখনো পুলিশ, কখনো কোস্টগার্ড, কখনো আবার আনসার সদস্য ইয়াবা সহ ধরা পড়েছে অন্য কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। শুধু তাই নয়, গোয়েন্দা পুলিশ এক ইয়াবা ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের পর কোস্টগার্ডের এক কর্মকর্তার নির্দেশে তাকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। আর আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর লোগো গাড়ির সামনে লাগিয়ে মাদক পাচারের ঘটনাতো ঘটছেই।
সূত্র জানায়, তিন কৌশলে কতিপয় অসাধু পুলিশ ও মাদক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ইয়াবা ব্যবসা করে থাকে। এগুলো হচ্ছে– ইয়াবার মূল পয়েন্ট টেকনাফ থেকে সরাসরি এনে বিক্রি করা, ইয়াবা নিজ দায়িত্বে রেখে নিরাপদ স্থানে টাকার বিনিময়ে পৌঁছে দেয়া এবং ইয়াবাসহ আসামি গ্রেফতারের পর ইয়াবা রেখে আসামি ছেড়ে দেয়া কিংবা আসামির কাছে পাওয়া ইয়াবা কম দেখিয়ে বাকি ইয়াবা বাইরে বিক্রি করা।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, বিপুল সংখ্যক পুলিশ ফোর্সের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। যারা এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তাদের বিষয়টি নজরে আসার সাথে সাথেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।