এস এম হানিফ : ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর আমি ভারতের তামিলনাড়ুর ভেলোর জেলার সিএমসি হাসপাতালে পৌঁছাই। ২৪ ডিসেম্বর ডাক্তারের সিরিয়াল থাকায় খুব ব্যস্ত সময় পার করছি। এমন সময় ফেসবুকে ২১ ডিসেম্বরের একটি পোস্ট দেখলাম, ‘প্রাণ বাঁচানোর শহরে ভালো কিছুর অপেক্ষায় আছি। আপনাদের ভালোবাসাটাই জিতুক…’। লোকেশন দেওয়া হয়েছে ভেলোর, চেন্নাই।
সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগের চেষ্টা করলাম, কিন্তু সাড়া পেলাম না। না পাওয়ারই কথা। কারণ তাঁর সঙ্গে আমার ফেসবুকে বন্ধুত্ব নেই। তাকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠানো হলেও গ্রহণ হয়নি। ২০২২ সালের ২৪ জুন তাঁর উত্তর পেলাম ‘দুঃখিত ভাই। অনেক দেরিতে চোখে পড়ল।’
এতক্ষণ যাঁর কথা বললাম তিনি আজাদ তালুকদার। চট্টগ্রামের সাংবাদিকতায় আজাদ তালুকদার বললে আর কোনো বিশেষণের দরকার হয় না। কোন পত্রিকায় লিখেন তাও বলতে হয় না। তেমন জনপ্রিয় ও মেধাবী সাংবাদিক আজাদ তালুকদার মরণব্যাধী ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে ২ আগস্ট পাড়ি জমালেন অনন্তকালের পথে। (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। আল্লাহ আজাদ ভাইয়ের জন্য জান্নাত নসিব করুন।
আমিও ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে ভারতের এই রাজ্য থেকে ওই রাজ্য, এই হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে ঘুরেছি। আপনাদের দোয়ায় চিকিৎসা নিয়ে আমি সুস্থ আছি, আলহামদুলিল্লাহ। আজাদ ভাইও চিকিৎসা নিয়ে আমার মতো দৌঁড়ের ওপর ছিলেন। তিনিও ২০২১ সালের সেই পোস্টের পর কেমো থেরাপি নিয়ে দিব্যি সুস্থ হয়ে নানা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন, সাংবাদিকতা করেছেন। ভেলোরে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে ২০২৩ সালে তিনি গেলেন মুম্বাই। তবে মুম্বাইয়ের চিকিৎসকেরা নাকি জানিয়েছিলেন, তিনি যেতে অনেক দেরি করে ফেলেছিলেন।
এর কয়েকমাস পরেই খুব চেনা আজাদ তালুকদার শীর্ণকায় শরীর নিয়ে খুব অচেনায় পরিণত হলেন। মানুষের জীবন এমনই। কয়েকদিন ধরে তাকে নিয়ে লিখব, সবার কাছে দোয়া চাইব ভাবছি। কিন্তু সময় হয়ে উঠেনি। আমার সময় না হলেও আজাদ ভাইয়ের ঠিকই সময় হয়ে উঠেছে। তিনি আর কারও জন্য অপেক্ষা করেননি, সময়ও অপেক্ষা করে থাকেনি। মহান রবের ডাকে খুব দ্রুত তাঁর কাছেই চলে গেছেন তিনি।
কথিত আছে আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের রোগ-শোক দিয়ে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ তুমি সারাজীবন ন্যায্যতার কথা বলা আজাদ ভাইকে তোমার কাছে ভালো রেখো। তাঁর পরিবার-পরিজনকে শোক কাটিয়ে উঠার শক্তি দাও। আমিন।
লেখক : দৈনিক প্রথম আলোর চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি।