চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের মেয়র ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ফের সমালোচনায় মুখর হলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। শুক্রবার হজের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার আগে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, নাছির সাহেবকে মনোনয়ন দিয়েছেন আমাদের নেত্রী। আমরা তাকে (মেয়র) বানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু তারই বদৌলতে সে যেসব কথাবার্তা বলছে, মনে হয় তিনি (মেয়র) রাষ্ট্রপতির চেয়েও অনেক বড় হয়ে গেছেন। কথা কথা কথা শুধু। মাইক পেলে কথা বলবে। গাড়িতে বসে মোবাইলে কথা বলবে। সর্বক্ষণ উনি কাজে ব্যস্ত থাকেন। কি কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, রাস্তায় এক হাঁটু পানি, এক বুক পানি। উন্নয়ন তো নাই। কিছু রিলিফ তো আনা যায়। এটা সংগ্রহ করেন। কিন্তু এটাও পারছেন না। আমিও তো মেয়র ছিলাম। চাইলেই তো আপনি আনতে পারেন। করছেন না কেন? টাকাপয়সা তো অনেক আয় করছেন। যখন মেয়র ছিলাম না, নেত্রী যখন ক্ষমতায় ছিলেন না, তখন চট্টগ্রামে অসংখ্য সমস্যা ছিল। খাওয়া-দাওয়া, জলোচ্ছ্বাসের…। চাল-ডাল সংগ্রহ করে মানুষের কাছে গিয়েছিলাম। গায়ে সে শক্তি নাই। তবু আমার স্ত্রী আর কিছু লোকজনকে দিয়ে কিছু এলাকায় ত্রাণ-পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ইচ্ছে করলে তো পারেন, করেন না কেন? এরা তো প্রচুর আয় করছেন- এমপিরা।
তিনি আরও বলেন, আমি বেশ কিছুদিন ধরে কথাবার্তা বন্ধ করে রেখেছি। কথা বললেই নারাজ, আমি নারাজ না, যারা শুনবেন তারা নারাজ। চট্টগ্রামে বিশেষ করে অথর্ব, অযোগ্য, অদক্ষ, অপরিপক্ক ব্যক্তিরাই নেতৃত্বে আছেন। তারাই নারাজ হন।
তিনি বলেন, প্রকৃত কথা বলতে অনেকে অনীহা প্রকাশ করছি, বলছি না। সাংবাদিক বন্ধুরা আপনারা বিভিন্ন কারণে পারেন না। আপনাদের মামলা দেওয়া হয় ৫৭ ধারায়। বিজ্ঞাপন আছে। বিভিন্ন কারণে তারা চেঞ্জ হয়ে গেছে। মানিক মিয়া (তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া) তো না হলে পরে দেশ স্বাধীন হত না। বঙ্গবন্ধুর আহ্বান মানিক মিয়ার মাধ্যমে সর্বস্তরে পৌঁছে যেত। তাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানে যাওয়ার, কিন্তু যাননি।
এর আগে গত ১০ এপ্রিল লালদীঘির মাঠে সমাবেশে মেয়র আ জ ম নাছিরকে ব্যাপক সমালোচনা করে তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ১৭ এপ্রিল আবার নাটকীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চুপ হয়ে যান মহিউদ্দিন; সেদিন শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে হাত তুলে দুজন ঐক্যবদ্ধ রাজনীতির অঙ্গীকার করেন। ওইদিন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছিলেন, ‘আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হতে পারে, কিন্তু তা কোনোভাবেই যুদ্ধ নয়। আমি কিছু ‘গরম’ কথা বলেছি। মাঝে মাঝে ‘গরম’ কথা বলতে হয়।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারদলীয় গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে নেমেছেন মূলত আর্থিক কারণেই। এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বহু দিনের আর্থিক উৎসে একের পর এক আঘাত হেনে আসছেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। পাল্টা আঘাত হিসেবে নাছিরের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে বাধ্য হয়েছেন মহিউদ্দিন। বিলবোর্ড ব্যবসার প্রায় পুরোটাই মহিউদ্দিন অনুসারীদের দখলে ছিল। কিন্তু বিলবোর্ড ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন মহিউদ্দিনের অনুসারী বিলবোর্ড ব্যবসায়ী দলীয় বিভিন্ন স্তরের নেতারা।
আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং পুল নির্মাণের ফলে বিজয় মেলা বন্ধ হলে এ খাত থেকে প্রতি বছর কোটি টাকা আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে মহিউদ্দিন চৌধুরীর। এদিকে চাক্তাইয়ে নির্মিত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নিয়েও বিরোধ আছে দুই নেতার। এছাড়া এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীনের মধ্যে দ্বন্ধের মধ্যে আরও কিছু বিষয় রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের আর্থিক কর্মকান্ডে নিয়ন্ত্রণলাভ, আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে প্রভাব বিস্তার করা, শ্রমিক রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা নিয়ে দ্বন্ধ, পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠনে অনুসারীদের অন্তর্ভুক্তি, বিলবোর্ড ব্যবসা বন্ধ হওয়া ইত্যাদি।