চট্টগ্রাম: জনগুরুত্ব বিবেচনায় চট্টগ্রাম নগরীর বিমানবন্দর সড়ক সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। সোমবার সকালে এ উপলক্ষে নগরভবন সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে আলোচনা ও পরিমাপ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জানানো হয়, নগরীর সিমেন্ট ক্রসিং হতে বিমান বন্দর সড়কের বাটারফ্লাই এলাকা পর্যন্ত রিভার সাইড অংশ চার লেন করার পরিকল্পনা নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। বর্তমানে সড়কটির কিছু অংশ দুই লেন ও কিছু অংশ এক লেনে আছে। সড়কটি দৈর্ঘ্যে ৮ দশমিক ৩৯ কিমি ও প্রস্থে (প্রস্তাবিত) ৬০ ফুট (চার লেন বিশিষ্ট) এর প্রস্তাবিত অংশের অধিকাংশ জায়গা চট্টগ্রাম বন্দরের। সম্প্রাসারিত এই চার লেন সড়কে ফুটপাত, মিডিয়ান স্ট্রিপ থাকবে। উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ডিজিটাল সার্ভে করা হয়েছে।
সভার সভাপতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, পাহাড়, নদী, সমুদ্রে ঘেরা চট্টগ্রাম নগরী নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যে অপরূপ। নান্দনিক এই শহরের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শহরে আসা পর্যন্ত সড়ক পথটি অনেকাংশ আজ ভাঙ্গা ও সংর্কীণ। ফলে এই পথে দেশের আমদানী-রপ্তানী পণ্যের পরিবহন ও যাতায়াতকারী দেশি-বিদেশি ভিআইপি ডেলিগেটদের দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। যা চট্টগ্রাম নগরীর অধিবাসী হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক।
তিনি বলেন, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে বিমান বন্দর পর্যন্ত রোডে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। সে সমস্ত স্থাপনার অধিকাংশ জায়গা চট্টগ্রাম বন্দরের। যা বন্দর কর্তৃপক্ষ ইজারা দিয়েছে। বন্দর নগরী চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও এই সড়কের দু’পাশে প্রতিষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের গুরুত্ব বিবেচনা করে সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা আজ সময়ের দাবি।
তিনি আরও বলেন, সড়কটিকে এখনই চার লেনে করা না গেলে, আর করা যাবে না। মেয়র চট্টগ্রাম নগরীর উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বার্থে সড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় আগত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে এ ব্যাপারে মতামত চাওয়া হলে চট্টগ্রাম বন্দর প্রধান প্রকৌশলী মাহমুদুল হোসেন খান বলেন, সিমেন্ট ক্রসিং হতে বিমান বন্দর পর্যন্ত সড়কে স্থাপিত শিল্প কারখানার জায়গা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে লিজ নেয়া। তিনি সিটি মেয়রের এ সড়ক সম্প্রসারণের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এই সড়কের পাশে স্থাপিত শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহকে পুনঃস্থান্তরের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে বলে উল্লেখ করেন।
চট্টগ্রাম ড্রাইডক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন এম এ লতিফ বলেন, তারা তাদের বর্তমান ডকইয়ার্ডের পাশাপাশি আরো একটি ডকইয়ার্ড স্থাপন করতে যাচ্ছে। যার জন্য বর্তমান সরকার প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। ইতোমধ্যে এই ডকইয়ার্ডের স্থাপনের জন্য একটি মাষ্টার প্ল্যান করা হয়েছে। তিনি সিটি মেয়রের সিমেন্ট ক্রসিং হতে বিমান বন্দর সড়ককে চার লেনে করার উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং এই ব্যাপারে তাদের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে বলে কথা দেন।
রুবি সিমেন্ট এর কোম্পানী সচিব মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রেল লাইনকে ফ্লাস করে সড়কটিকে চার লেনে সম্প্রাসারিত গেলে ৮ থেকে ১০ ফুট জায়গা পাওয়া যাবে বলে মত দেন। তিনি রেল লাইনের জন্য ১৬ ফুট জায়গা রিজার্ভ রাখতে হয় বলে সভায় উল্লেখ করেন।
রেলওয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় প্রকৌশলী লিয়াকত শরীফ খান বলেন, সড়কের সাথে রেল লাইন ফ্লাস করা ব্যয়বহুল বলে উল্লেখ করেন। তিনি রেল লাইনের জন্য ১৬ ফুট জায়গা রেখে সড়কটি সম্প্রাসারণ করা যায় বলে উল্লেখ করেন।
পদ্মা অয়েল কোম্পানী লি. এর (জিএম) মার্কেটিং প্রকৌশলী মো. আবু সালেহ ইকবাল বলেন, এ সড়কটিকে চার লেনে উন্নীত করার ক্ষেত্রে তাদের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে বলে উল্লেখ করেন।
যমুনা অয়েল কোম্পানী লি. এর ডিজিএম (অপারেশন) কাজী মনজুর রহমান বলেন, যত দিন যাচ্ছে তত অয়েল ট্রান্সপোর্টেশন বাড়ছে। তিনি বলেন, সামগ্রিক বিষয়টি এ সড়কে স্থাপিত তেল কোম্পানীর উপর নির্ভর করছে না। সড়কটি সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।
স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) বেলায়েত হোসেন বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে লিজ নেয়া। সিমেন্ট ক্রসিং হতে বিমান বন্দর সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হলে আমাদের ট্যাংক এই প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০ শতাংশ ক্ষতি সম্মুখে পরবে। তিনি সড়ক সম্প্রসারণে তাদের ওয়েল ট্যাংক এবং ভবন যাতে নিরাপদে রেখে রিভার সাইড থেকে জায়গা নেয়া যায় কিনা তা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে বিবেচনায় রাখতে বলেন।
সভায় বন্দর, সাইলো, এয়ারপোর্ট, বিমান বাহিনী, নৌ-বাহিনী, চট্টগ্রাম ড্রাইডক, রেলওয়ে, হাইড্রেলবার্গ সিমেন্ট, মেরিন ওয়ার্কশপ, টিএসপি কমপ্লেক্স, ইলিয়াছ ব্রাদার্স, বিওটিটি ওয়েল রিফাইনারী পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সাউথইষ্ট ট্যাংক টার্মিনাল. স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক ওয়েল কোম্পানী, এমজেএল বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম বোর্ড ক্লাব, আবুল খায়ের গ্রুপ ও বাটারফ্লাই পার্কসহ ২১টি প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও প্রতিনিধি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।