দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে আত্মহত্যা করবো : সিডিএ চেয়ারম্যান

চট্টগ্রাম : ২০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের মধ্যে ২০ টাকার দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারলে আত্মহত্যা করবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।

রোববার বোয়ালখালী উপজেলার একটি কমিউনিটি সেন্টারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারস্’৭১ ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

আবদুচ ছালাম বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগরের উন্নয়নে ২০হাজার কোটি টাকার কাজ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এর থেকে ২০ টাকার দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারলে আত্মহত্যা করবো।’

মহানগরের প্রায় কাজ শেষ পর্যায়ে উলে¬খ করে সিডিএ চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘উন্নয়নের মহাসড়কে চট্টগ্রাম। সম্প্রতি আরো ৬হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজস্ব কোনো আলো নেই সিডিএর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোয় আলোকিত। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়নে তিনি চট্টগ্রামসহ দেশের উন্নয়নের কাজ করছেন।’

‘বাঙালিদের বিরুদ্ধে ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বারবার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে আর বারবার তা নস্যাৎ করে দিয়েছেন মহান নেতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালিরা। পরাজিতরা থেমে ছিলো না। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা ও তার বংশধরদের হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালিদের ২১টি বছর অন্ধকারে রেখেছিল পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসররা।’

আল্লাহপাক তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেননি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে গিয়েছিলেন নির্মম এ হত্যাযজ্ঞ থেকে। এরপর ২১ বছরে টিভি, রেডি ও কোথাও বঙ্গবন্ধুর কথা বলা হয়নি। আওয়ামী লীগকে চিরতরে নি:শেষ করে দিতে বারবার নির্মম হামলা হয়েছিল, নির্যাতন চলেছে। মুছে দিতে চেয়েছিল নাম নিশানা, পারেনি। বাঙালি তা মেনে নেয়নি।’

তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তাদের সম্মানে কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। প্রধানমন্ত্রী ব্যাপকভাবে সহায়তা দিচ্ছেন। কেননা বঙ্গবন্ধুর ডাকে নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে গিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন। আপনাদের ঋণ এ জাতি কখনোই শোধ করতে পারবে না।’

দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘জুলুম নির্যাতন অত্যাচার সহ্য করে নৌকাকে যারা হৃদয়ে ধরে রেখেছেন সেই নৌকা প্রতীকে ভর করে যারা এমপি মন্ত্রী বনেছেন, তারপর সেই কর্মীদের ভুলে গেছেন, তারা মোনাফেক। দলের উপর, জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর আস্থা রাখুন। নয়ত আবারো নির্যাতন জুলুমের শিকার হবেন।’

বোয়ালখালীবাসীর উদ্দেশ্যে ছালাম বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরে ২০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হলে মাত্র ৮শ থেকে একহাজার কোটি টাকায় কালুরঘাট সেতু হয়নি কেন? এ বড়ই লজ্জার। আমার নির্বাচনী এলাকা মধ্যে রয়েছে এটি। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার গঠনের মধ্যে দিয়ে দুই দুইবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। জননেত্রী আমাকে সিডিএর চেয়ারম্যান করেছেন। আমি নেত্রীর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলাম। তাকে বলেছিলাম সেতুর ব্যাপারে। এমপি সাহেব বলছেন, সিডিএর দরকার নেই, তিনি করবেন। তাই এগোয়নি সেতুর ব্যাপারে, যদি আগামীতে সুযোগ পাই, তবে কথা দিচ্ছি সেতু হবে।

তিনি দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিনকে মামা সম্বোধন করে বলেন, ‘কর্ণফুলীর ওপারে আমি আর এপারে মামা রয়েছেন। মামা যদি কথা দেন, আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিলে তিনি আমার সাথে কাজ করবেন আর মামাকে দিলে অতন্দ্র প্রহরীর মতো পাশে থাকবো এ আসনের উন্নয়নের জন্য।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি চারণ করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশ থেকে এনে দ্রুত ফাঁসি কার্যকর করা হবে। এছাড়া দলীয় মনোনয়ন যিনিই পান তাকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারস’ ৭১ ফোরাম এর আহ্বায়ক যুদ্ধকালীন বিএলএফ কমাণ্ডার রাজেন্দ্র প্রসাদ চৌধুরী এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। এসময় মুক্তিযোদ্ধা আ.হ.ম. নাছির উদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমাণ্ডার সাহাব উদ্দিন আহমদ, জেল কমিউনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক কানাই লাল দাশ, শিক্ষক নেতা কমরেড সুনীল চক্রবর্তী, শিক্ষক আবুল মোহছেন, মুক্তিযোদ্ধা আবুল বশর, আবদুল লফিত, উদয়ন নাগ, এসএম ইসহাক চৌধুরী, অমল নাথ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বোরহান উদ্দিন এমরান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আলম জাহাঙ্গীর, পৌর প্যানেল মেয়র এসএম মিজানুর রহমান, কাউন্সিলর শামীম আরা বেগম, ইউপি চেয়ারম্যান মোকারম, এসএম জসিম ও আওয়ামীলীগ নেতা আবদুর রব।