পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে ফাঁসাচ্ছে পুলিশ!

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের পুলিশের বিরুদ্ধে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে বলে তথ্য দিয়েছেন জেলা আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ। শনিবার বিকেলে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্সে তিনি এ তথ্য জানান।

আইনজীবি নেতা আবু হানিফ বলেন, সীতাকুন্ডে রাতের বেলায় যে সব পুলিশ সদস্য দায়িত্বপালন করেন, তারা বিভিন্ন লোককে ধরে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাচ্ছে। এ বিষয়টা আমাদের কানে এসেছে। ধরার পর পুলিশ ভুক্তভোগীর পকেটে হাত দিয়ে বলে, এই তো ইয়াবা। এরপর মোবাইল হাতে দিয়ে বলে, ফোন কর। টাকার জন্য। না পেলে মামলায় দিচ্ছে।

তিনি বলেন, এ বিষয়টা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। কিন্তু ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে বর্ণনা শুনলে সত্য মনে হয়। এমনও হতে পারে, এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। হয়তো উর্ধ্বতন অফিসাররা জানেন না।

আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ বলেন, নগরের জামালখানে এক ভদ্রলোককে পুলিশ আটকিয়ে বলে, তল্লাশি করবো। ওই ভদ্রলোক বললেন, আমাকে তল্লাশি করার আগে আমি আপনাকে তল্লাশি করতে চাই। আশপাশের মানুষজন থাকবে। এরপর আপনি আমাকে তল্লাশি করতে পারবেন। এটা বলার পর ওই পুলিশ সদস্য নাকি বলেছিল, চলে যান। এই যে ঘটনাগুলো, মানুষের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। এসবের শেষ হওয়া দরকার।

এ প্রসঙ্গে সভায় চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরেআলম মিনা বলেন, পত্রিকার সংবাদের প্রেক্ষিতে, অভিযোগকারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে, আদালতের আদেশে কিংবা গোয়েন্দা সূত্রে আমরা তথ্য পাই। এর ভিত্তিতে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ পেলে অনেক পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রমাণ পাওয়ায় চার-পাঁচটা লোককে চাকরি থেকে একেবারে বরখাস্ত করেছি।’

পুলিশ সুপার বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে অনেক মামলায় পুলিশ পরিচয় উল্লেখ করা হয় না, পুলিশের ইমেজের দিক বিবেচনা করে। এ কারণে শাস্তির বিষয়টি সাংবাদিকদের নজরে হয়তো পড়ছে না। তাই এ ধরনের খবর পত্রপত্রিকায় কম আসে।

নুরেআলম মিনা বলেন, পুলিশের করা অন্যায়ের কোন খবর দয়া করে আমার কাছে পৌছানো হলে আমি ব্যবস্থা নেব- এতটুকু নিশ্চয়তা আমি দিতে পারবো। প্রতিটি অভিযোগ সততার সাথে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শনিবার চট্টগ্রামের বিচারিক হাকিমগণ তাদের বক্তব্যে জানান, সম্প্রতি সীতাকুন্ড থানার একটি মামলায় দন্ড বিধির ৩২৬ ধারায় গুরুতর জখমের অভিযোগ এনে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। কিন্তু কোন মেডিকেল সার্টিফিকেট অভিযোগপত্রের সাথে দাখিল করা হয়নি। অপর একটি মামলায় আসামীগণ থেকে ৩টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে দাবি করে পুলিশ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছেন। অথচ ওই মামলায় জব্দ তালিকাসহ অস্ত্র জমা দেয়নি পুলিশ।

সন্দ্বীপ থানার একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে সাক্ষী হিসেবে যে ডাক্তারের নাম ও ঠিকানা তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন। উক্ত ডাক্তার সাক্ষী আদালতে সাক্ষী দিয়ে বলেছেন তিনি কোন দিনও সন্দ্বীপে দায়িত্ব পালন করেননি। ৫৪ ধারায় গ্রেফতারের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশ যথাযথভাবে মানছে না পুলিশ।

সভায় রক্তাক্ত কিছু ছবি দেখিয়ে সাতকানিয়া থানার ওসি রফিকুল হোসেন বলেন, একজন ভিকটিমকে আসামিরা পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। কিন্তু সার্টিফিকেটে সাধারণ জখম উল্লেখ করেছেন সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডাক্তার। সময় মত ডাক্তারী সার্টিফিকেট না পাওয়ায় তদন্ত ব্যাহত হয়।

চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিম মুন্সী মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পরিচালক র‌্যাব-৭-এর প্রতিনিধি, পুলিশ সুপার রেলওয়ে-এর প্রতিনিধি, পরিচালক, চমেক হাসপাতাল-এর প্রতিনিধি, অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম, চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারবৃন্দ, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমবৃন্দ, বিচারিক হাকিমসহ অন্যান্য বিচারকবৃন্দ ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, পাবলিক প্রসিকিউটর ও সকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবৃন্দ।

এবারের পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি সভাটি পর্যবেক্ষণ করে জার্মান সরকারের সহযোগিতা সংস্থা জিআইজেড- এর প্রতিনিধিগণ।