মহিউদ্দিনের পতাকা উড়ানোর স্বপ্ন…

mohiuddin20150308212551 চট্টগ্রাম : এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পতাকা উড়ানোর স্বপ্ন এবার হয়তো পূরণ হচ্ছে। আসন্ন মন্ত্রীসভার রদবদলে যুক্ত হওয়ার মধ্যদিয়ে প্রবীণ এই নেতার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে বলে ইতিমধ্যে খবর বেরিয়েছে নানা মহলে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর হাতে নতুন মন্ত্রীদের যে খসড়া তালিকা, তাতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর নাম অগ্রভাগে। এছাড়া খসড়া তালিকায় আছেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।

এদিকে, মহিউদ্দিন চৌধুরী মন্ত্রী হওয়ার খবরে প্রাণচঞ্চল্য ফিরে এসেছে চট্টগ্রামে। দলমত নির্বিশেষে সবারই এক কথা-‘জীবনের শেষ সময়ে মানুষটার আরেকবার মূল্যায়ন হওয়া উচিত। পূরণ হওয়া উচিত সংসদে যাবার স্বপ্নটি। কারণ, চট্টগ্রামের প্রতি সত্যিকারের দরদ আছে মানুষটার।’

ছাত্র-আন্দোলন, ‘৬৬ এর ছয়দফা, ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, শ্রমিক রাজনীতি ও নগর-অভিভাবকের পথ ধরে মহিউদ্দিন চৌধুরী শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশে-বিদেশে এক অনন্য নাম। ছাত্র রাজনীতির শুরু থেকে স্বপ্ন ছিল সংসদে যাবেন, মন্ত্রী হবেন, চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্ব করবেন। কিন্তু কখনোই সেই স্বপ্ন ধরা দেয়নি।

রাউজান থেকে ১৯৮৬ সালে প্রথম আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। এরশাদ শাসন-প্রশাসনের প্রভাবিত, প্রহসনের সেই নির্বাচনে জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও জাতীয়পার্টির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কাছে পরাজয় বরণ করতে হয় তাকে।

এরপর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচন। চট্টগ্রাম কোতোয়ালী আসন থেকে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার টিকেট পান মহিউদ্দিন চৌধুরী। চারপাশে মহিউদ্দিনরব, আওয়ামী লীগের জয়ধ্বনি। চট্টগ্রামের মানুষ ধরেই নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাচ্ছে, আর এমপি হয়ে মন্ত্রী হচ্ছেন ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌’চট্টলবন্ধু’ মহিউদ্দিন। কিন্তু ক্ষমতায় যেতে পারেনি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ। আর বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমানের কাছে মাত্র এক হাজার ৩৯ ভোটে হেরে স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে ছিটকে পড়েন মহিউদ্দিন।

মহিউদ্দিন আশায় বুক বাধেন নতুন করে। প্রস্তুতি নেন ‘৯৬ এর নির্বাচনের জন্য। কিন্তু তার আগেই ‘৯৪ সালে তার সামনে হাজির হয় চট্টগ্রামের প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ক্ষমতাসীন বিএনপি’র সঙ্গে মহিউদ্দিনকে নির্বাচনযুদ্ধে নামানোর সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের। তখন তিনি দলের নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি প্রয়াত এম এ মান্নান (‘৯৬ এ গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী)।

দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচনযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে রানিং মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীনকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন মহিউদ্দিন। এরপর ২০০০ এ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০০৫ এ আবারো বিএনপির বিমান প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে হারিয়ে ভূমিধস বিজয় অর্জন করেন এই নেতা।

এরপরও কোথায় যেন অতৃপ্তি, অপূর্ণতা। হ্যাঁ, সেই অপূর্ণতা মন্ত্রী-এমপি না হওয়া। ঘরে-বাইরে, সহকর্মীদের সঙ্গে একান্ত আড্ডায়-আলোচনায় সেই কথাটি অকপটে বলে ফেলতেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। বলতেন, গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়ানোর স্বপ্নঘুড়ির কথা। কীভাবে মন্ত্রণালয় চালাতে হয় সেইসব কথাও গল্পচ্ছলে শেয়ার করতেন শুভার্থী মহলে।

সর্বশেষ সিটি করপোরশেন নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত হন তিনি। তবু এক মুহূর্ত্বের জন্য দলের হাল ছাড়েন নি। বরং দলীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে আরও বেশি সরব, স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন আপাদমস্তক তিনি মাঠের মানুষ, রাজনীতির মানুষ। মহিউদ্দিনের কথা, রাজনীতি আমার ইবাদত, জনগণ আমার পূজা, মাঠ আমার ঠিকানা। সেই মাঠেই যেন আমার মরণ হয়।

আসন্ন মন্ত্রীসভা সম্প্রসারণে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি লোকমুখে শুনলেও নিশ্চিত নন মহিউদ্দিন চৌধুরী। আপনার স্বপ্ন তো বোধহয় এবার পূরণ হতে যাচ্ছে- এমন প্রশ্নে মহিউদ্দিন চৌধুরীর জবাব- আমি কিছু জানি না। নেত্রীই সব জানেন। তিনি কোথাও নিয়ে বসিয়ে দিলে সেই দায়িত্ব পবিত্রতার সঙ্গে পালনের চেষ্টা করবো।