মোর্শেদ নয়ন : চট্টগ্রামের নবগঠিত কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি বহুমুখী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ; নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বিএনপি পায়তারা চালাচ্ছে বলেও দাবি ক্ষমতাসীনদের।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টায় কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক চৌধুরীর বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবী জানানো হয়েছে; এসময় দলটির মনোনীত চেয়ারম্যন, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন।
চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানান, কর্ণফুলীতে কর্মী শূন্য ও সাংগঠনিকভাবে খুবই দূর্বল বিএনপি। গত ইউপি নির্বাচনে উপজেলার ৫ ইউনিয়নে প্রার্থী দেওয়ার মত লোক খুঁজে পায়নি দলটি।
তিনি বলেন, নৌকার গণজোয়ার দেখে কর্মীশূন্য বিএনপি নিশ্চিত পরাজয় জেনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পাঁয়তারা করছে। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে তারা। তাই কখনো নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে, কখনো পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে, কখনো আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিএনপি মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।
গণমাধ্যমকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিএনপি জনগণকে বিভ্রান্ত করছে বলেও দাবি করেন ফারুক চৌধুরী।
আনোয়ারার ১১জন ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্র দখল করবে বিএনপির এই দাবির প্রেক্ষিতে ফারুক চৌধুরী বলেন, আনোয়ায়ার একটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোরশেদুর রহমান খোকা যিনি আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি। প্রশ্ন হলো ঐ চেয়ারম্যানও কি আওয়ামী লীগের পক্ষে কেন্দ্র দখল করবে! এতে বুঝা যায় বিএনপি মিথ্যাচার করছে।
জুলধার ঘটনা প্রসঙ্গে ফারুক চৌধুরী বলেন, তখন আমরা শিককলবাহায় নির্বাচনী প্রচারণা ছিলাম। জুলধায় ছিল আওয়ামী লীগের শোক সভা। এর জন্য পুলিশকে অবহিত করা হয়। কিন্তু বিএনপি সমর্থকরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। পুলিশের হস্তক্ষেপে কোন সহিংসতা হয়নি। কিন্তু বিএনপি পুলিশ প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং নৌকার প্রার্থীদের নিয়ে মিথ্যাচার করছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, কর্ণফুলীসহ চট্টগ্রামে বর্তমানে কোন বন্যা না হলেও বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন সাময়িক স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। যদিও নির্বাচন কমিশন আগামী ২০ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য সারা দেশের ২৮টি নির্বাচন বন্যার কারণে স্থগিত করে। বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনকে বিভ্রান্ত করার কারণে কর্ণফুলীকেও এ তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়। এতে পুরোদমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে ৪ দিন আগে এ নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়ায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে চরম হতাশা নেমে এসেছে।
আওয়ামী লীগের এই চেয়ারম্যান প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন স্থগিতের সংবাদ পেয়ে বিএনপির প্রার্থীরা গত ১৬ আগস্ট আনন্দ মিছিল বের করেছে। কর্ণফুলী উপজেলা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উপহার। এই এলাকায় উন্নয়নের স্বার্থে জনগন নৌকার পক্ষে অবস্থান নেয়ায় বিএনপির প্রার্থীরা যে কোন ভাবে এ নির্বাচনকে ঠেকিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জনগনের বহু প্রত্যাশিত কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাচন দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর দেশের অন্যান্য কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনের সাথে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাচন অর্ন্তভুক্তি করার জন্য প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
এছাড়া ১০ সেপ্টেম্বর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন রাখার দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ; একই দাবিতে শীঘ্রই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে চিঠি দেওয়া হবে বলেও জানান দলটির মনোনীত প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফশীল অনুযায়ী, ২০ আগস্ট কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত ছিল। গতকাল ১৬ আগস্ট ভোট গ্রহণের ৪দিন পূর্বে বন্যা ও প্রাকৃতিক দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণ দেখিয়ে নির্বাচন সাময়িক স্থগিতের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দ্বিতীয়বারের মতো স্থগিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কর্ণফুলী উপজেলা আ’লীগের সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমদ, সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী রনি, সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী, চরলক্ষ্যা ইউপি চেয়ারম্যান মো: আলী, বড়উঠান ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল আলম, শিকলবাহা ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী দিদারুল ইসলাম চৌধুরী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বানাজা বেগম নিশি, চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ছৈয়দ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, জুলধা ইউনিয়ন আওয়ামীগ সভাপতি ব্যাংকার আমির আহমদ চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি রফিক আহমদ, আবদুল মান্নান খান, ওসমান গণি মেম্বার, জসিম উদ্দিন চৌধুরী, জহির উদ্দিন, ইদ্রিস সওদাগর, অানোয়ার হোসেন, আবদুল মান্নান, কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক সেলিম হক, আবিদ হোসেন কর্ণফুলী উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি জসিম উদ্দিন প্রমুখ।