চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আলাউদ্দিন হত্যায় এক তরুণীসহ চারজনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ।
আসামিরা হলেন ইয়াসমিন আক্তার, তার স্বামী ইকবাল হোসেন, ইকবালের সৎভাই মো. তৈয়ব ও মো. হেলাল। এই মামলায় আলাদা আরেকটি দোষীপত্র দেওয়া হয় মাকসুদ উল্লাহ (১৭) নামের এক কিশোরের বিরুদ্ধে; সে ইকবালের ভাই।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বায়েজিদ বোস্তামী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শামীম শেখ অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, প্রতিবেশি এবং গৃহশিক্ষক থাকার সময় আলাউদ্দিনের সঙ্গে রুম্পার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় রুম্পার বিয়ে হয়ে গেলেও আলাউদ্দিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক অব্যাহত ছিল। এ সম্পর্কের কথা জানাজানি হলে প্রথম স্বামী ওমর সাদিকের সঙ্গে রুম্পার ছাড়াছাড়ি হয়। ওই সংসারে রুম্পার একটি মেয়েও ছিল। পরে গত বছরের জুলাইয়ে ইকবাল হোসেনকে বিয়ে করেন রুম্পা। বিয়ের কিছুদিন পর ইকবাল ওমান চলে গেলে আলাউদ্দিন আবার যোগাযোগ শুরু করেন।
রুম্পার সাখে সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পেরে ইকবাল আলাউদ্দিনকে নিষেধও করে। এতে আলাউদ্দিন ক্ষিপ্ত হয়ে আগের শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াসহ নানা হুমকি দিতে থাকেন। ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে ইকবাল দেশে এলেও আলাউদ্দিন জানতেন না। বিভিন্ন সময়ে আলাউদ্দিন রুম্পাকে দেখা করার জন্য এবং বাসা ভাড়া নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ায় শহীদ নগরের বাসাটি ভাড়া নেওয়ার পরিকল্পনা করেন ইকবাল। পরিকল্পনা অনুযায়ী রুম্পা আলাউদ্দিনকে বাসায় ডেকে আনার পর তাকে আটকে রাখে ইকবালসহ অন্যরা হত্যা করে।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আলাউদ্দিনকে খুন করার কথা স্বীকার করেন আসামিরা। মূলত আলাউদ্দিন ইয়াসমিনকে উত্ত্যক্ত করতেন। এই কারণে পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করা হয়। পলাতক কিশোর আসামি মাকসুদ উল্লাহকে ধরার চেষ্টা চলছে।
গত ২২ মার্চ রাতে বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন পশ্চিম শহীদ নগর এলাকার ওমান প্রবাসী আবু সৈয়দের চার তলা ভবনের তৃতীয় তলার একটি বাসা থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৩ মার্চ দুপুরে মর্গে স্বজনরা গিয়ে লাশ শনাক্ত করার পর পুলিশ জানতে পারে ওই যুবক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগ মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র মো. আলাউদ্দিন।
এ ঘটনায় আলাউদ্দিনের বাবা শাহ আলম বাদী হয়ে ২৩ মার্চ রাতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় হত্যা মামলা করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে আলাউদ্দিন হত্যার নেপথ্যে রয়েছে পরকীয়া। সাবেক প্রেমিকা ও তার স্বামীর পরিকল্পনায় খুন হয়েছেন আলাউদ্দিন। এ ঘটনায় জড়িত চারজনকে ২৮ মার্চ গ্রেফতার করে পুলিশ।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী বলেন, অভিযোগপত্রটি সাধারণ নিবন্ধন শাখায় জমা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আদালতে এটি দাখিল করা হবে।