চট্টগ্রাম : আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে গরু-সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও পশুর বাজার নিয়ে নৈরাজ্য ঠেকাতে সংশ্লিষ্টদের ক্রসফায়ারে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বাবু।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় বক্তব্য রাখার সময় জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরীকে এই পরামর্শ দেন তিনি।
এমন পরামর্শ দিয়ে বক্তব্য দেয়ার পর জেলা প্রশাসক উপজেলা চেয়ারম্যানকে কিছু না বললেও সেখানে উপস্থিত যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার হোসাইন জিয়াদ ও ক্যামেরাপার্সন সঞ্জয় মল্লিককে সভাকক্ষ থেকে চলে যেতে বাধ্য করেন।
এসময় চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা, বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ আইনশৃঙ্খলা কমিটির বিভিন্ন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
সকাল ১০ টায় অনুষ্ঠিত এই সভায় ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে পশু ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তার, বাজার ও খুঁটি নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, পশুচুরি, চামড়াসন্ত্রাস-এসব ছিলো অন্যতম আলোচ্য বিষয়।
এ নিয়ে উপস্থিত অন্যরা গঠনমূলক মতামত তুলে ধরলেও আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বাবু পশুর বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে ক্রসফায়ারে দিতে জেলা প্রশাসকের প্রতি অনুরোধ জানান।
আর এ পরামর্শ শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন জেলা প্রশাসক। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানকে কিছু না বলে উল্টো ক্ষোভ জানান যমুনা টেলিভিশনের দুই সাংবাদিকের উপস্থিতির কারণে। দায়িত্বরত ক্যামেরাম্যান সঞ্জয় মল্লিককে ডেকে জানতে চান এই কথা রেকর্ড হয়েছে কিনা। রেকর্ড হয়নি বলার পরও ডিসি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। সাংবাদিকরা এখানে কেন- জানতে চেয়ে তাদের সভাস্থল ত্যাগ করতে বলেন তিনি। চেয়ারম্যান সাহেব যা বলেছেন তা সংবিধানবিরোধী কথাবার্তা। এসব কথা আপনারা শুনবেন কেন- বলেন জেলা প্রশাসক।
এসময় হোসাইন জিয়াদ জেলা প্রশাসকের স্টাফ অফিসারের নিউজ কাভারের অনুরোধ সংক্রান্ত আগের দিন পাঠানো ক্ষুদেবার্তা বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে সভাস্থল ত্যাগ করে মাঝপথে বেরিয়ে যান এই দুই সংবাদকর্মী।
সাংবাদিক হোসাইন জিয়াদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে প্রায় ফোনে অথবা ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে নিউজ কাভারের জন্য জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে আমাদের অনুরোধ জানানো হয়। আমরাও সময় থাকলে প্রায়ই জেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিং কভার করি। আজকেও সেই একই নিয়মে অনুষ্ঠান কাভার করতে যাই। কিন্তু হঠাৎ করেই ডিসি সাহেব একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের বক্তৃতার পর আমাদের বের হয়ে যেতে বাধ্য করলেন। এসময় তিনি আমাদের কোনো কথাই শুনতে চাননি।’
‘একই অনুষ্ঠানে শুরুর দিকে একুশে টেলিভিশন, বাংলাভিশন ও বিজয় টিভি’র সাংবাদিকদের বের করে দেওয়া হয়। এনটিভির ব্যুরো প্রধান শামসুল হক হায়দরী ভাইও আমি উপস্থিত হওয়ার পর সভাস্থল থেকে স্বেচ্ছায় বেরিয়ে যান’- যোগ করেন হোসাইন জিয়াদ।
এ ব্যাপারে জানতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টেলিফোনে চেষ্টা করেও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরীকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে ক্রসফায়ারের পরামর্শ দেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বাবু।
একুশে পত্রিকাকে তিনি বলেন, আমি কোরবানির পশুবাজার নিয়ে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে এবং ইয়াবার বিস্তারের মাধ্যমে সমাজকে অস্থির করে তুলেছে যারা, তাদেরকে কঠোর আইনের আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছি। আমার পরামর্শ ডিসি সাহেব গুরুত্ব সহকারে শুনেছেন।
আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থিত রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আলী শাহ একুশে পত্রিকাকে জানান, গরুচোর নয়, সম্ভবত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ক্রসফায়ারে দিতে অনুরোধ করেছিলেন আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী।
সাংবাদিকদের সভাস্থল থেকে বের করে দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আলী শাহ বলেন, খুব খারাপভাবে ডিসি সাহেব সাংবাদিকদের বের হয়ে যেতে বলেছেন তা নয়। তবে ডিসি সাহেব আরেকটু সফট করে বলতে পারতেন।
পরক্ষণে ফিরতি ফোনে উপজেলা চেয়ারম্যান আলী শাহ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ডিসি সাহেবের সাথে এখনই আমার কথা হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের মাঝে অসন্তোষের বিষয়টি জানানোর পর তিনি (ডিসি) বললেন, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে। অবশ্যই আমরা মিলেমিশে কাজ করব।’