রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

পাসপোর্ট-প্রত্যাশীদের জন্য আবু সাইদের সেবা

প্রকাশিতঃ ১৮ মার্চ ২০২৩ | ৮:৪৬ অপরাহ্ন


জোবায়েদ ইবনে শাহাদাত : সোমবার (১৩ মার্চ) বিকেল ৩টা। অন্যান্য দিনের মতোই ব্যস্ত চট্টগ্রামের মনসুরাবাদস্থ বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস। হঠাৎ চোখ পড়ে পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মো. আবু সাইদের দিকে। তবে নিজের কক্ষে নয়, কাউন্টার ঘুরে ঘুরে কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন তিনি। কখনও লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সেবাপ্রার্থী আবার কখনও বিতরণ শাখায় অপেক্ষারতদের কাছে হাসিমুখে জানতে চাইছেন সমস্যার কথা। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাগিদ দিচ্ছেন দ্রুত সেবা দেওয়ার।

পরিদর্শন শেষে কক্ষে যাবেন এমন সময় এক ব্যক্তি ছুটে আসেন আবু সাইদের কাছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যরা ওই ব্যক্তিকে আটকাতে চাইলেও হাতের ইশারায় বারণ করলেন পরিচালক আবু সাইদ। সমস্যার কথা জানাতেই ওই ব্যক্তির কাছ থেকে কাগজপত্র নিয়ে নিজেই ছুটলেন কাউন্টারে। ডেসপাস শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে বললেন বিষয়টা দেখতে। কাগজপত্রে ভুল থাকার কথা জানতে পেরে বিষয়টি বুঝিয়ে সংশোধনের পদ্ধতিও বাতলে দেন।

অনেকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে এসব দেখছিলেন, আবার কেউ হয়েছেন হতভম্ব। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক। যেখানে অনেক সরকারি অফিসে কর্মকর্তারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ থেকে বেরই হন না, কালেভদ্রে দেখা করেন সাধারণ মানুষ, সেবাপ্রত্যাশীদের সাথে; সেখানে একজন বিভাগীয় পরিচালকের এভাবে পরিদর্শন করা, নিজে গিয়ে সেবাপ্রার্থীদের সাথে কথা বলা যে কাউকে অবাক করবে।

যদিও বিষয়টা আবু সাইদের জন্য স্বাভাবিক ঘটনা। প্রতিদিনই নিজের রুম থেকে বেরিয়ে পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি। সেবাপ্রার্থীদের সাথে কথা বলে সমস্যার কথা জানতে চেষ্টা করেন। তাঁর মতে, ‘পাসপোর্ট পাওয়া জনগণের অধিকার। তারা সরকারি ফি পরিশোধ করে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করছেন, তাহলে এটি পেতে কেন তাদের হয়রানি-ভোগান্তিতে পড়তে হবে? আর নিজে তদারকি না করলে অনিয়ম-অসংগতি চোখে পড়ে না। তাই কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য প্রতিদিন কিছুটা সময় বরাদ্দ রাখেন ভিজিটের জন্য।’

শুধু পরিদর্শনে নয়, যে কেউ চাইলে বিভাগীয় পরিচালক আবু সাইদের কক্ষে যেতে পারেন, তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন। পাসপোর্ট অফিসে সেবাপ্রত্যাশীদের জন্য সেবা নির্দেশিকা ফলকে লেখা আছে, কোথায় গেলে তারা কী সেবা পাবেন। পরিচালকের রুম নম্বরও (২০১) দেওয়া আছে ওই নির্দেশিকায়। বেশিরভাগ সময়ই ভিড় লেগে থাকে ২য় তলার ২০১ নম্বর কক্ষে। পরিচালকের ওই কক্ষে কোনো কোনো সময় কাউন্টারের চেয়ে বেশি মানুষ যান সেবা নিতে, সমস্যার কথা জানাতে। এই অফিসে চাউর আছে, পরিচালকের কাছে গিয়ে কেউ খালি হাতে ফিরে না!

সেবাপ্রত্যাশীদের মতোই অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আবু সাইদের আচার-ব্যবহার, জীবনধারায় মুগ্ধ। সম্প্রতি ঢাকা (পাসপোর্ট অফিসের প্রধান কার্যালয়) থেকে বদলি হয়ে চট্টগ্রামে পরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে এসেছেন আহমেদ আলী। তিনি বলেন, বেশিদিন হয়নি এসেছি। কিন্তু স্যারের ব্যবহারে মনেই হয় না, আমি এখানে নতুন। স্যারের বন্ধুসুলভ আচরণ, হাসিমুখে কথা বলা আমাকে মুগ্ধ করেছে। গ্রাহক সেবার যে কনসেপ্ট আমার মাঝে ছিল তা তিনি পুরো পাল্টে দিয়েছেন। প্রতিনিয়ত স্যারের কাছে শিখছি। এমন মানুষের সান্নিধ্য পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।’

পরিচালক আবু সাইদকে নিয়ে একই মনোভাব দেখা যায় ডেসপাস রাইটার মামুন হাওলাদারের মাঝে। তিনি বলেন, ‘মাঝে মধ্যে আমাদের একজনকে বেশ কয়েকটি শাখার কাজ করতে হয়। কিন্তু এতে আমাদের কোনো অভিযোগ-আক্ষেপ কিংবা ক্লান্তি নেই। কারণ অনেক সময় স্যার নিজেই এসব কাজ করেন। এতো বড় মানুষ হয়ে তিনি এগুলো করতে পারলে আমরা কেন পারবো না? স্যারের মাঝে বিন্দুমাত্র অহংকার-দাম্ভিকতা নেই। তিনি আমাদের দিয়ে কাজ করান না, আমাদের নিয়ে কাজ করেন।’

সাধারণত পাসপোর্ট অফিস বলতে মানুষের মাঝে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা কাজ করে। কিন্তু একসময় যারা মনে করতেন দালাল ছাড়া পাসপোর্ট করতে পদে পদে হয়রানি-ভোগান্তি পোহাতে হবে তারাই মনসুরাবাদ অফিসে গিয়ে বিস্মিত হচ্ছেন। দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা, সেবার মান বৃদ্ধি (সিনিয়র সিটিজেন ও অসুস্থদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা দান), ওয়ানস্টপ সার্ভিস, মহিলাদের জন্য বেবি ফিডিং কর্ণার ও নামাজ ঘর স্থাপনসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে পাসপোর্ট অফিসের প্রতি সেবাপ্রার্থীদের চিরাচরিত ধারণা পাল্টে দিয়েছেন আবু সাইদ।

অন্যান্য সরকারি অফিসের তুলনায় এই অফিসটি একটু ব্যতিক্রম। প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখ আটকাবে মনোমুগ্ধকর বাগান। পাসপোর্ট অফিস প্রায়শই ভিড়ে ঠাসা থাকে। গেইট থেকে কাউন্টার পর্যন্ত থাকে মানুষের সারি। তাদের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ছাউনি। নিচতলায় অপেক্ষারতদের জন্য আছে সারিবদ্ধ চেয়ার-টুল। দোতলায় পরিচালকের কক্ষের পাশেই রয়েছে পরিচ্ছন্ন ওয়েটিং রুম। অন্তত ২০ জন মানুষ এখানে বিশ্রাম নিতে পারেন অনায়াসে। এছাড়া রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ও তথ্যবহুল বঙ্গবন্ধু কর্ণার। সেবাপ্রার্থীদের অনেকে এখানে এসে অন্তত একবার হলেও ছবি তুলে যান। পাশেই রয়েছে মুসল্লিদের জন্য ইবাদতখানা।

এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে আবু সাইদের একক প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনায়। পাসপোর্ট অফিসের চেহারা একেবারে পাল্টে দিয়েছেন তিনি। শুধু অফিস যে পরিপাটি তা নয়, সমগ্র অফিসের প্রতিটি শাখাকে বেঁধেছেন শৃঙ্খলার মধ্যে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালক আবু সাইদ বলেন, ‘সরকারি অফিস কেন অপরিচ্ছন্ন থাকবে? আমি চাই এখানে আসলে সেবাপ্রার্থীদের একটা ভিন্ন ও ভালো অভিজ্ঞতা হোক। সেবা নিতে এসে সেবাপ্রার্থীদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় তার জন্য যতটুকু সম্ভব সবই আমি করার চেষ্টা করেছি। তারপরও ভুলভ্রান্তি হয়, তবে সেগুলো শুধরে নেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করি।’

বেশ কয়েকজন সেবাপ্রত্যাশীর সাথে কথা হলে তারা সকলেই আবু সাইদের আচার-ব্যবহার ও আন্তরিক সহযোগিতার প্রশংসা করেন। তবে পরিচালকের ব্যাপারে একটু ব্যতিক্রম মন্তব্য করলেন রিকশাচালক ছিদ্দিক হোসেন। বলেন, ‘বিদেশ যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করতে এসেছি। আগে এখানে আসা হয়নি, তাছাড়া অনেকের কাছে নেতিবাচক কথা শুনে একটু বিভ্রান্ত ছিলাম। কিন্তু তারপরও আসি। এসে দেখি আমার আবেদন প্রক্রিয়ায় একটু ভুল হয়েছে, সেবা নিতে আসা আরেকজন বললেন, পরিচালক স্যারের কাছে যান। তিনি নিশ্চয়ই সাহায্য করবেন।’

‘আমার পরনে ছিল লুঙ্গি আর ঘামে ভেজা গেঞ্জি। কিন্তু কোনো সমস্যা ছাড়াই স্যারের রুমে ঢুকলাম। আমাকে চা-বিস্কুটও দিয়েছে, যা দেখে একটু অবাক হলাম। তারপর স্যার আমাকে ডাকলেন। সামনে চা দেখে বললেন- আগে চা খান, তারপর আসুন। এরপর আমি স্যারের কাছে গিয়ে সমস্যার কথা বলতেই একজনকে ফোন করলেন, আমার বিষয়টা দেখতে বললেন। ফোন রেখে আমাকে বললেন যান আপনার কাজ হয়ে যাবে। সত্যিই আমার সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। পুরো বিষয়টা স্বপ্নের মতো লাগছিল, আমার মত একজন মানুষকে এমন সম্মান আগে কেউ কখনো করেননি।’

২০১৯ সালে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর পাসপোর্ট সেবা সহজ করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন আবু সাইদ। প্রথমেই যে কাজটা করেছেন তা হলো ওপেন ডোর পলিসি। যে কেউ, যে কোনো সময় পরিচালকের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন, কর্মকর্তাদের রুম সকলের জন্য খোলা। পাসপোর্ট অফিস কেন্দ্রিক নির্ভরতা কমানো, এসংক্রান্ত সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া ও জনগণের জ্ঞাতার্থে প্রকাশ করেছেন তথ্য সহায়িকা। যা পাসপোর্ট সংক্রান্ত দেশের প্রথম তথ্য সহায়িকা। পাসপোর্টের আবেদন থেকে শুরু করে পাসপোর্ট প্রাপ্তি পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া এখানে দেওয়া আছে।

এছাড়া পুনঃতদন্তের আবেদন, এনওসি ফরম্যাট, সংশোধন ফর্মসহ যাবতীয় কিছু তথ্য সহায়িকা বইয়ে আছে নমুনাসহ। ৪৪ পৃষ্ঠার এই বইকে পাসপোর্টের কমপ্লিট সলিউশন বলা চলে। সেবাপ্রার্থীদের কাছে বইটি বিতরণ করার পাশাপাশি অফিস আঙ্গিনায় এসব বিষয় উল্লেখ করে একটি বোর্ডও টাঙানো হয়েছে। এছাড়া পাসপোর্টের আবেদন থেকে শুরু করে পাসপোর্ট প্রাপ্তি পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার ওপর ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করে অফিসের টিভি মনিটরে সার্বক্ষণিক প্রচার করা হচ্ছে। আবু সাইদ মনে করেন, একজন ব্যক্তিও যদি এসব থেকে উপকৃত হন সেখানেই তাদের স্বার্থকতা।

তিনি বলেন, ২০২০ থেকে চলতি বছরের ১০ মার্চ পর্যন্ত আমাদের রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ২৫৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এই সময়ে ৪ লাখ ৯৮ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। প্রায় ৩ লাখ ৯৭ হাজার পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছে। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন (তদন্তাধীন, নেগেটিভ রিপোর্টপ্রাপ্ত, আন ক্লেইমড পাসপোর্ট) আছে। সেই হিসেবে নিষ্পত্তি অনুপাত শতকরা ৯৭ শতাংশ। যদিও এই পরিসংখ্যানে তিনি তেমন একটা খুশি নন। তার মতে, সর্বোচ্চ সাফল্য না পাওয়া পর্যন্ত সন্তুষ্টি আনতে নেই। এতে কাজের মান ও গতি কমে যেতে পারে। তাই বিদায়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দিতে চান নিজের সেরাটা।

উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে আবু সাইদ বলেন, ‘২ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে অফিস ভবনটি ৪র্থ তলা সম্প্রসারণের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। একটি লিফট স্থাপন প্রক্রিয়াধীন আছে। ভবনের বৈদ্যুতিক, সিভিল ও স্যানিটারি কাজ করা হয়েছে। ভবনটির কয়েকটি কক্ষের ডিজাইন করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে অফিস আঙ্গিনায় কার্পেটিং করা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি সংযোগটিকে নিম্নচাপের বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে মধ্যম চাপের বিদ্যুৎ সংযোগে উন্নীত করা হয়েছে। ফলে বাধামুক্ত ও দ্রুততর সেবাপ্রদান করা সম্ভব হয়েছে।’

‘আমি প্রায়শই সেবাপ্রার্থী, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে সেবার মান উন্নয়নের ব্যাপারে মতবিনিময় করি। তাদের ফিডব্যাক সাজেশন নিয়ে সেসব বিষয়ে কাজ করার চেষ্টা করি। এমনও দিন যায় যখন দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় পাই না। কিন্তু তাতে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। পরিবার থেকে কিছু আদর্শ-শিক্ষা আমি পেয়েছি। বাবা-মাকে দেখেছি ওই পথে চলতে, আমি সেই পথ অনুসরণ করার চেষ্টা করি। অনেকসময় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার পরও কেউ কেউ দুর্নাম করে। কিন্তু আমি এসব মনে রাখি না, ভুলে যাই। আমি পজিটিভ মানুষ, পজিটিভ চিন্তা করতে ভালোবাসি।’

ভবিষ্যত কর্ম-পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অফিসের মূল ফটকটিকে আরও বড় করতে চাই। যাতে সেবাপ্রার্থীরা নির্বিঘ্নে প্রবেশ করতে পারে। অনেকসময় সেবা প্রত্যাশীরা বাইরে অপেক্ষা করে। রোদ-বৃষ্টিতে তাদের সমস্যা হয়। এজন্য তাদের সুবিধার্থে একটি শেড নির্মাণ, বিশুদ্ধ পানির জন্য ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন ও নতুন জেনারেটর স্থাপনের পরিকল্পনা আমার আছে। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে আবেদন করেছি। আশা করছি দ্রুত এগুলো করতে পারবো।’

চট্টগ্রামের প্রতি, এখানকার মানুষের প্রতি টান ও ভালোলাগা কাজ করে আবু সাইদের মধ্যে। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা এবং চাকরি জীবনে কাজের সুবাদে দীর্ঘ সময় চট্টগ্রামে থাকা হয়েছে। আমি চাটগাঁইয়া ভাষা বলতে না পারলেও ভালো মতই বুঝি। এখানে আমার অনেক বন্ধু, সহকর্মী, আত্মীয় ও কাছের মানুষ আছেন। সত্যি বলতে আমি আমার জন্মভূমি সিরাজগঞ্জের যত মানুষকে চিনি, চট্টগ্রামে তার চেয়ে বেশি মানুষকে চিনি। এখানকার মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে আমি তৃপ্তি পাই, আনন্দিত হই।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুবাদে প্রথম চট্টগ্রামে আসেন আবু সাইদ। এরপর ২০১৫ সালের ২৫ মে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের উপপরিচালক হিসেবে বদলি হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চট্টগ্রামে আসেন তিনি। ১ বছর পর ২০১৬ সালের ৮ জুন বদলি হন আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২২ জুলাই পুনরায় চট্টগ্রামে আসেন তিনি। তবে এবার আসেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক হিসেবে। সেই হিসেবে জীবনের বড় একটা সময় চট্টগ্রামেই পার করেছেন তিনি।

একুশে পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের সম্পর্কে বলতে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন আবু সাইদ। জানান, তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা সিরাজগঞ্জে। প্রাথমিক, মাধ্যমিকের পড়ালেখাও করেছেন সেখানে। উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন রাজশাহীর নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে। পড়ালেখায়ও ছিলেন বেশ মেধাবী। প্রাথমিক স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় নিয়মিত সরকারি বৃত্তি পেয়েছেন। বাবাই ছিলেন তাঁর অনুপ্রেরণা। বাবা মরহুম ছিদ্দিক হোসেন পেশায় ছিলেন শিক্ষক। তার কাছে পেয়েছেন নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা ও সততার শিক্ষা। অপরদিকে প্রয়াত মা আম্বিয়া খাতুন তাদের ৯ ভাই-বোনকে আগলে রেখেছিলেন পরম স্নেহে-ভালোবাসায়। ভাই-বোনের মধ্যে আবু সাইদ ৫ম।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন লোকপ্রশাসন বিভাগ (২৪ ব্যাচ) থেকে। এরপর ২০০১ সালে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের স্পেশাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে (প্রধান কার্যালয়) সহকারী পরিচালক পদে যোগ দেন তিনি। ৫৩ বছরের জীবদ্দশায় চাকরির সুবাদে খুলনা, সিলেট, যশোর, ময়মসসিংহ, নোয়াখালী, হবিগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ করতে হয়েছে তাঁকে। যেখানেই কাজ করেছেন ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ ও আন্তরিকতার কারণে কুড়িয়েছেন প্রশংসা-সুনাম। আবু সাইদ বলেন, ‘কর্মজীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সততা ও আন্তরিকতার সাথে মানুষের সেবা করে যেতে চাই।’