রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

বৃষ্টি কমলেও জোয়ারের পানিতে নাকাল চট্টগ্রাম

প্রকাশিতঃ ২৫ জুলাই ২০১৭ | ৯:৩৪ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে মঙ্গলবার সারাদিন তেমন বৃষ্টি হয়নি। এরপরও জলাবদ্ধতায় নাকাল চট্টগ্রাম নগরবাসী। বাসাবাড়ি-সড়ক সব পানিতে থইথই। কোথাও হাঁটু, আবার কোথাও কোমর সমান পানি। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ মঙ্গলবারও ছিল পানির নিচে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন কর্ণফুলী নদীতে কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়া ও অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে নিচুস্থানে জমে রয়েছে পানি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পতেঙ্গা কার্যালয়ের আবহাওয়া সহকারি সৈয়দা মিমি পারভীন বলেন, মঙ্গলবার সারাদিন গুঁড়ি গুঁড়ি মাত্রায় বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার।

বৃষ্টি কম হওয়ার পরও জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে এই আবহাওয়া কর্মকর্তা বলেন, ‘কাপ্তাই বাঁধের পানি কর্ণফুলী নদীতে ছাড়া হয়েছে। এছাড়া অস্বাভাবিক জোয়ার তো রয়েছেই। এসব কারণেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে বৃষ্টির পরিমাণ কম হলেও নগরের হালিশহর, আগ্রাবাদ সিডিএ, কাপাসগোলা, চকবাজার উর্দু গলি, শুলকবহর, বাদুড়তলা, ষোলোশহর, দুই নম্বর গেট, মোহাম্মদপুর, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়াসহ বিভিন্ন নিচু এলাকা মঙ্গলবারও পানির নিচে ছিল।

সরেজমিনে মঙ্গলবার দুপুর দুইটার দিকে আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হাঁটুসমান পানি। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রহিম জানালেন, সামান্য বৃষ্টিতেই এ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। গতকালের পানি উঠেছে আরও বেশি। মঙ্গলবার কিছুটা কমলেও পুরোপুরি পানি নামেনি।

এর আগে বেলা ১২টার দিকে নগরের বাদুরতলা খালপাড় এলাকায় দেখা যায়, হাঁটুসমান পানি থই থই করছে। এর মধ্যে এলাকার বাসিন্দারা চলাফেরা করছেন। নালার ময়লা-আবর্জনা ভাসছে এই পানিতে।

দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জ এলাকায় বেলা তিনটা থেকে জোয়ার ও বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন দোকানে পানি ঢুকে। চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এস এম হারুনুর রশীদ বলেন, বাজারের বেশির ভাগ নিচু দোকানে পানি ঢুকেছে। এতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত তিন দিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহিঃনোঙ্গরে লাইটার জাহাজে করে পণ্য খালাস পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। একশ’র বেশি মাদার ভ্যাসেল অলস বসে রয়েছে বহিঃনোঙ্গরে। একই সাথে শত শত লাইটার জাহাজ অবস্থান নিয়ে আছে ১৫ নম্বর ঘাট থেকে শুরু করে নেভাল পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায়।

এদিকে অমাবস্যা ও পুর্ণিমা তিথির প্রভাব এবং জলবায়ুগত কারণে গতকাল মঙ্গলবার সর্বোচ্চ জোয়ার হয়েছে বলে তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান ও মৎস্যবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, নদী এবং সাগরে জোয়ারভাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে কিছু কিছু জোয়ার ভয়ংকর রূপ নেয়। চলতি বছরের ৭০৫টি জোয়ারের মধ্যে মঙ্গলবারের জোয়ারটি ছিলো সবচেয়ে উচ্চতার। গতকাল ভাটা এবং জোয়ার উচ্চতার মধ্যে প্রায় ১৮ থেকে সোয়া ১৮ ফিটের মতো পার্থক্য ছিল।

এদিকে চট্টগ্রামের এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মঙ্গলবার গণ-বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এতে বলা হয়েছে, অতি বর্ষণ, অতিমাত্রায় জোয়ার, প্রতি সেকেন্ড কাপ্তাই বাঁধের ৩৬ হাজার কিউসেক পানি ছেড়ে দেওয়া এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে কর্ণফুলী নদীতে পানি বেড়েছে। যার কারণে চট্টগ্রাম নগরে জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। বৃষ্টি বিহীন অবস্থায়ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে জোয়ারের সময় জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি পেয়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সিটি করপোরেশনের নানা উদ্যোগ ব্যাহত হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও প্রতিক’ল আবহাওয়ায় জলাবদ্ধতার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ায় সিটি করপোরেশন আন্তুরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে বলেও ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।