মোর্শেদ নয়ন : রোগীরা ঘুরছে। পাচ্ছে না চিকিৎসা সেবা। কর্মস্থলে চিকিৎসকরা আসছেন মাঝে মধ্যে। হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত দিনের স্বাক্ষর করেই দায়িত্ব সারছেন তারা।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো সরেজমিন পরিদর্শনে এমন চিত্র খুঁজে পান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আহ্সান উদ্দিন মুরাদ।
চলতি বছরে কার্যক্রম শুরু করা কর্ণফুলী উপজেলায় এখনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এই উপজেলায় বেসরকারী স্বাস্থ্য সেবার সুযোগও সীমিত। ফলে উপজেলার দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার অধিবাসীর স্বাস্থ্যসেবা মূলত এই পাঁচটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই পাঁচ কেন্দ্রেও চিকিৎসক না থাকায় কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না কর্ণফুলীবাসী।
জানা যায়, কর্ণফুলী উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে পাঁচজন এমবিবিএস ডাক্তার পদের মঞ্জুরি রয়েছে। বর্তমানে চারজন ডাক্তার পদায়িত আছেন। কিন্তু চারজনই সংযুক্তিতে ছিলেন অন্যত্র কর্মরত; দুইজন পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং দুইজন জেনারেল হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক না থাকার ফলে ব্যাহত হচ্ছিল স্বাস্থ্যসেবা। চলতি বছরের ৮ মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আহ্সান উদ্দিন মুরাদ ‘পদায়িত চারজনের সংযুক্তি বাতিল অথবা পাঁচটি কেন্দ্রে নতুন ডাক্তার পদায়ন জরুরি’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবরে চিঠি প্রেরণ করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ১৩ জুলাই তিন জন চিকিৎসক জরুরীভাবে পদায়ন করা হয়। কিন্তু পদায়িত চিকিৎসকও নিয়মিতভাবে কর্মস্থলে হাজির হচ্ছেন না। ফলে স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে না জনসাধারণ।
সরেজমিন পরিদর্শনে চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে ইউএনও দেখতে পান চিকিৎসক কর্মচারী ছয়জনের মধ্যে উপস্থিত আছেন দুইজন। ইউএনও’র পরিদর্শনের খবর পেয়ে অবশ্য সাড়ে ১২টার সময় চিকিৎসক মুর্শিদা আকতার কেন্দ্রে হাজির হন।
চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়েও চিকিৎসক নুসরাত শারমিনের সাক্ষাৎ মেলেনি। তবে কেন্দ্রের কর্মচারীরা জানান তিনি এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে গেছেন।
ইউএনও স্থানীয় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে সাথে নিয়ে শিকলবাহা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন চিকিৎসক থেকে শুরু করে আয়া উপস্থিত নেই। এ কেন্দ্রের পদায়িত চিকিৎসক প্রেষণে অন্যত্র দায়িত্ব পালন করছেন।
জুলধা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক মাশরুফা তাহের ছুটিতে আছেন বলে জানান পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
বড়উঠান ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক পদায়ন করা হয়নি।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ও কেন্দ্রের কর্মচারীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, কেন্দ্রে পদায়িত চিকিৎসকরা নিয়মিত কেন্দ্রে উপস্থিত হচ্ছেন না। মাঝে মধ্যে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে খাতা আলমারীতে তালাবদ্ধ করে রেখে চলে যান। কেন্দ্রে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) সময়মত কেন্দ্রে আসেন না। এসেও বেশীক্ষণ থাকেন না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম একুশে পত্রিকাকে বলেন, পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেষণে থাকা ৩ চিকিৎসকে প্রেষণ বাতিল করে চলতি মাসে কর্ণফুলীতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে পদায়িত করা হয়। ১৫ জুলাই যোগদানের পর এই কয়দিনে বৈরী আবহাওয়ার কারণে হয়ত নিয়মিত হতে পারেনি। তবে তারা যাতে নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন এ বিষয়ে আমরা নজরদারী করবো।
কর্ণফূলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ আহ্সান উদ্দিন মুরাদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, এটি একটি নতুন উপজেলা এবং এখনো পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গড়ে উঠেনি। ফলে এখানকার স্বাস্থ্যসেবা মূলত এই পাঁচটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র নির্ভর। তাই এই পাঁচটি কেন্দ্রে নিয়মিত পূর্ণকালীন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান খুবই জরুরী। এই বিষয়ে আমি ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছি। আজকের পরিদর্শনের চিত্রও সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করেছি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ইউএনও সাহেব পরিদর্শনে গিয়ে চিকিৎসকদের পাননি- এটা আমাকে জানাননি তিনি। আমি এখনই ওনাকে ফোন করে বিষয়টি জেনে নেব। আগামীকাল তিনি যদি আমাকে লিখিতভাবে এসব জানান তাহলে আমি অ্যাকশনে যাব।