চট্টগ্রাম: নগরের পতেঙ্গার নেভাল বিচে ভেজাল মদের ছড়াছড়ি। ভেজাল মদ্যপানে যাচ্ছে একের পর এক প্রাণ; এবার বলি হলেন মদ বিক্রেতা মো. দেলোয়ার।
নেভাল বিচে ‘বিসমিল্লাহ স্টোর’ নামের একটি দোকান চালাতেন দেলোয়ার; ওই দোকানে নানা পণ্যের সাথে বিয়ার ও দেশি-বিদেশী মদ বিক্রি করতেন তিনি। বিক্রিতে নেমে মদে আসক্ত হন দেয়োয়ার। রোববার রাতে মদ খেয়ে বাসায় ফেরেন এই বিক্রেতা।
সোমবার সকালে বমি করা শুরু করলে তাকে নেওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে মারা যান মাদক বিক্রেতা দেয়োয়ার। তার মরদেহ নেয়া হয়েছে চমেক মর্গে।
২২ বছর বয়সী মো. দেলোয়ার দক্ষিণ পতেঙ্গার কোনার দোকান এলাকার মৃত শেখ আহমদের ছেলে।
দেলোয়ারের নিকটজনদের তথ্যমতে, গত বছর এই সময়ে ভেজাল মদ্যপানে মারা গিয়েছিলেন তার বোনের স্বামী মোজাম্মেল; যিনি ওই ‘বিসমিল্লাহ স্টোরের’ আগের মালিক ছিলেন। এক বছরের মাথায় একই কারণে মারা গেলেন শ্যালক দেলোয়ারও।
নেভাল বিচ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. নাসিম বলেন, ‘মদ্যপানে দেলোয়ারের মৃত্যু হয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু ভেজাল মদের কারণে মারা গেছে কিনা সেটা আমার জানা নেই।’
এই ব্যবসায়ী তথ্য দেন, ‘দোকানের আড়ালে-আবড়ালে আরও অনেক ব্যবসায়ী বিক্রি করছে মাদক। অতি মুনাফার লোভে তারা এই কাজগুলো করছে।’
নেভাল বিচের ব্যবসায়ী নেতা মো. নাসিম বলেন, ‘মাদক ব্যবসা বন্ধের ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় কাউন্সিলরকে অনুরোধ করেছি। তারাও নানাভাবে চেষ্টা করছেন এসব বন্ধের জন্য। তারপরও এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এ ব্যাপারে পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের হস্তক্ষেপ চাই আমরা।’
স্থানীয় সূত্রগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বিদেশী এক বোতল মদে বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে তিন থেকে চার বোতল মদ তৈরী করা হয়। এরপর চকচকে বিদেশি বোতলে ভরে বিক্রি হয় ভেজাল মদ। অভিযোগ আছে- নেভাল বিচ এলাকায় ভেজাল মদ তৈরীর নেপথ্যে রয়েছেন আলাউদ্দিন ও ইসমাইল নামের দুই ব্যক্তি।
এসব তথ্য অজানা নয় পুলিশের কাছেও; পতেঙ্গা থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, ‘আলাউদ্দিন ও ইসমাইল একমাস আগেও কারাগারে ছিল। তাদেরকে আমরা বেশ কয়েকবার গ্রেফতার করেছি। এই দুইজন তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তাদের বিরুদ্ধে থানায় বহু মামলা আছে। এই দুইজনকে ফের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
ভেজাল মদ খেয়ে দুলাভাইয়ের মৃত্যুর এক বছর পর দেলোয়ারের মৃত্যু প্রসঙ্গে ওসি বলেন, ‘তাহলে তো উইকেট দুটো গেল! মাদক বিক্রেতারা এভাবে মারা গেলে ভালো না? আমরা তো এটাই চাই।’
এদিকে নেভাল বিচে গিয়ে মদ্যপান করা হাল আমলের একটি রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদেশী মদের চাহিদা পূরণে তৈরী হচ্ছে ভেজাল মদ। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না হওয়ায় এসব মদ খেয়ে কী পরিমাণ মানুষ মারা যাচ্ছে- তার হিসেব কারও কাছেই যেন নেই।
‘জেনে-শুনে যারা এসব (ভেজাল মদ) খাচ্ছে তারা মারা যাক- আমরা সেটাই চাই।’ –যোগ করেন পতেঙ্গা থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া।
মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, ‘নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’