একুশে প্রতিবেদক : ঢাকা উত্তর সিটির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। তিনি কোনোদিন রাজনীতি করেননি। ছিলেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা। এরপরও মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের তিন বছরেই তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন নগরপিতার দায়িত্ব কী?
ইচ্ছা থাকলে যে চমক দেওয়া যায়, বাসযোগ্য শহর গড়ে তোলা যায়, তা দেখিয়ে দিয়েছেন আনিসুল হক। ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি; এর অনেক সুফল এখনো পাচ্ছে ঢাকাবাসী।
মোছলেম উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুর পর শূন্য হওয়া চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে এমন একজন মানুষ কি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পারেন না? যিনি বড় বড় কথায় নয়, কাজে প্রমাণ দেবেন। নিরবে করবেন জনসেবা। চারপাশে নিয়ে আসবেন পরিবর্তন।
নেতৃত্বের গুণাবলিসম্পন্ন এমন একজন মানুষ হতে পারেন এশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম। চট্টগ্রাম আবাহনীর সহ সভাপতি আবদুস সালাম ক্রীড়া সংগঠনটির চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের প্রতিষ্ঠা করা আবাহনীর সাথে যুক্ত থেকে কেউ হুইপ হয়েছেন, কেউ হয়েছেন এমপি-মন্ত্রী। কিন্তু কিছুই হননি নির্লোভ, নির্মোহ মানুষ আবদুস সালাম।
আবাহনীর মতো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানকে নিঃস্বার্থভাবে আবদুস সালাম দান করে এসেছেন জানিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘আবাহনীর সঙ্গে আমিসহ অনেকে জড়িত। আবাহনীকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে অনেকেই মন্ত্রী, এমপি হয়েছেন। কিন্তু আবদুস সালাম ভাই কিছুই হননি। যদিও তিনি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে চট্টগ্রাম আবাহনীর সাথে জড়িত। তিনি শুরু থেকেই চট্টগ্রাম আবাহনীর ভাইস প্রেসিডেন্ট।’
‘প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে ওনার টাকা দিয়ে আবাহনী চলতো, আবাহনীর খেলা চলতো। ৩০ বছর আগে তিনি এক সাথে ১০ হাজার, ২০ হাজার টাকা দিতেন আবাহনীকে। যা এখন ১০ লাখ, ২০ লাখ টাকার সমান। পরবর্তীতে তিনি ১ লাখ, ২ লাখ, ৫ লাখ, ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। শুধু আবাহনীকে ভালোবেসে তিনি এভাবে অনুদান দিয়েছেন। বিনিময়ে কিছুই চাননি।’ বলেন মফিজুর রহমান।
শুধু আবাহনীকে নয়, অসংখ্য ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকেও সবসময় অকাতরে দান করে আসছেন আবদুস সালাম। তবে এসব বিষয় তিনি কাউকে জানান না। ডান হাতে দিলে বাম হাত জানবে না- এমন স্টাইলে দান করে আসছেন তিনি।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ৮ বার পরিচালক ও ৪ বার প্রথম সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন আবদুস সালাম। তাঁর নিজের হাতে গড়ে ওঠা ২০টির বেশি প্রতিষ্ঠানে এখন কাজ করছেন ৩১ হাজারের বেশি মানুষ। প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে কোনোদিন দুর্ব্যবহার করেননি তিনি। প্রচলিত আছে, আবদুস সালামের এশিয়ান গ্রুপে কারও চাকরি হলে আর যায় না।
চট্টগ্রাম-৮ আসনের আওতাধীন নগরের মোহরা এলাকায় আবদুস সালামের আদি বাড়ি। ভিন্ন এলাকা থেকে মোহরায় এসে বসতি স্থাপন করা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এক সময় এশিয়ান গ্রুপের আবদুস সালামের বাড়িতে ‘লজিং মাস্টার’ ছিলেন।
বনেদি পরিবারের সন্তান আবদুস সালাম ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম ক্লাবের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক ও সিনিয়র সহ সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এছাড়া সাউদার্ন মোডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। বর্তমানে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কোষাধ্যক্ষসহ আরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন আবদুস সালাম।
৫ বছর আগে আওয়ামী লীগকে ভালোবেসে দলটির চট্টগ্রাম নগরের বাগমনিরাম ওয়ার্ডের সদস্য হয়েছেন আবদুস সালাম। এমন একজন মানুষকে চট্টগ্রাম-৮ আসনের এমপি পদে বাকি ৮ মাসের জন্য পরীক্ষামূলক কাজে লাগানো যায় কিনা, সেই প্রশ্ন উঠছে ক্ষমতাসীন দলটির একাংশের মধ্যে।
তারা বলছেন, এশিয়ান গ্রুপের মালিক আবদুস সালাম ছাই ধরলে সোনা হচ্ছে। পরিবারের কাছ থেকে টাকা না নিয়েও তিনি ২০টির বেশি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন অনন্য দক্ষতায়। হাজার হাজার মানুষ তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে, এটা তাঁর শ্রম, মেধা, ঘামে সম্ভব হয়েছে। অন্য কেউ যেটা পারেন না, কৌশলগত কারণে আবদুস সালাম সেটাকে সম্ভব করে তুলেন। তিনি চমক দিতে পারেন। তাঁকে কেউ রাগতে দেখেননি।
আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী বহু আছে। সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান ছালামকে মানুষ চিনেন, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরকেও চিনেন। মানুষ তাঁদের ক্ষমতা দেখেছে, কর্মক্ষমতা, কর্মস্পৃহাও দেখেছে। এশিয়ান গ্রুপের সালামকে বাকি ৮ মাসের জন্য পরীক্ষা করে দেখলে খারাপ হতো না। শিক্ষিত, স্মাট, নির্লোভ আবদুস সালামের যে প্রতিভা, নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি আছে, তাতে চট্টগ্রামবাসী উপকৃত হতে পারে। যদিও কোনোদিন মুখ খুলে কিছু চাননি তিনি।
আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, ‘জনসেবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। একজন ভালো মানুষ তাঁর চারপাশে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারেন। এশিয়ান গ্রুপের আবদুস সালাম তেমন একজন মানুষ। তিনি জনপ্রতিনিধি হলে সাধারণ মানুষকে মায়ার জালে জড়াবেন, নিশ্চিত।’
জানতে চাইলে এশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘সত্যি বলতে, চট্টগ্রাম-৮ আসনে নির্বাচন করতে আমি আগ্রহী নই। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি বলেন, ভিন্ন কথা। এতটুকু বলতে পারি, এমপি হওয়ার জন্য আমি মরিয়া নই। আমি প্রকাশ্যে কর্মবীর নই। আমি নিরব কর্মবীর হতে চাই।’
অকাতরে দান করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এমন কাজ করি, যা লাখ লাখ মানুষ জানে না, জানবেও না। কিন্তু মানুষ উপকারভোগ করবে। আমি শোডাউনে বিশ্বাসী নই। আমি নিরবে কাজ করতে বিশ্বাসী। আমি যেখানে সুযোগ পাই সেটা করার চেষ্টা করি।’