রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

অনুবাদ বইয়ে আগ্রহ বেশি

প্রকাশিতঃ ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ | ২:০০ অপরাহ্ন

মুহাম্মদ আব্দুল আলী : যুগ যুগ ধরে মানুষ নিজস্ব ভাষার বাইরের সমাজ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। এটি জানার অন্যতম মাধ্যম অনুবাদ গ্রন্থ। দেশি লেখকদের পাশাপাশি বিদেশি লেখকদের বই বাঙালি পাঠকের কাছেও জনপ্রিয় হচ্ছে। এবার চট্টগ্রামে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অনেক অনুবাদের বই এসেছে।

চট্টগ্রামের বইমেলায় আসা অনুবাদ বইগুলোর মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে তরুণ অনুবাদক ও কথাসাহিত্যিক রিয়াজ মোরশেদ সায়েমের বেশ কয়েকটি বই। তাঁর অনূদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে আমেরিকান লেখক অস্টিন ক্লেওন’র ‘স্টিল লাইক অ্যান আর্টিস্ট’, বিশ্ববিখ্যাত ভিয়েতনামী লেখক থিক নাথ হান’র ‘হাউ টু লাভ’ ও ‘হাউ টু ওয়াক’, ভিক্টর ই. ফ্রাঙ্কল’র ‘ম্যানস সার্চ ফর মিনিং’, এরিক জর্জেনসন’র ‘দ্য আরমানাক অব নাভাল রাভিকান্ত’, ‘মুরাকামির হাফ ডজন গল্প’, ভারতীয় লেখক আবু তারিক হিজাজী’র ‘ইসলামি ইতিহাসের উজ্জ্বল নক্ষত্র’, লেইল লোনডেস’র ‘হাউ টু টক টু অ্যানিওয়ান’, জেনিফার ম্যাককার্টনি’র ‘দ্য লিটল বুক অব স্লথ ফিলোসফি’। এছাড়া ইফতেখার আবির অনূদিত থিক নাথ হান’র ‘হাউ টু রিল্যাক্স’। যার সবই অক্ষরবৃত্ত প্রকাশন থেকে প্রকাশিত।

চট্টগ্রামের বইমেলায় বিভিন্ন স্টল মালিক ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের লেখকদের লেখা বইয়ের পাশাপাশি অনুবাদের বইয়ের চাহিদা ভালো। কোনো কোনো স্টলে অনুবাদের বইগুলো সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায় শীর্ষে আছে বলেও জানান তারা।

গত মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বইমেলা ঘুরে অনুবাদ সাহিত্য নিয়ে পাঠকের আগ্রহের বিষয়টি চোখে পড়ে। অক্ষরবৃত্ত প্রকাশন থেকে একটি অনুবাদের বই কিনে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় কলেজ পড়ুয়া পার্থকে। কী বই কিনলেন?- জানতে চাইলে তিনি হাতে থাকা ব্যাগ থেকে বইটি বের করে বললেন, ‘থিক নাথ হান’র- হাউ টু লাভ (রিয়াজ মোরশেদ সায়মের অনুবাদ) কিনেছি। অনুবাদ বই আগেও পড়েছি, এখন দেখেশুনে নিতে হয়। কারণ আগে কিছু অনুবাদ পড়ে খুব বেশি ভালো লাগেনি। তাই এবার দেখে ও কিছু অংশ পড়েই নিচ্ছি। আরেকটি বই নেব, সেটি হলো- অস্টিন ক্লেওন’র ‘স্টিল লাইক অ্যান আর্টিস্ট’।’

কথা হয় অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ও প্রকাশক আনিস সুজনের সাথে। তিনি বলেন, ‘পাঠকদের মাঝে অনুবাদ গ্রন্থের চাহিদা অন্যান্য বই থেকেও বেশি দেখা যাচ্ছে এবার। অক্ষরবৃত্ত প্রকাশন থেকে এবার অনেক অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। যার প্রত্যেকটি অনুবাদই ঝরঝরে। অনুবাদ বইয়ের বিক্রিও ভালো। পাঠক কিন্তু দেখে-পড়েই কিনছেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও রিভিউ দিচ্ছেন তারা- এটি দেখে ভালো লাগে।’

অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনের স্টলের সামনে অটোগ্রাফ দিতে ব্যস্ত দেখা গেছে অনুবাদক ও কথাসাহিত্যিক রিয়াজ মোরশেদ সায়েমকে। এসময় কথা হয় তাঁর সাথে। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর বইমেলায় প্রচুর অনুবাদের বই বের হয়। এসব বইয়ের চাহিদাও কম না। মানুষ আসলে বিশ্ব সাহিত্য সম্পর্কে জানতে চায়। বিগত বছর অনূদিত বইয়ে সাড়া পেয়েছি, এবারও আমার কিছু অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। অনেক পাঠক আমার অনুবাদ বই পড়ে রিভিউও দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যা আরও বেশি করে অনুবাদ করার উৎসা পাচ্ছি, খুব ভালো লাগছে।’

তিনি বলেন, ‘পাঠক তো আবার সব অনুবাদ পড়বেন না। তাদের পছন্দের লেখক আছেন। এছাড়া দেখা গেছে, অনুবাদ বই দেখে ও কিছু অংশ পড়েই কিনছেন।’

প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে আবুল বাশার অনূদিত ফ্লোরিয়ান ফ্রেয়িস্টেটার’র ‘স্টিফেন হকিং ও তাঁর আবিষ্কৃত বিজ্ঞান’, আব্দুল্ল্যাহ আদিল মাহমুদ অনূদিত মালবা তাহান’র ‘দ্য ম্যান হু কাউন্টেড’, উচ্ছ্বাস তৌফিক অনূদিত পিটার অ্যাটকিনস’র ‘রসায়ন (সহজ পাঠ)’।

কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে জি এইচ হাবীব অনূদিত তরে ইয়নসন’র ‘লাতিন ভাষার কথা’, আফসানা বেগম অনূদিত আইজাক আসিমভ’র ‘রোমান সম্রাজ্য’ ও ‘রোমান প্রজাতন্ত্র’, আনিসুজ জামান অনূদিত আনহেলেস মাস্ত্রেত্তা’র ‘পরানটাকে উপরে নাও’, জিয়া হাশান অনূদিত এলি উইজেল’র ‘সেই রাত’, অসতবরণ ঘোষ অনূদিত মারিয়া মন্তেসরী’র ‘দ্য সিক্রেট অব চাউল্ডহুড’।

এবারের বইমেলা উপলক্ষে বাতিঘর থেকে প্রকাশিত আলভী আহমেদ অনূদিত ‘হারুকি মুরাকামি (সাক্ষাৎকার, বক্তৃতা ও স্মৃতিকথা)’, মোস্তাক শরীফ অনূদিত অ্যালিস ওয়াকার’র ‘দ্য কালার পার্পল’, অরুন সোম অনূদিত ভ্লাদিমির বগমোলভ’র ‘নাম ছিল তার ইভান’, জ্যোতির্ময় নন্দী অনূদিত পাওলো কোয়েলহো’র ‘ইলেভেন মিনিটস’, জামাল নাসের অনূদিত জন ক্রাকাওয়ার’র ‘ইনটু থিন এয়ার’, দিলওয়ার হাসান অনূদিত উমা ত্রিলোক’র ‘অমৃত-ইমরোজ’।

এছাড়াও ঐহিত্য প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে মাহমুদ মেনন অনূদিত জর্জ আরওয়েল’র ‘১৯৮৪’ এবং অনিন্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে অসীম দত্ত অনূদিত ডার্সি কোটস’র ‘সিক্রেটস্ ইন দ্য ডার্ক’ ও ‘দ্য হাউজ নেক্সট ডোর’।

ঐহিত্য প্রকাশনীর স্টলের বিপণন কর্মকর্তা হামিদ বলেন, ‘দেশি লেখকদের পাশাপাশি অনূদিত বইও ভালো বিক্রি হচ্ছে। সবমিলে মোটামুটি ভালো চাহিদা রয়েছে অনূদিত বইয়ের।’

কথাপ্রকাশ’র স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধি রাজু বলেন, ‘অন্যান্য বইয়ের মতো পাঠকরা খুঁজছেন অনুবাদও। এবারের মেলায় অনেকদিন দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে অনুবাদের বই। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, তরুণরাই বেশি কিনছেন, তাছাড়া বয়স্করাও খুঁজে নিচ্ছেন অনূদিত বই।’

অনিন্য প্রকাশ’র স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানান, এবার অনিন্য প্রকাশ থেকে অসীম দত্ত অনূদিতসহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। পাঠকদের মাধ্যে অনেককে দেখা যায়, স্টলে আসার সাথে সাথে অনুবাদ বই খুঁজছেন। বিক্রিও হচ্ছে ভালো।