সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

সিএমপির এক নারী এসআইয়ের বিরুদ্ধে নারী করকর্মকর্তাকে মারধরের সত্যতা মিলেছে

ঢাকায় থেকেও অন্যের সহায়তায় কর্মস্থলে উপস্থিতির তথ্যও প্রমাণিত

প্রকাশিতঃ ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ | ১১:৫০ অপরাহ্ন


একুশে প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত থাকাকালে ২০২২ সালের ২৭, ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি অনুমতি ছাড়াই ঢাকায় অবস্থান করছিলেন একজন নারী এসআই। কিন্তু অন্যের সহায়তায় ওই সময়ে সিএমপিতে উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন তিনি।

একজন নারী কর কর্মকর্তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে নেমে এমন জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছেন সিএমপির ডিসি (বন্দর) শাকিলা সুলতানা।

জানা যায়, ২০২২ সালের ২৮ জানুয়ারি রাতে ঢাকার একটি বাসায় কুড়িগ্রামের রৌমারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সোহেল উদ্দিন ও সিএমপির এক নারী এসআইয়ের বিরুদ্ধে একজন নারী কর কর্মকর্তাকে বদ্ধকক্ষে শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টা ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠে।

ভুক্তভোগী নারী কর কর্মকর্তার অভিযোগ, পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল উদ্দিন প্রেমের সম্পর্কের পর বারবার বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন ও প্রতারণা করে আসছেন। ২০২২ সালের ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর মালিবাগে সোহেলের ভাড়া বাসায় ওই নারী এসআইকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেললে তারা দুজন মিলে তাকে হত্যার চেষ্টা, ছুরিকাঘাত, মারধর করে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন।

এ ঘটনায় গত বছরের নভেম্বরে সোহেল ও নারী এসআইকে আসামি করে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগী ওই নারী কর কর্মকর্তা। আদালত মামলাটি এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করতে শাহজানপুর থানার ওসিকে আদেশ দেন, পাশাপাশি মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।

একই ঘটনায় নারী এসআইয়ের বিরুদ্ধে সিএমপি কমিশনারের কাছে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী নারী কর কর্মকর্তা। তার দাবি, সোহেল উদ্দিন অথবা অন্য কারও সহযোগিতায় নারী এসআই ঢাকায় উপস্থিত থেকেও চট্টগ্রামের কর্মস্থলে হাজির দেখিয়েছেন নিজেকে। যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সেই অভিযোগ তদন্তে নেমে কর্মস্থলে ফাঁকি দিয়ে অন্যের সহায়তায় নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করার প্রমাণ মিলেছে নারী এসআইয়ের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় ওই এসআই’র বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা, সিএমপির ডিসি (বন্দর) শাকিলা সুলতানা।

তবে নারী কর কর্মকর্তাকে নারী এসআই-এর মারধরের বিষয়টি তদন্তকারী কর্মকর্তা শাকিলা সুলতানা প্রতিবেদকের কাছে এড়িয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র একুশে পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছে যে, তদন্ত কর্মকর্তার জমা দেওয়া প্রতিবেদনে নারী কর কর্মকর্তাকে আলোচ্য নারী এসআইয়ের মারধরের ঘটনা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ আছে।

অভিযুক্ত নারী এসআই বর্তমানে নগরীর একটি থানায় কর্মরত আছেন। এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘২০১৮ সালে এএসপি সোহেলের সঙ্গে রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে আমার পরিচয়।’ অথচ এএসপি সোহেল একুশে পত্রিকাকে জানিয়েছেন, ‘তার সঙ্গে নারী এসআইয়ের পরিচয় ২০১৭ সালে।’

নারী এসআই বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে নারী কর কর্মকর্তা মামলা করেছেন। তিনি ভাবছেন আমার সঙ্গে সোহেলের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। অথচ সেদিন সোহেলের বাসায় আরও দুজন ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। তাদের কাউকে আসামি করা হয়নি।’

এক প্রশ্নের জবাবে নারী এসআই স্বীকার করে নেন, তারা দুজন (সোহেল ও নারী এসআই) আগে থেকে ওই বাসায় অবস্থান করছিলেন এবং নারী কর কর্মকর্তা প্রবেশের সময় তিনি পেছনের কক্ষে ছিলেন। নারী কর কর্মকর্তা আসার পর অন্য দুজন সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন।

নারী এসআই আরও বলেন, ‘সোহেলের সঙ্গে আমার পরিচয় সোহেলের বোনের মাধ্যমে।’ অথচ নারী এসআইয়ের স্বামীকে, সোহেল তার সংগঠনের ছোট ভাই বলে জানিয়েছিলেন এ প্রতিবেদককে। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী কিংবা বোনের বান্ধবী, সোহেলের বাসায় একা কী করছিলেন?

আবার পৃথক আলাপে সোহেল উদ্দিনও নারী এসআইকে তার সংগঠনের ছোট বোন হিসেবে পরিচয় দেন। অথচ নারী এসআই একুশে পত্রিকাকে পরে বলেছিলেন, ‘তাদের পরিচয় প্রথমে ফেসবুকে, পরে সারদা পুলিশ একাডেমিতে।’

অন্যদিকে ভুক্তভোগী নারী কর কর্মকর্তার মামলায় জামিন নেননি সিএমপির নারী এসআই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যারা পালিয়ে যায়, তারাই জামিন নেন। আমি তো পালিয়ে যাবো না।’

অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা শাকিলা সুলতানা (ডিসি বন্দর) একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি তদন্ত করে দ্রুত সিএমপি সদর দপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল করেছি। এবং তার (নারী এসআই) বিরুদ্ধে যেন বিভাগীয় মামলা করা হয় সেজন্য সুপারিশ করেছি। এখন কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটি ঊর্ধ্বতন মহলের এখতিয়ার।’

তিনি আরও বলেন, ‘নারী এসআই ওইসময় ঢাকায় অবস্থান করেও চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন বলে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করে নিয়েছেন। এটা যে কোনোভাবে তিনি করেছেন, হতে পারে কারও সহযোগিতায়। এটার প্রমাণ আমরা পেয়েছি।’