শনিবার, ৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১

২ কোটি ২৪ লাখ টাকার ছয়তলা ভবন ১৩ লাখে বিক্রি করল সিডিএ

প্রকাশিতঃ ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ | ৫:৫৮ অপরাহ্ন


এম কে মনির : চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানহাটে মাত্র ১৩ লাখ টাকায় একটি ছয়তলা ভবন বিক্রি করে দিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। অথচ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়াকফ এস্টেটের মালিকানাধীন ভবনটি ভেঙে ফেলার জন্য তাদেরকে ২ কোটি ২৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৫৩ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে সিডিএকে।

অভিযোগ উঠেছে, টেন্ডার গ্রহীতার সঙ্গে সিডিএ’র অসাধু কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে ছয়তলা ভবনটি একেবারে কমমূল্যে বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে।

জানা যায়, নগরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ‘দেওয়ান স্কয়ার’ নামের ছয়তলা বাণিজ্যিক ভবনটি অধিগ্রহণ করে সিডিএ; ভবনটি ওয়াকফ এস্টেটের মালিকানাধীন ছিল।

পরবর্তীতে চট্টগ্রাম গণপূর্ত উপ-বিভাগ-৪ এর দপ্তরে ভবনটির মূল্য নির্ধারণের জন্য আবেদন করে সিডিএ। সেই অনুযায়ী উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জহির রায়হান ভবনটির মূল্য নির্ধারণের লক্ষ্যে পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শনে ভবনটির কাঠামো, শ্রেণি নির্ধারণ ও ভবনে ব্যবহৃত মালামাল ও নির্মাণ সামগ্রি যাচাই-বাছাই করা হয়। ভবনের ২০.৫ শতাংশ ঠিকাদার লভ্যাংশ, ভ্যাট আইটি ও ওভারহেড চার্জ ধরা হয়। এছাড়াও ৭ শতাংশ অবচয় মূল্য ও ২০ শতাংশ নিন্মমানের কাজের জন্য কর্তন করা হয়।

পরে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ঢাকার সিডিউল রেট-২০২২ অনুসরণ করে ভবনটির মোট মূল্য ২ কোটি ২৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৫৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এই টাকা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়াকফ এস্টেটকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পরিশোধ করে সিডিএ।

পরে সিডিএ ভবনটি বিক্রি করতে দরপত্র আহ্বান করে ৩১ জানুয়ারি নিলামের দিন ঠিক করে। ওই দিন মাত্র ১৩ লাখ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা মোজাহের সওদাগর নামে একজন ঠিকাদারের কাছে ভবনটি বিক্রি করে দেয়া হয়।

অভিযোগ উঠেছে, অর্থ লোপাট করতে দরপত্র গ্রহীতার সঙ্গে যোগসাজশ করে সিডিএ’র অসাধু কর্মকর্তারা মাত্র ১৩ লাখে ৬ তলা ভবনটি বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে সরকার দুই কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে।

দেওয়ান স্কয়ার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ কবির একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে যোগসাজশে কম টাকায় ভবনটি বিক্রি করে দিয়েছেন সিডিএ’র এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান ও সিডিএ কর্মকর্তা প্রকৌশলী সুমন। এখানে বড় ধরণের দুর্নীতি হয়েছে। অবিলম্বে টেন্ডার বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করার দাবি জানাচ্ছি।’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান। তিনি একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে দুর্নীতি হয়নি। কেননা ২৭টি সিডিউল বিক্রি হয়েছে। তার মধ্যে ১২ জন দরপত্র জমা দিয়েছেন। প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে ওপেন টেন্ডার হয়েছে। সেখানে সর্বোচ্চ দরদাতা ছিল ১৩ লাখ টাকার। তাহলে আমরা তো সর্বোচ্চ দরদাতাকেই দেব। এটাই তো নিয়ম।’

এসময় ছয়তলা ভবনটিকে ছোট আখ্যা দিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘ভবনটি ছোট। আমরা এর জন্য ওয়াকফ এস্টেটকে ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছি। কিন্তু টেন্ডারে সর্বোচ্চ দর যা উঠেছে, আমরা তাতেই দিয়েছি।’ প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে গত বৃহস্পতিবার ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে সেটি উচ্ছেদও করেছি। আমাদের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি।’

এ বিষয়ে সিডিএ’র মুখপাত্র ও প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাকে কেন ফোন করতে হবে? খালি আমাকে কেন ফোন করেন? আমি তো এতকিছু জানবো না।’