সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

আমিরাতে ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে যেভাবে বাংলাদেশিদের বিপদে ফেলছেন স্বদেশিরাই

প্রকাশিতঃ ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ | ৬:৫০ অপরাহ্ন


শরীফুল রুকন : সংযুক্ত আরব আমিরাতে ব্যবসার জন্য ‘পার্টনার ভিসা’ নেওয়ার পর অন্যদের চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণায় জড়িয়ে পড়ছেন কিছু বাংলাদেশি; এই অভিনব প্রতারণায় তাদের সহযোগি হচ্ছেন আমিরাতেরই কিছু নাগরিক।

প্রতারণার অপকৌশলটি হচ্ছে এরকম- আরব আমিরাতে ‘কাজের ভিসা’ বের করার জন্য প্রথমে খোলা হয় নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের ৫১ শতাংশ মালিকানায় রাখতে হয় আরব আমিরাতের নাগরিককে। বাকি ৪৯ শতাংশের মালিক হতে পারেন প্রবাসী এক বা একাধিক বাংলাদেশি।

নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যৌথ ব্যবসার নামে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান চালু করতে খরচ হয় সবমিলে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য কর্মচারী প্রয়োজন জানিয়ে বের করা হয় একের পর এক চাকরির ভিসা বা এমপ্লয়মেন্ট ভিসা। কেউ বের করেন ২০-৫০টি ভিসা, আবার কেউ শত শত। এরপর ওই ভিসাগুলোর প্রতিটি বিক্রি করা হয় প্রায় ২ লাখ টাকায়।

অথচ চাকরির ভিসা বিক্রি করার সুযোগ আইনত নেই। তাছাড়া এভাবে ভিসা বিক্রি করা নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজের সুযোগই নেই। তবুও তারা মাসের পর মাস তাদের কর্মচারীদের বেতন দেয় ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে! কিন্তু কীভাবে?

আরব আমিরাত থেকে ফিরে আসা চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বাসিন্দা আহমেদ কবির (ছদ্মনাম) নিজের অভিজ্ঞতা থেকে একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে গত মে মাসে আমি দুবাই গিয়েছিলাম। ট্যুরিস্ট ভিসার মেয়াদ শেষে দুবাইয়ে অবস্থান করার জন্য কাজের ভিসার দরকার ছিল আমার। সেজন্য জুলাই মাসে আমাদের গ্রামের একজনের আংশিক মালিকানাধীন একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে (ভবন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে) চাকরির ভিসা নিয়েছিলাম সাড়ে ৭ হাজার দিরহাম (১ লাখ ৮০ হাজার টাকা) দিয়ে। কিন্তু ভিসা নেয়া ওই প্রতিষ্ঠানে আমি চাকরি করতে পারিনি, তারা কাজ দেবে দেবে করেও দিচ্ছিল না। পরে জানতে পারি, কাজ নেয়া বা আমাদের দেয়ার ইচ্ছাই তাদের নেই। তারা শুধু ভিসা বিক্রি করে। এলাকার পরিচিতদের মাধ্যমে বাইরে যখন যে কাজ পেতাম, সেটাই করতাম।’

‘কিন্তু আরব আমিরাতের সরকার তো জানে, আমি ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি এবং ওই প্রতিষ্ঠান আমাকে মাসে মাসে বেতনও দেয়। যদিও মাসিক বেতন দেয়ার বিষয়টি ছিল ভুয়া। আমার নিজের বেতন আমাকেই যোগাড় করতে হতো, নির্মাণাধীন বিভিন্ন ভবনে শ্রমিকের কাজ করে। এরপর মাসের শেষের দিকে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বেতনের টাকা দিয়ে আসি, যেন টাকাগুলো আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতন হিসাবে জমা দেয়া হয়। এজন্য ভুয়া প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশি মালিককে অতিরিক্ত ১৫ দিরহাম (৪১৮ টাকা) দিতে হত, ব্যাংকের ফি ও প্রসেসিং বাবদ।’

‘হঠাৎ ২৫ অক্টোবর শুনি, নতুন করে আর কাজের ভিসা বের করতে না পারায় ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। ভুয়া প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হওয়া মানে ব্যাংকের মাধ্যমে আমার আনুষ্ঠানিক বেতনও বন্ধ। আমাকে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যেতে বলা হয়। কিন্তু বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠান থেকে অব্যাহতি নিতে চাইলেও সরকারি নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়, সেখানে খরচ আছে। এরপর আরেকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিতে হলে ৩৮শ’ থেকে ৪২শ’ দিরহাম পর্যন্ত খরচ আছে। এত জটিলতা তৈরির পাশাপাশি সেখানে ঠিকমতো কাজও পাচ্ছিলাম না। তাই নভেম্বরে দেশে চলে আসি।’ বলেন আহমেদ কবির।

তিনি আরও বলেন, ‘কাজের ভিসার জন্য আমার কাছ থেকে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক সাড়ে ৭ হাজার দিরহাম নিলেও তাদের খরচ হয় ৫৩শ’ দিরহামের (১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা) মতো। বাকি ২৩শ’ দিরহাম (৬৪ হাজার টাকা) ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ওই মালিকের (প্রবাসী বাংলাদেশি) লাভ। এই অবৈধ লাভের জন্যই তারা আমার মতো শত শত বাংলাদেশির সঙ্গে প্রতারণা করছে, বিপদে ফেলছে।’

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আহমেদ কবির বলেন, ‘আমি দেখেছি, আরও অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি টাকার বিনিময়ে আরব আমিরাতের একেককে ধরে যৌথ ব্যবসার নামে লাইসেন্স বানিয়ে ফেলছেন। টাকা দিয়ে লাইসেন্স করে দায় দায়িত্ব সব ওই বাংলাদেশিরা নিয়ে ফেলেন। এরপর তারাই প্রতিষ্ঠানের মালিক বনে যান। দোকান একটা ভাড়া নিয়ে চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে পড়েন। পরে আমিরাত সরকারকে জানান, আমার এই কাজ, সেই কাজ, এত কাজের মানুষ লাগবে। এভাবে ঘাটে ঘাটে টাকা খরচ করে তারা সহজে কাজের ভিসা বের করে ফেলতে পারে। এত চেক করে না। কড়াকড়ি নেই।’

‘ভিসাগুলো চড়া দামে বিক্রির পর অনেকেই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ফেলছেন। তখন ওই ২০-৫০ জন মানুষ বেকার হয়ে পড়েন, বেকায়দায় পড়ে যান। তবে বিপদের ভয়ে তারা কোথাও অভিযোগ করেন না। ফলে প্রশাসনও ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মালিককে কিছু করে না। তারা সরকারকে লিখিত জানায়, অর্থ সংকটে আমি ব্যবসা চালাতে পারছি না। তাই বন্ধ করে দিচ্ছি। সরকারও এটা মেনে নিতে বাধ্য হয়।’ যোগ করেন আহমেদ কবির।

আরও চারজন আরব আমিরাত প্রবাসীর সঙ্গে কথা বলে এই অভিনব প্রতারণা নিয়ে আরও তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন, রফিকুল ইসলাম একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘ট্যুরিস্ট ভিসায় হাজার হাজার মানুষ দুবাই এসে কাজের সন্ধানে নেমেছেন। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রমরমা চাকরি-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন কিছু বাংলাদেশি। জেনে বা না জেনে ভুয়া প্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে তাদেরকে সহযোগিতা দেয় আমিরাতের নাগরিকরা। অবশ্য এজন্য আরবরা টাকাও পায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান চালু করে এই ধরনের প্রতারণা, অবৈধ কর্মকাণ্ড দুবাইয়ে বেশি। দুবাইয়ে বসবাস করা বেশিরভাগ প্রবাসীর কাছে এরকম দুয়েকটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের তথ্য থাকবে। কিন্তু বিপদে পড়ার ভয়ে কেউ এ বিষয়ে কথা বলে না বা অভিযোগ করে না। তাছাড়া অনেক নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান তাদের কথিত কর্মীদের সেলারি অ্যাকাউন্টের এটিএম কার্ড নিজেদের কাছে রেখে দেয়। মাস শেষে ওই অ্যাকাউন্টে তারা দিরহাম জমা দেয়, আবার নিজেদের হাতে থাকা ওই কার্ড নিয়ে দিরহাম তুলে নেয়। সরকার জানল, শ্রমিক-কর্মচারী বেতন পেয়েছে। আসলে পায়নি। তারা দুমুঠো ভাত জোটাতে পথে পথে কাজ খুঁজছে।’

আবুধাবি প্রবাসী মোহাম্মদ শাহজাহান একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘একটা লাইসেন্স নিতে ২০ হাজার দিরহাম খরচ আছে। এরপর দোকান ভাড়া বাবদ খরচ আছে। বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স আছে। ট্রেডিং লাইসেন্সে সবচেয়ে বেশি মানুষ নিতে পারে। তবে প্রতারকরা সাধারণত এলএলসি (লিমিটেড লায়াবিলিটি কোম্পানি) লাইসেন্স নিয়ে থাকে। এলএলসি লাইসেন্স নিলে আরব আমিরাতের সব প্রদেশে দোকান নেয়া যায়। প্রতারকরা বিভিন্ন প্রদেশে একটা করে অফিস নিয়ে ভিসার ব্যবসা করে, কাউকে আবুধাবিতে নিচ্ছে, কাউকে দুবাই। কিন্তু কোনো কাজ দিতে পারে না। তারা সংঘবদ্ধ চক্র। এসব চক্রের মধ্যে ভারতীয় ও পাকিস্তানিরাও আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এলএলসি লাইসেন্সে ৫০ জন শেয়ার হোল্ডার রাখা যায়। এই সুযোগে প্রতারকদের কেউ কেউ সহজ সরল মানুষকেও পার্টনার ভিসা লাগিয়ে দেয়। পরে পার্টনার ভিসা বাতিল করতে চাইলে বহু টাকা খরচ হয়, ঝামেলাও অনেক।’

সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশিদের জন্য কর্মী ভিসা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু ভিজিট ভিসায় আমিরাতে অবস্থান করা লোকদের বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মী হিসেবে সাময়িকভাবে ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ দেয় দেশটি। এ সুযোগকে প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে এক শ্রেণীর প্রবাসী।

২০১৭ সালে অভিবাসনবিষয়ক গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বিদেশে অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রায় ৫১ শতাংশই প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হন। এদের মধ্যে ৩২ শতাংশ বিদেশে গিয়ে নানা দুর্ভোগ পোহান। প্রতারিত হওয়ার ঘটনা ওই সময়ের চেয়ে কমেছে, সে কথা বলা যাবে না। সাম্প্রতিক সময়ে আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রতারিত হয়ে শ্রমিকদের দেশে ফেরার ঘটনা প্রমাণ করে যে প্রতারণা কমেনি।

যেভাবে বের করা হয় কাজের ভিসা

সংযুক্ত আরব আমিরাতের মানবসম্পদ ও এমিরেটাইজেশন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট পর্যালোচনা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আরব আমিরাতে কোনো কোম্পানির বিদেশি কর্মী প্রয়োজন হলে তাদেরকে কাজের ভিসায় (এমপ্লয়মেন্ট ভিসা) বিদেশ থেকে কর্মী নিয়ে আসতে হয়। ভিসার পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দায়িত্ব নিয়োগদাতা কোম্পানির। ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট, ইকামার পুরো খরচ কোম্পানিকে বহন করতে হয়।

কাজের ভিসা স্পন্সরশিপের আবেদনের জন্য ইংরেজিতে নিয়োগ চুক্তির খসড়া তৈরি করতে হয়। চুক্তিতে বেতন, থাকা-খাওয়া, সুবিধাসহ কাজের শর্তাবলির যাবতীয় তথ্য যুক্ত করতে হয়। তারপর মানবসম্পদ ও এমিরেটাইজেশন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য কর্মসংস্থান চুক্তিপত্র, যাবতীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হয়। অনুমোদনের প্রেক্ষিতে ৩০ দিনের ‘এন্ট্রি পারমিট ভিসা’ জারি করে মন্ত্রণালয়। এন্ট্রি পারমিট ভিসার জন্য কোম্পানিকে ২৫০ দিরহাম পরিশোধ করতে হয়।

৩০ দিন মেয়াদি এই এন্ট্রি পারমিট ভিসা দিয়ে দুবাইয়ে প্রবেশ করার পর নিয়োগকর্তা তার কর্মীর জন্য একটি মেডিকেল পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করেন এবং জেনারেল ডিরেক্টরেট অব রেসিডেন্সি অ্যান্ড ফরেনার্স অ্যাফেয়ার্স দুবাইয়ে (জিডিআরএফএ) কর্মীর পক্ষে চাকরির জন্য একটি রেসিডেন্স কার্ডের জন্য আবেদন করেন। ৬০ দিনের মধ্যে এই কাজটি করতে হয়।

এরপর জিডিআরএফএ’তে সব নথিপত্র নিয়ে গেলে পাসপোর্টে আবাসিক ভিসা স্ট্যাম্প করে দেয়া হয়। এছাড়া নিয়োগকর্তা তার কর্মীর জন্য একটি শ্রম কার্ড এবং এমিরেটস আইডি কার্ড পাওয়ার ব্যবস্থা করেন। দুই বছর মেয়াদি ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট কার্ডের জন্য কোম্পানিকে সাধারণত ৩ হাজার দিরহাম পরিশোধ করতে হয়। দুবাইয়ে শ্রমিকের তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে। ক্যাটাগরি ভেদে টাকার পরিমাণ কম-বেশি হয়।

অর্থ্যাৎ এমপ্লয়মেন্ট ভিসা পেতে হলে লাইসেন্সধারী কোম্পানিকে আবেদন করতে হয়। তাহলে সেখানে গিয়ে কেন অনেকেই সেই কোম্পানিতে চাকরি পায় না? কারণ কিছু অসাধু প্রবাসী এসব লাইসেন্স ব্যবহার করে এমপ্লয়মেন্ট ভিসা স্পন্সর করে অসংখ্য লোক দেশ থেকে নিয়ে যায়। পরে এসব লোকদের তারা আর চাকরি দেন না। যা উপরের কেস স্টাডিতেও উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতারণা এড়ানোর উপায়

বেসরকারি খাতের জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘কাজের ভিসা নেওয়ার আগেই এজেন্সির কাছে চুক্তিপত্রটি চাইতে হবে। সেখানে সব লেখা থাকে। এটি দিতে এজেন্সিগুলো অবশ্যই বাধ্য। যদি এটি দিতে না চায় তাহলে বুঝতে হবে, কোনো সমস্যা আছে বা কিছু লুকাচ্ছে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, কাজের চুক্তিপত্রটি সাধারণত ৬ পৃষ্ঠার হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক এজেন্সি শুধু এক পৃষ্ঠা দেখিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। এক্ষেত্রে যা করতে হবে- নথিটির উপর একটি ট্রানজেকশন নাম্বার, কোম্পানি কোড, পো-বক্স নাম্বার দেয়া থাকে। এই নাম্বার দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মানবসম্পদ ও এমিরেটাইজেশন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে পুরো চুক্তিপত্রটি বের করে নিতে হবে। এবং সেখানে থাকা-খাওয়া, বেতনসহ যাবতীয় শর্তাবলি পড়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ভিসার আগে একটি টেম্পোরারি ওয়ার্ক পারমিট কার্ড বের হয়। সেখানে ওয়ার্ক পারমিট নাম্বার দেয়া থাকে, এই নাম্বার দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মানবসম্পদ ও এমিরেটাইজেশন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে ওয়ার্ক পারমিট কার্ডটি ভেরিফাই করে নিতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কোম্পানি ভেরিফিকেশন। নামসর্বস্ব কোম্পানির প্রতারণা থেকে রক্ষায় কোম্পানির কোড দিয়ে কোম্পানির ক্যাটাগরি, কয়জন পার্টনারশিপে লাইসেন্সটি প্রতিষ্ঠিত, কত বছর ধরে ব্যবসা করছে; সেসব তথ্য জেনে নিতে হবে।

এ বিষয়ে রামরু’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সি আর আবরার একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আরব আমিরাতে ভ্রমণে যাওয়া অনেকেই ভিসার ধরণ পরিবর্তন করে কাজের ভিসা লাগাচ্ছেন। তাই বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের নিয়ে ভবিষ্যতে ঝুঁকি বাড়তে পারে। এছাড়া কিছু বাংলাদেশির প্রতারণামূলক কাজের কারণে শ্রমবাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ার শঙ্কা আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতারকরা সবসময় আইনের আওতায় আসেন না। কারণ প্রতারণার শিকার অভিবাসীরা চাকরির সঙ্গে সঙ্গে বসবাসের অধিকারও হারান। থাকার অনুমতি না থাকায় তারা অভিযোগ করতে পারেন না। এছাড়া চাকরি না থাকলে মামলার খরচও তারা মেটাতে পারেন না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা দিন দিন বাড়ছেই। এসব নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু কতজন শ্রমিক বিদেশে যাচ্ছেন এবং রেমিট্যান্স প্রাপ্তিকেই মূল বিষয় হিসেবে গণ্য করলে হবে না।’

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘অভিবাসী আইন শ্রমিকদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য কতটুক উপযোগী? একজন শ্রমিক বিদেশে যাওয়ার কিছুদিন পর ফিরে আসছেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন, কাজের উপযোগী পরিবেশ নেই। কিন্তু বিদেশে নিয়ে যাওয়ার আগে বলা হয়েছে ভিন্ন কথা। প্রকৃতপক্ষে তিনি বিদেশে যাওয়ার আগে দেশেই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাই একজন শ্রমিক যাওয়ার আগে দেশে এবং বিদেশে কোথায় কীভাবে আইন প্রয়োগ হবে, সেটি আরও স্পষ্ট করতে হবে।’

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘অভিবাসীরা প্রতারিত হলেও, প্রমাণের অভাবে সবসময় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না। তারা বিদেশে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গিয়েও অভিযোগ করেন না। মিডিয়া ও ফেসবুকে নানা ধরনের প্রতারণা নিয়ে অনেকে কথা বলেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেন না। ভুক্তভোগীরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে দায়ীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’