দক্ষিণ জেলা যুবলীগের শীর্ষ পদে জাতীয়তাবাদী ভূত!


একুশে প্রতিবেদক : বহু জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সম্মেলন অনুষ্ঠানের সাড়ে ৫ মাস পর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। গত বুধবার ঘোষিত কমিটির সভাপতি করা হয় দক্ষিণ জেলা যুবলীগের বিদায়ী কমিটির সহ সভাপতি দিদারুল ইসলাম দিদারকে ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র জহুরুল ইসলাম জহুরকে।

অভিযোগ উঠেছে, একসময় জাতীয়তাবাদী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত বিএনপি ঘরানার জহুরুল ইসলাম জহুরকেই যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বোয়ালখালী পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক।

জানা যায়, শিশু-কিশোরদের জাতীয়তাবাদী বোধে জাগ্রত করতে ‘পূর্বাশার আলো’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিএনপি ঘরানার এ সংগঠনের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময় বিএনপির মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের অতিথি করা হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর প্রিয়া কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত পূর্বাশার আলো’র বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে প্রধান অতিথি করা হয়। সেই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন জহুরুল ইসলাম জহুর এবং তিনিই ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে অতিথি করা হয় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত দস্তগীর চৌধুরীকেও।

অনুষ্ঠানে মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ‘পূর্বাশার আলো’র বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং শিশু-কিশোরদের জাতীয়তাবাদী বোধে আরও বেশি জাগ্রত করার আহ্বান জানান।

দক্ষিণ জেলা যুবলীগের কমিটি ঘোষণার পর সেই বিষয়গুলো নতুন করে ফের সামনে চলে এসেছে এবং তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন।

এ বিষয়ে দুঃখ ও উষ্মা প্রকাশ করে চট্টগ্রামের রাজনীতি সচেতনরা বলছেন, দীর্ঘ ১২ বছর পর বহু প্রত্যাশিত দক্ষিণ জেলা যুবলীগের যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে সেটির শীর্ষ পদে জাতীয়তাবাদী ভূত! এছাড়াও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের দিয়ে পূরণ করা হয়েছে যুবলীগের কমিটি।

একই সাথে প্রশ্ন উঠেছে, যুব সংগঠকদের কি এতই আকাল পড়েছে যে, আওয়ামী লীগের পদে থাকা লোকজন ও জাতীয়তাবাদী চেতনায় বেড়ে উঠা লোকদের ধরে এনে যুবলীগের কমিটি করতে হবে?

এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী সংগঠনের সাথে জড়িত থাকা ও বিএনপির মন্ত্রী-এমপিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে সেই সংগঠনের কর্মসূচি পালনের বিষয়টি আমি জানতাম না। আপনার কাছে মাত্র জানলাম। যেহেতু বিষয়টি আমি জানি না, তাই এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে এ প্রসঙ্গে কোনো তথ্যপ্রমাণ পেলে আমি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করবো।’

জাতীয়তাবাদী সংগঠনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জহুর একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘স্কুলজীবন থেকেই আমি আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। পরিবারের সকলেই আওয়ামী ঘরানার হওয়ায় মনে প্রাণে আওয়ামী লীগকেই ভালোবেসেছি। যার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মেয়র হয়েছি। উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছি। জাতীয়তাবাদী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থাকার প্রশ্নই ওঠে না।’

বিএনপির মন্ত্রী-এমপিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে সেই সংগঠনের কর্মসূচি পালনের বিষয়ে জহুর বলেন, ‘কোনো সামাজিক সংগঠন তাদের অনুষ্ঠানে যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তাদের নেতাকর্মীদের অতিথি করে। সেসময় সংগঠনটির বিভিন্ন চাহিদা থেকেই বিএনপির তৎকালীন মন্ত্রী মীর নাছিরকে অতিথি করা হয়েছিল। তাদের অনুরোধে আমিও অতিথি হয়েছিলাম। আর সামাজিক সংগঠনের অনুষ্ঠানে যদি বিএনপির কাউকে অতিথি করা হয় আমি কি সেখান থেকে উঠে যেতে পারবো? একজন মন্ত্রীর সামনে কি সেটা সম্ভব?’

‘আর পূর্বাশার আলো একটি সামাজিক সংগঠন। আমাকে সংগঠনটির উপদেষ্টা করা হয়েছে। এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমি নই। আমাকে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে বিষয়টি অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। তাই অন্য কিছু না পেয়ে এই বিষয়টি নিয়ে কুৎসা রটাচ্ছে।’