জোবায়েদ ইবনে শাহাদাত : বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. ইঞ্জিনিয়ার রশীদ আহমেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সাংসদ আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর বিরুদ্ধে।
রোববার (৩০ অক্টোবর) চট্টগ্রামের ভাটিয়ারি গলফ ক্লাব অডিটোরিয়ামে আইআইইউসি’র ২৫ বছরপূর্তি ও ১১তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের সাধারণ সভার দ্বিতীয় অধিবেশনে আরব বিশ্বের অতিথিদের সামনেই ড. ইঞ্জিনিয়ার রশীদ আহমেদকে অপদস্ত করা হয় বলে অভিযোগ। এমপি নদভীর উত্তেজিত স্বরে দুর্ব্যবহারে একপর্যায়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন তিনি।
জানা যায়, কোটি টাকারও বেশি খরচ করে আয়োজন করা হয় আইআইইউসি’র ২৫ বছরপূর্তির অনুষ্ঠান। যেখানে উপস্থিত ছিলেন সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ওমান, তুরস্ক, মিশরসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫০ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা; ওই দেশগুলো আইআইইউসিকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে আসছিল।
সাধারণ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের রিপোর্ট উপস্থাপনের জন্য সময় বরাদ্দ রাখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও বিষয়টি উপস্থাপনের দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও আইআইইউসি ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান ড. ইঞ্জিনিয়ার রশীদ আহমেদকে।
সভায় উপস্থিত একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানান, তিনি (রশীদ আহমেদ) যখন বার্ষিক আয়-ব্যয় রিপোর্ট উপস্থাপন করা শুরু করেন তখন আইআইইউসি ট্রাস্টের জেনারেল এসেম্বলির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ আব্দুল আজিজ আল মোসলেহ তার কাছ থেকে এই আয়-ব্যয় রিপোর্টের অডিট হয়েছে কি-না, এই রিপোর্ট কোন অর্থবছরের, এ ধরনের নানা প্রশ্ন করতে থাকেন। এসময় ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান অডিট সংক্রান্ত অসংগতির কথা বলতে চাইলে তাকে চুপ করিয়ে দেন নদভী।
সজ্জন প্রকৌশলী নেতা হিসেবে পরিচিত ড. ইঞ্জিনিয়ার রশীদ আহমেদের ওপর স্বভাবসুলভ রাগ দেখিয়ে উত্তেজিত কন্ঠে নদভী বলেন, ‘আপনাকে আর কিছু বলতে হবে না। আপনি যান, বসেন!’ আরব বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে আসা অতিথিদের সামনে অপমানিত হওয়ায় তাৎক্ষণিক সভাস্থল ত্যাগ করেন ড. রশীদ। এমনকি ‘লাঞ্চ পার্টি’র আয়োজনেও তাকে আর দেখা যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে সভায় উপস্থিত একজন ব্যক্তি একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে ড. ইঞ্জিনিয়ার রশীদ আহমেদের কোনো দোষ ছিল না। নদভী নিয়ন্ত্রিত আইআইইউসিতে সাম্প্রতিক অর্থবছরের কোনো পূর্ণাঙ্গ অডিটই সম্পন্ন হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অডিটর নিয়োগের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। অথচ ইঞ্জিনিয়ার রশীদ আহমেদ বারবার অডিট সম্পন্ন করতে তাগাদা দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু নদভী সাহেব এসব বিষয়ে কর্ণপাত করেননি। এখন যদি তার কাছে এসবের হিসাব চাওয়া হয়, তাহলে তিনি কীভাবে দেবেন? এটিই তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নদভী সাহেব তাকে বলতেই দিলেন না, উল্টো ভরা মজলিসে অপদস্ত করলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ড. ইঞ্জিনিয়ার রশীদ আহমেদ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত। বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠান পরিচলনার অভিজ্ঞতা তার রয়েছে। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যানের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অসংগতি, অনিয়ম কিংবা দায়িত্বহীনতার অভিযোগ পর্যন্ত উঠেনি। তার মত অভিজ্ঞতা ট্রাস্টি চেয়ারম্যানেরও (নদভী) নেই। কিন্তু তার সাথে নদভী সাহেবের এমন ব্যবহার কাম্য ছিল না।’
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ড. ইঞ্জিনিয়ার রশীদ আহমেদ বিস্তারিত বলতে চাননি। তবে তিনি ঘটনাটি অস্বীকারও করেননি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইআইইউসি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, ‘এমন কিছুই হয়নি, এসব ভিত্তিহীন কথা কে বলেছে? তিনি (ড. রশীদ) যখন অতিথিদের বিষয়টি নিয়ে বলছিলেন, তখন তিনি আর কি বলবেন বুঝতে পারছিলেন না। তখন তাকে বলা হয়েছে, আর বলতে হবে না, ওনারা বুঝে গেছেন। ব্যস এতোটুকুই। এখানে অন্য কোনো ঘটনাই ঘটেনি।’