সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

ফজলে করিমের বাবার কবর জিয়ারত, মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনা

প্রকাশিতঃ ২১ অক্টোবর ২০২২ | ৭:২৪ অপরাহ্ন

একুশে প্রতিবেদক : সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধী দলীয় নেতা এ কে এম ফজলুল কবির চৌধুরীর কবর জিয়ারত করা ও শ্রদ্ধা জানানোর ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না এখনো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী হয়ে যুদ্ধাপরাধের তালিকায় নাম আসা একজন বিতর্কিত ব্যক্তির কবর জিয়ারত করতে তিনি পারেন না। এটা মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার সাথে বেঈমানি ও তাদের অন্তরে ভয়াবহ আঘাতের শামিল বলেও মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন।

এর আগে গত ১১ অক্টোবর যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তালিকাভুক্ত পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দাবিদার এ কে এম ফজলুল কবির চৌধুরীর কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা জানাতে চট্টগ্রামের রাউজানের গহিরা যান মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তাকে স্বাগত জানান ফজলুল কবির চৌধুরীর সন্তান, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি।

গাড়ি থেকে নেমে সরাসরি গহিরার বক্স আলী চৌধুরীর বাড়ির কম্পাউন্ডে অবস্থিত পারিবারিক কবরস্থানে শায়িত এ কে এম ফজলুল কবির চৌধুরীর কবরে ছুটে যান মন্ত্রী। প্রথমে তিনি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং দাঁড়িয়ে কবর জিয়ারত ও মোনাজাত করেন। এসময় এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, রাউজান পৌরসভার মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, উপজেলা ও থানা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগ উঠেছে, শুধু ফজলুল কবির চৌধুরীর মরদেহ নয়, পারিবারিক ওই কবরস্থানে শায়িত আছেন তার ছোটভাই পাকিস্তানের স্পীকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এ কে এম ফজলুল কাদের চৌধুরী, তার সন্তান যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মরদেহও।

সচেতন মহল বলছেন, ফজলুল কবির চৌধুরীর কবর জিয়ারত করতে গিয়ে প্রকারান্তরে যুদ্ধাপরাধী পিতাপুত্রের কবরও জেয়ারত করেছেন মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী, যা অকল্পনীয় ও দুঃখজনক।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমেদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রীর সেখানে যাওয়ার আগে মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে অবহিত করার দরকার ছিল। ওই কবরস্থানে রাজাকারের তালিকায় নাম রয়েছে এমন ব্যক্তি শায়িত আছেন।’ আগামীকাল মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত কথা বলবেন বলেও জানান তিনি।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘সেদিন মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স উদ্বোধনের জন্যই আমি সেখানে গিয়েছিলাম। এমপি সাহেব (ফজলে করিম চৌধুরী) আমাকে এক কাপ চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পরই তাদের পারিবারিক কবরস্থান জিয়ারত করা হয়। সত্যি বলতে ওখানে যে তাদের (যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার) কবর ছিল আমি জানতাম না। বিষয়টা আমি পরে জানতে পেরেছি, অ্যান্ড আই এম সরি ফর দ্যাট (আমি এজন্য দুঃখিত)।’

মুক্তিযুদ্ধের ৪৮ বছর পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ১০ হাজার ৭৮৯ জন যুদ্ধাপরাধীর নামের তালিকা প্রচার করে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। ওই তালিকার ২০৩ নম্বরে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে নাম রয়েছে আলোচ্য একেএম ফজলুল কবির চৌধুরীর। তালিকার ১৯৯ নম্বরে রয়েছে তার ছোটভাই এ কে এম ফজলুল কাদের চৌধুরীর।

ওই সময় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটি প্রথম পর্যায়ের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। পরে ক্রমান্বয়ে আরও তালিকা প্রকাশ করা হবে। তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসসহ স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল বলেও উল্লেখ করা হয়।

তবে প্রকাশিত তালিকায় রাজাকার ছিলেন না এমন অনেক ব্যক্তির নাম আসার অভিযোগ ওঠে। এমনকি অনেক মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের নামও ওই তালিকায় এসেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। তালিকা প্রকাশের পরপরই এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয় এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তালিকা স্থগিত করা হয় এবং নতুন করে যুদ্ধাপরাধের তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, তালিকা প্রকাশের পর এ কে এম ফজলুল কবির চৌধুরীর পরিবার থেকে দাবি করা হয় তিনি যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। ষড়যন্ত্র করে তার নাম যুদ্ধাপরাধের তালিকায় ঢুকানো হয়েছে।

এদিকে, ঘটনার প্রায় দুই বছর পর গত ৯ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক বিতর্ক অনুষ্ঠানে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন মন্ত্রী; বলেন, নতুন করে আর যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না। তবে প্রকাশিত তালিকায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার পক্ষে আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানান মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী।