আইআইইউসিতে ‘নদভী-নিয়মে’ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের হিড়িক!


জোবায়েদ ইবনে শাহাদাত : নুসরাত জাহান। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি)- থেকে এলএলবি (অনার্স) সম্পন্ন করেন তিনি। অভিযোগ আছে, আইআইইউসিতে এলএলবি পড়ার সময় একটি পরীক্ষায় অসদুপায়ের দায়ে একটি বিষয়ে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন নুসরাত; পরে আইআইইউসিকে বাদ দিয়ে চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলএম করেন তিনি।

সেই নুসরাতকে ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এডহক ভিত্তিতে আইন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে আইআইইউসি কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষায় অসদুপায়ের দায়ে নুসরাতকে এক বিষয়ে বহিষ্কার করার তথ্য আইআইইউসি’র আইন বিভাগের একাধিক শিক্ষক একুশে পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন; তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নুসরাত জাহান।

এডহক ভিত্তিতে আইন বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ পাওয়া চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বাসিন্দা নুসরাত জাহানসহ মোট তিনজনকে এবার স্থায়ী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে আইআইইউসিতে তোড়জোড় চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এজন্য পদে পদে অনিয়ম করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগের চাহিদাপত্র প্রয়োজন হয়। সেই চাহিদাপত্র প্রথমে একাডেমিক কাউন্সিল এবং পরবর্তীতে সিন্ডিকেট মিটিংয়ে পাশ হতে হবে। দুই ধাপে চাহিদাপত্র পাশ হলে দেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে চাহিদাপত্র অনুযায়ী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) নীতিমালা অনুসরণ করে শুরু করতে হয় নিয়োগ প্রক্রিয়া।

তবে এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সাম্প্রতিক সময়ে আইআইইউসিতে দুই শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অবৈধ পন্থায় গণহারে নিয়োগ পাওয়া অনেকের বাড়ি আইআইইউসির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম-১৫ আসনের (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া) সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর সংসদীয় এলাকায়। অভিযোগ উঠেছে, নদভীর পছন্দের ব্যক্তিদের (লোহাগাড়া-সাতকানিয়ার বাসিন্দা) নিয়োগ দিতে তার নির্দেশেই নানা অনিয়ম করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আইআইইউসির আইন বিভাগে চেয়ারম্যানসহ মোট ১৮ জন শিক্ষক রয়েছেন। বিভাগীয় চাহিদাপত্র ছাড়াই সম্প্রতি সেই নুসরাত জাহানসহ ৩ জনকে খণ্ডকালীন প্রভাষক নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নিয়োগপ্রাপ্ত ওই ৩ জনের কারোরই কোনো ধরনের পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। শিক্ষক নিয়োগে কমিটি গঠন ছাড়াই ‘লোহাগাড়া-সাতকানিয়া কোটায়’ তাদের নিয়োগ দেয়া হয় বলে অভিযোগ আছে।

আইন বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পাওয়া ৩ জনের মধ্যে একজন হলেন মোহাম্মদ কাব্বাব ত্বাকী। চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি লোহাগাড়া কোটায় খণ্ডকালীন প্রভাষক পদে নিয়োগ পান তিনি। অথচ শিবিরের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছিল। সেসময় ক্যাম্পাস থেকেও তাকে বিতাড়িত করে ছাত্রলীগ। নিয়োগপ্রাপ্ত প্রভাষকদের মধ্যে আরেকজন সামিউল হাসান; সাতকানিয়ায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে ২০২২ সালের ১২ জানুয়ারি বিনা পরীক্ষায় নিয়োগ পান তিনি।

জানা যায়, নিয়মনীতি অনুসরণ ছাড়াই প্রভাষক পদে নিয়োগের পর প্রায় ৬ মাস শ্রেণিকক্ষে পাঠদানও করেছেন ওই তিনজন। পরবর্তীতে তাদের নিয়োগকে বৈধতা দিতে এবং অনিয়ম ধামাচাপা দিতে চেষ্টা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে গত ২৯ জুন কম প্রচারিত একটি আঞ্চলিক পত্রিকায় আইন বিভাগসহ ১৫টি বিভাগে শিক্ষক পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেন বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার; যাতে বিজ্ঞপ্তিটি আবেদন করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের নজরে কম পড়ে। একই কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হয়নি।

২৯ জুন প্রকাশিত সেই বিজ্ঞপ্তিতে ২ জুলাইয়ের (শনিবার) মধ্যে ব্যাংক ড্রাফট পরিশোধসহ যাবতীয় নিয়ম অনুসরণ করে নিয়োগের আবেদন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে শুক্র-শনি সাপ্তাহিক ছুটি থাকার কারণে শুধুমাত্র একদিন (বৃহস্পতিবার) সময় পান আবেদনকারীরা।
তবে এই একদিন সময়ের ব্যবধানে জমা পড়ে ৩২ জনের আবেদনপত্র। মজার বিষয় হলো, এই ৩২টি আবেদনের মধ্যে ৩টি আবেদন ছিল লোহাগাড়া-সাতকানিয়া কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত ওই ৩ জন প্রভাষকের। আবেদনকারীদের মধ্যে সামিউল হাসান ৭ নম্বরে, মোহাম্মদ কাব্বাব ত্বাকী ৯ নম্বরে এবং নুসরাত জাহানকে ২১ নম্বরে তালিকাভুক্ত করা হয়। এই ৩ জনসহ মোট ২৫ জন আবেদনকারীকে বাছাই করে কর্তৃপক্ষ।

পরবর্তীতে লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার সময় শুরুতে শনিবার (২০ আগস্ট) জানানো হলেও সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে রোববার (২১ আগস্ট) সকাল ১০টায় উপস্থিত থাকতে বলা হয় ওই ২৫ জনকে। নির্দেশনা অনুযায়ী, উপস্থিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ছিল বেশ নড়বড়ে। ওই দিন শুরুতে পরীক্ষার ভেনু বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স রুম জানানো হলেও পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে পরীক্ষার্থীদের বলা হয় পরীক্ষা হবে আইন বিভাগের ৫০১ নম্বর রুমে।

পরীক্ষাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে প্রভাষক নিয়োগের জন্য হলেও এর প্রশ্ন ছিল বেশ সাদামাটা। মাত্র দুটি প্রশ্নের (কন্সটিটিউশনাল সুপ্রিমেসি-পার্লামেন্টারি সুপ্রিমেসি ও সংবিধানে আইনের শাসন সংক্রান্ত) উত্তর দিতে বলা হয় পরীক্ষার্থীদের। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ২০ নম্বর করে মোট ৪০ নম্বর ছিল। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয় মাত্র ৫০ মিনিট। হলে ছিলেন মাত্র একজন গার্ড, যিনি সারাক্ষণ ফোনেই ব্যস্ত ছিলেন।

মাত্র ১ ঘন্টার ব্যবধানে বেলা ১২টায় পরীক্ষার ফলাফল জানিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮ জন মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাক পান। ওই দিন বিকেলেই তাদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। মজার বিষয় হলো, এই ৮ জনের মধ্যে লোহাগাড়া-সাতকানিয়া কোটায় পূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত সেই ৩ জন প্রভাষককে এই লিখিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নাম্বার দিয়ে উত্তীর্ণ করা হয়।

অভিযোগ আছে, লিখিত পরীক্ষায় ওই ৩ জনকে সর্বোচ্চ নম্বর দিতে কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান নদভী। তাই শেষ পর্যন্ত অস্বচ্ছতা ও পক্ষপাতিত্বের কারণে মেধা, যোগ্যতা ও মানে এগিয়ে থেকেও অন্যান্য আবেদনকারীরা এই দৌড় থেকে ছিটকে পড়েন। জয় হয় লোহাগাড়া-সাতকানিয়া কোটার। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ছিল লোকদেখানো, আইওয়াশ। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল জানানো হয়নি। তবে ট্রাস্টি বোর্ড ওই ৩ জনকে সেখানেও এগিয়ে রাখবেন এমনটাই ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

এদিকে, আইন বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, দিনক্ষণ নির্ধারণ ও লিখিত পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট নানা ধরনের অনিয়ম দেখে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বেশ কয়েকজন আবেদনকারী ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

প্রভাষক পদের আবেদনকারীদের একজন হুসনাইন মাহমুদ; একুশে পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে শুরু থেকেই আমার সন্দেহ ছিল। আমাদের সকলকে ১২টি করে ফরম পূরণ করতে বলে কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী আমরা সবকটি ফরম পূরণ করি। কিন্তু কয়েকজন শুধুমাত্র একটি করে ফরম পূরণ করে। নিয়ম তো সকলের জন্য সমান হওয়ার কথা। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা তা ইউজিসির খতিয়ে দেখা উচিত।’

নুরুল ইসলাম নামে আরেকজন আবেদনকারী অভিযোগ করে বলেন, ‘আবেদনের ক্ষেত্রে খুবই কম সময় দেওয়া হয়েছিল। লিখিত পরীক্ষার প্রক্রিয়াও ছিল বেশ অগোছালো। প্রথমে আমাদের বলা হয়েছে ২০ আগস্ট পরীক্ষা হবে। পরবর্তীতে তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২১ আগস্ট। আবার পরীক্ষার ভেনুও দুইবার পরিবর্তন করা হয়েছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ছিল নিম্নমানের। বোঝা যাচ্ছিল কোনরকমে একটি কাগজকে কেটে প্রশ্নপত্র বানানো হয়েছে। এত বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের অব্যবস্থাপনা কীভাবে হয়?’

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে আইআইইউসি’র একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব ধরনের নিয়োগ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের পছন্দ অনুযায়ী হয়ে থাকে। তিনি কোনো ধরনের নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করেন না। নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা, যোগ্যতা ও মানের চেয়ে স্বজনপ্রীতি ও আনুগত্যকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান যা নির্দেশ দেন রেজিস্ট্রার অফিস, প্রক্টর, ডিন, এমনকি সিন্ডিকেটও সেভাবে কাজ করে।’

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া প্রভাষক সামিউল হাসান ও মোহাম্মদ কাব্বাব ত্বাকীর সাথে। নিয়োগের প্রসঙ্গ তুলতেই তারা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া আইন বিভাগের প্রভাষক নুসরাত জাহান বলেন, ‘প্রথমে আমাদেরকে পার্মানেন্ট শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পলিসি অনুযায়ী পরবর্তীতে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। আর আমরা ৩ জন তো থাকবোই। কারণ আমাদের বিষয়টা একটা প্রসেসের মধ্য দিয়ে যাওয়ার কথা। আর এটা তো দোষের কিছু না।’

যদিও পরবর্তীতে স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়ে নুসরাত বলেন, ‘আমরা যদি ভাইভাতে কিছু না পারতাম তখন আমাদের নিত না। আর এখনও তো আমরা জানি না আমাদের ৩ জনকে ডিপার্টমেন্টে স্থায়ীভাবে রাখবে কিনা। আর আমাদের ডিপার্টমেন্ট চেয়ারম্যানসহ দুজন প্রমোশনের জন্য পরীক্ষা দিয়ে ভাইভা ফেইস করেছেন। এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রসেস।’

এখানেই শেষ নয়। অসদুপায় অবলম্বনের কারণে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিষ্কার হওয়া এক ব্যক্তিকে সাতকানিয়া কোটায় আইআইসিইউতে খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ওই ব্যক্তিকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। যদিও নিয়ম অনুযায়ী, প্রভাষক হিসেবে জার্নাল প্রকাশ হওয়া ছাড়াও ২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলেই কেবল প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হওয়ার সুযোগ থাকে।

এদিকে বিদ্যমান ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০’ অনুযায়ী সব প্রতিষ্ঠানে পূর্ণকালীন শিক্ষক বেশি থাকার কথা স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া পূর্ণকালীন শিক্ষক বেশি রাখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনেরও (ইউজিসি) নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এ আইন মানছে না বিশ্ববিদ্যালয়টি। একের পর এক খণ্ডকালীন শিক্ষক ও প্রভাষক নিয়োগ দিয়েই যাচ্ছে। অভিযোগ, কম টাকায় খণ্ডকালীন শিক্ষক রাখা যায় বলে পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, গত ২৯ জুন ‘দেওয়াল’ নামের ওই পত্রিকায় প্রকাশিত আইআইইউসির সেই বিজ্ঞপ্তিতে ১৪টি প্রশাসনিক পদে (পরিচালক, সিনিয়র সহকারী পরিচালক, সহকারী পরিচালক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, সহকারী প্রকৌশলী, উপ সহকারী প্রকৌশলী, প্রশাসনিক সহকারী, ল্যাব টেকনিশিয়ান, লাইব্রেরি সহকারী, স্টোর কিপার/ক্যাফেটেরিয়া ম্যানেজার, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট, পিয়ন/ সাইট সুপারভাইজার/সুপারভাইজার/নিরাপত্তা গার্ড/ফটোকপিয়ার অপারেটর, বহনকারী/প্লাম্বার হেল্পার) নিয়োগ আবেদন আহ্বান করা হয়।

অভিযোগ আছে, এসব পদের বেশিরভাগই সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার বাসিন্দাদের দিয়ে পূরণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যাদের নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতাও নেই। কর্মচারী (পিয়ন) হিসেবে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের অনেকেই ঠিকমতো দেখে পড়তে পারেন না; এমনকি স্বাক্ষর পর্যন্ত করতে পারেন না। সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার বাসিন্দা বলেই গণহারে নিয়োগ পেয়েছেন তারা।

জানতে চাইলে আইআইইউসির উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আসলে এগুলো আমি ঠিক জানি না। তবে সকল নিয়ম মেনেই শিক্ষক নিয়োগ হওয়ার কথা। তবে এটা ঠিক যে, যারা এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পায় কিংবা অন্যভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পৃক্ত থাকে, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার শর্তে তাদের কথা বিবেচনা করা যায়।’

আগে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রভাষকদের ভাষ্য তাদের স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাহলে পুনরায় কেন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূলত তাদের এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এটাকে খণ্ডকালীন নিয়োগও বলা চলে। তারা যদি স্থায়ী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে থাকে তাহলে তারা পরবর্তীতে নিয়োগের আবেদন কেন করলো? তারা (পুনরায় আবেদনকারী প্রভাষক) হয়তো অতি উৎসাহী হয়েই এ ধরনের কথা বলেছে। তাদের এটা বলা ঠিক হয়নি।’

এ প্রসঙ্গে জানতে আইআইইউসির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি)-এর চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে একাধিকবার কল করা হয়; কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে আইআইইউসির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য বদিউল আলম একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘নিয়োগের বিষয়ে স্বচ্ছতার বিষয়টি নিয়ে আমরা বোর্ড অব ট্রাস্টিজের মিটিংয়ে আলোচনা করেছি। যেহেতু এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাই এ নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। আমি ট্রাস্টি বোর্ডের মেম্বার কিন্তু তাদের মুখপাত্র না। তবে একটা প্রতিষ্ঠান কীভাবে চলছে, যেভাবে চলা উচিত সেভাবে চলছে কিনা, ইউজিসির নির্দেশনা মানা হচ্ছে কিনা, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ফাংশন কি, চেয়ারম্যানের ফাংশন কি, এসব দেখার অধিকার আপনাদের আছে। আপনারা এসব নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে কথা বলতে পারেন।’

নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সচিব (প্রশাসন বিভাগ) ড. ফেরদৌস জামান একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী এমন তো হতেই পারে না। দু’একটা বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সরকার সেখানকার ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে দিয়েছে। এমন অনিয়মের ক্ষেত্রে সরকারের জিরো টলারেন্স রয়েছে। আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।’