সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

জিপিএইচের দখল সাম্রাজ্য সরকারি জায়গায়ও বিস্তৃত, নীরব প্রশাসন

প্রকাশিতঃ ১৪ অগাস্ট ২০২২ | ১০:৪৯ অপরাহ্ন


এম কে মনির : সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের জায়গাজুড়ে বিস্তৃত হচ্ছে জিপিএইচ ইস্পাতের দখল সাম্রাজ্য। একের পর এক সরকারি জায়গা দখল ও গ্রামের পানি চলাচলের পথ বন্ধ করে নিজেদের সীমানাভুক্ত করছে এ শিল্প প্রতিষ্ঠানটি। উপজেলা ভূমি অফিসের জরিপেও দখলের সত্যতা পাওয়া গেছে। তবুও জমি উদ্ধার ও জনদুর্ভোগ নিরসনে উদ্যোগ নিচ্ছে না সওজ ও স্থানীয় প্রশাসন। এতে ভোগান্তি বাড়ছে এলাকাবাসীর।

চলতি বর্ষা মৌসুমে অতি বৃষ্টিতে গ্রাম প্লাবিত হয়ে কুমিরা ইউনিয়নের মগপুকুর মসজিদ্দা এলাকার ৪’শ পরিবার দীর্ঘ ১ মাস ডুবে ছিল পানিতে। ওইসময় পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল সেখানকার ঘরবাড়ি, মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থানসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাস্তাঘাট ডুবে থাকায় বিদ্যালয়ে যেতে পারেননি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, মসজিদে যেতে পারেননি মুসল্লিরা। রান্নাঘর, বসতঘর ডুবে যাওয়ায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের। ভুগতে হয়েছে পানিবাহিত রোগেও।

এমনকি মৃত মানুষের মরদেহ কবরস্থানে নিতে হয়েছে হাঁটুপানি ডিঙিয়ে। এমন সীমাহীন দুর্ভোগ ও জলাবদ্ধতা সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এলাকাবাসী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলেও স্থায়ী প্রতিকার মেলেনি। ফলে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সীতাকুণ্ডের কুমিরা ও বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী মগপুকুর এলাকার মসজিদ্দা মৌজার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশের জায়গাটি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে মোল্লাপাড়া, হাজী পাড়াসহ কয়েক গ্রামের পানি চলাচলের একমাত্র পথ। বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢল নেমে এলে প্লাবন থেকে বাঁচার একমাত্র রক্ষাকবচ এ পানি চলাচলের পথ (ছোট খাল)। ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানি এ ছোট খাল হয়ে সরাসরি বঙ্গোপসাগরে যেত। এতে বন্যা থেকে রেহাই পেত এলাকাবাসী।

কিন্তু জিপিএইচ ইস্পাত শিল্প গ্রুপ ওই এলাকায় প্রবেশের পর থেকে ধীর ধীরে পানি চলাচলের পথটি রুদ্ধ করতে থাকে। একসময় জিপিএইচের পথ ধরে কেআর গ্রুপ, পোর্টল্যান্ড ইন্টারন্যাশনালও দখলযজ্ঞে মেতে ওঠে। পানি চলাচলের পথটি চলে যায় ৩ শিল্প প্রতিষ্ঠানের দখলে। সেই থেকে হাজী পাড়া, মোল্লাপাড়া মগপুকুর এলাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। প্রতি বর্ষা মৌসুমে গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় এলাকাবাসীকে। দিনের পর দিন পানিবন্দি হয়ে কর্মহীন হয়ে পড়ে ওই এলাকার মানুষ।

স্থানীয়দের দাবি, সরকারি জায়গা দখল করে এলাকার পানি চলাচলের পথ বন্ধ করে দিয়েছে এ ৩ শিল্প প্রতিষ্ঠান। আর দুর্ভোগ তৈরির জন্য প্রধানত দায়ী জিপিএইচ ইস্পাত। কারখানা ও ওয়্যারহাউজের পরিধি বাড়িয়ে সড়ক ও জনপদের জায়গা দখল করা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। আগে সীমানা প্রাচীর ও পানি চলাচলের দূরত্ব ২০-২৫ ফুট হলেও সম্প্রতি নতুন করে সীমানা বাড়িয়ে নেয় জিপিএইচ। আর এসময় সুযোগ বুঝে পানি চলাচলের পথটি ভরাট করে ফেলে তারা। এতে পানি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বৃষ্টির পানি জমে পানিবন্দি হয়ে পড়ে গ্রামের ৪’শ পরিবার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিরা ইউনিয়নের মগপুকুর মসজিদ্দা মৌজায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে অবস্থিত হাজী পাড়া গ্রাম। আর এ গ্রামের পাশ ঘেষেই গড়ে ওঠেছে জিপিএইচ ইস্পাত, কেআর ও পোর্টল্যান্ড নামক শিল্প প্রতিষ্ঠান তিনটি। গ্রামের দক্ষিণ সীমানায় পাহাড় থেকে নেমে আসা একটি খাল সোজা বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। কিন্তু খালটির হাজীপাড়া অংশের আশেপাশের জায়গাগুলো জিপিএইচ ইস্পাত, কেআর ও পোর্টল্যান্ড কিনে ফেলে। কেনার পর পানি চলাচলের পথটিও তারা ভরাট করে মাটির নিচে পাইপ বসিয়ে দেয়। এতে এলাকার পানি চলাচলের একমাত্র পথটি সংকীর্ণ হয়ে পানির গতিপ্রবাহ কমে যায়।

অন্যদিকে জিপিএইচ ইস্পাত তাদের সামনের সড়ক ও জনপদের জায়গা দখল করে নতুন সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে। এতে পানি চলাচলের ওই অংশও ছোট হয়ে যায়। পলি জমে আগে যে অংশটুকু ছিল এখন সেটিও ভরাট হয়ে যায়। এতে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায় পানি চলাচল।

স্থানীয়রা জানান, যেটি ভরাট করা হয়েছে সেই জায়গাটি গ্রামের পানি চলাচলের পথ। যা বর্তমানে সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে গেছে। জিপিএইচ ইস্পাত পূর্বের সীমানা প্রাচীরের বাইরে নতুন করে পানি চলাচলের পথ দখল করে সীমানার পরিধি বাড়িয়েছে। এতে পানি চলাচলের পথটি ছোট হয়ে পানির প্রবাহ রুদ্ধ হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, জিপিএইচ ইস্পাতের ওয়্যারহাউজের উত্তর গেইটের সম্মুখে পানি চলাচলের পথটির উপর কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সেই কালভার্টটি পানি চলাচল নয়, জিপিএইচ ইস্পাতের গাড়ি পারাপারেই ব্যবহৃত হচ্ছে। জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় পেছনের অংশে পাহাড়ি ঢলের পানি নামার জন্য তিনটি ছড়া থাকলেও সবকটি ছড়া বন্ধ করে দিয়ে একটি মাত্র পথ খোলা রাখে জিপিএইচ। এতে তিনটি পথের পানি একপথে প্রবাহিত হওয়ায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে অবশিষ্ট পথটিও রুদ্ধ করায় পানি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।

এসময় কথা হয় হাজী পাড়া গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ইয়াছিন আরাফাত সানির সাথে। সানি বলেন, আমার বাবা মারা গেলে বাবার মরদেহটি নিতে অনেক কষ্ট হয়েছে। আমার খুব খারাপ লেগেছে। সে দৃশ্য আজও চোখে ভাসে। পানি ওঠলে আমরা বিদ্যালয়ে যেতে পারি না। একই কথা গ্রামের অন্যান্য বাসিন্দাদেরও৷ তারা জানান, জিপিএইচ ইস্পাত সড়ক ও জনপদের জায়গা দখল করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে পানি চলাচলের পথটি সংকীর্ণ করে ফেলে। পলি জমে ভরাট হয়ে গেলেও জিপিএইচ পথটি খনন করেনি। এতে উত্তর দিক থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। জিপিএইচ ইস্পাত তাদের কারখানার পূর্ব পাশের সকল পানি চলাচলের পথ বন্ধ করে দিয়ে একটি পথে সব পানি ছেড়ে দেয়ায় গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। কেআর, পোর্টল্যান্ড পানি চলাচলের খাল ভরাট করে পাইপ বসানোয় পূর্ব ও উত্তর দিকের পানির গতিপ্রবাহ কমে গেছে। ফলে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। বছরের পর বছর সরকারি জায়গা দখলে রাখলেও জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসন ও দখল উদ্ধারে প্রশাসন নীরব রয়েছে।

সড়ক ও জনপদের জায়গা দখলে কেআর ও পোর্টল্যান্ড

শুধু জিপিএইচ ইস্পাতই নয় সড়ক ও জনপদের জায়গা দখলে মেতে ওঠেছে কেআর গ্রুপ (কাশেম রাজা) ও পোর্টল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল নামে আরও দুটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ দুটি প্রতিষ্ঠানও পানি চলাচলের আশেপাশের কিছু পরিমাণ জমি কিনে নিয়ে সামনের সড়ক ও জনপদের সরকারি জায়গার উপর থাকা পানি চলাচলের পথটি ভরাট করে ফেলেছে। এতে পানি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে পানি চলাচলের পথটি নিজেদের দখলে নিয়ে ফেলেছে তারা।

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসনে গত ২৯ জুন ওই এলাকা পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম। এসময় জিপিএইচ ইস্পাত, কেআর ও পোর্টল্যান্ড গ্রুপ কর্তৃক সরকারি জায়গা দখল করে পানি চলাচলের পথ রুদ্ধ করার সত্যতা পান তারা। সেসময় দখলকৃত জায়গা উদ্ধার করে পানি চলাচলের সমস্যা দূর করার কথা জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)। আশ্বস্ত হয়ে এলাকাবাসীও জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে আশার আলো দেখেন। তবে পরিদর্শনের পর সমস্যা সমাধানে তেমন কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি উপজেলা প্রশাসনকে। অভিযান পরিচালনা করে উদ্ধারও করা হয়নি ৩ প্রতিষ্ঠানের দখলে থাকা সরকারি জায়গা।

অপরদিকে উপজেলা ভূমি অফিসের জরিপে ৩ প্রতিষ্ঠানের সরকারি জায়গা দখলের বিষয়টি ওঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে জিপিএইচ ইস্পাত কারখানা সংলগ্ন জায়গাগুলো এলাকার পানি চলাচলের পথ। যা ভরাট করে দখল করেছে জিপিএইচ ইস্পাত, কেআর ও পোর্টল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিপিএইচ ইস্পাত মসজিদ্দা মৌজার ২৪.৬৪ শতাংশ সরকারি সড়ক ও জনপদের জায়গা দখল করেছে। কেআর (কাশেম রাজা) গ্রুপ দখল করেছে ১১ শতাংশ ৭২ পয়েন্ট জায়গা। অন্যদিকে পোর্টল্যান্ড দখল করেছে ১০ শতক জায়গা।

উপজেলা ভূমি অফিসে থাকা সরকারি রেকর্ড দেখে জানা যায়, মসজিদ্দা মৌজার ৪৪৬০ দাগে ৮৫ শতাংশ ও ৩৪৪ দাগে ৬৪ শতাংশসহ দুই দাগে মোট ১৪৯ শতাংশ জায়গা সড়ক ও জনপদের নামে খতিয়ানভুক্ত আছে। তার মধ্যে জিপিএইচ ইস্পাত বিএস ৪৪৬০ দাগের ২৪.৬৪ শতাংশ, ৩৪৪ দাগে কেআর ১১.৭২ শতাংশ ও পোর্টল্যান্ড ১০ শতাংশ জায়গা দখল করেছে। জরিপের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম।

সরকারি জমি দখল উদ্ধারে নিরব প্রশাসন

সীতাকুণ্ডে সড়ক ও জনপদের ৪৬ শতাংশ জায়গা জিপিএইচ ইস্পাত, কেআর ও পোর্টল্যান্ড দখল করে রাখলেও তা উদ্ধারে নিরব উপজেলা প্রশাসন, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর। পরিদর্শন করে জলাবদ্ধতা ও দখলের বিষয়ে নিশ্চিত হলেও এখনো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে মূল্যবান সরকারি জমি উদ্ধার করা হয়নি। সমাধান করা হয়নি জলাবদ্ধতার সমস্যাও। এতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠছে, তেমনি ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয়রা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম একুশে পত্রিকাকে তার দপ্তরে বলেন, আপনার এত ইন্টারেস্ট কেন এসব নিয়ে? আমি তো আর আপনার মতো একটা বিষয় নিয়ে পড়ে নেই। অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কাজ করতে হয় আমাকে। আমরা বলেছি জনদুর্ভোগ লাঘবে কাজ করব। কিন্তু সেটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বাচ্চা কান্না না করলে মা কখনো দুধ দেয় না। সওজের জায়গা, তাদেরকে আমাদের সহযোগিতা চাইতে হবে। তা না হলে কীভাবে সহযোগিতা করব?

ভূমি অফিসের সার্ভে রিপোর্ট সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এটি ঠিক আছে। তবে এখনো এ নিয়ে কাজ শুরু করিনি। আমার হাতে আসলে বলতে পারব।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমরা সরকারি জায়গা উদ্ধারে অবশ্যই কাজ করব। ইতিমধ্যে অভিযান চালিয়ে সওজের জায়গা দখলমুক্ত করেছি। সওজ আমাদের সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই করব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দ্রুত এসব নিয়ে কাজ শুরু করব। জনদুর্ভোগ লাঘবে আমরা বদ্ধপরিকর। ৩ প্রতিষ্ঠানের দখলে থাকা জায়গা উদ্ধার করা হলে জলাবদ্ধতা সমস্যা যদি দূর হয় তাহলে সেটিকে গুরুত্ব দেয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমরা শুধু নোটিশ করতে পারব তাদেরকে। এর বাইরে কিছু করার ক্ষমতা নেই আমাদের। অভিযান পরিচালনা করতে হলে ম্যাজিস্ট্রেট লাগবে। যা আমাদের নেই।

তিনি আরও বলেন, জিপিএইচ ইস্পাত, কেআর ও পোর্টল্যান্ড আমাদের কাছ থেকে সরকারি জায়গা ব্যবহারের জন্য কোন লিজ নেয়নি। সেখানে আমাদের অনেক জায়গা আছে। সার্ভে করে ব্যবস্থা নেব।

সরকারি জায়গা উদ্ধারে পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমরা হলাম ঢাল ও তলোয়ার বিহীন নিধিরাম সর্দার। আমাদের কোন ম্যাজিস্ট্রেট নেই। আমরা নোটিশ দিতে পারি শুধু। ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারি না। জিপিএইচ ইস্পাতসহ যেসব প্রতিষ্ঠান সওজের জায়গা দখল করেছে সেসব বিষয়ে আমি অবগত নই।

এদিকে লিজ ছাড়া সরকারি জায়গা দখল করে জনদুর্ভোগ তৈরির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জিপিএইচ ইস্পাতের এডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর আলমাস শিমুল একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমি একটি মিটিংয়ে আছি। আপনাকে পরে ফোন ব্যাক করব। পরবর্তীতে তিনি এ প্রতিবেদককে ফিরতি ফোনও করেননি। পরে একাধিকবার কল করা হলেও তার নম্বরটি ব্যস্ত পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে জিপিএইচ ইস্পাতের মিডিয়া এডভাইজার অভিক ওসমান একুশে পত্রিকাকে, জায়গা দখলের বিষয়ে আমি জানি না। বিষয়টি খবর নিয়ে তারপর আপনাকে জানাতে হবে।

কোন লিজ নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তাও জানি না। সুতরাং জেনে আপনাকে জানাতে হবে।

এর আগে সরকারি জায়গা ও পানি চলাচলের পথ বন্ধ করে জনদুর্ভোগ তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনটি প্রতিষ্ঠানই একে অপরকে দোষ দিয়ে আসছিল। প্রত্যেকেই নিজেদের জায়গায় পানি চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপেন। জানতে চাইলে ওইসময় জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল একুশে পত্রিকাকে বলেছিলেন, আমি আমার আশেপাশের পানি চলাচলের পথ খুলে দিয়েছি। বিপরীত দিক থেকে পানি যদি না আসে আমার কিছু করার নেই। আমি নিজেও জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলাপ করেছি সমস্যা সমাধানে। তাদের অনেকেরই আন্তরিকতার ঘাটতি আছে। মানুষ কষ্ট করুক আমি তা চাই না। আমার পাশে যারা জায়গা নিয়েছে তারা ভরাট করেছে। কিন্তু আমি জানি দোষটা জিপিএইচের ঘাড়ে আসবে। সেজন্যই আগে থেকে বলেছি সবাইকে। কেউ একমত হতে পারেনি।

এ বিষয়ে কেআর গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কেআর ফ্লেক্সিবল লিমিটেডের মালিক সেকান্দর হোসাইন টিংকু একুশে পত্রিকাকে বলেন, প্রত্যেক এলাকায় পেছনের জায়গা যার সামনের জায়গাটিও তার দখলে থাকে। এটি সেকরম কোন দখল নয়। আমি সেখানে কোন স্থাপনা নির্মাণ করিনি। আমার প্রতিষ্ঠানের কারণে যদি জলাবদ্ধতা দেখা দেয় তাহলে আমি ছেড়ে দেব। এখানে মূল্য সমস্যা সৃষ্টি করছে অন্য প্রতিষ্ঠান। আমার প্রতিষ্ঠান জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী নয়।

এ বিষয়ে জানতে পোর্টল্যান্ড ইন্টারন্যাশনালের ডিডি হাদিদুর রহমানকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।