চট্টগ্রাম: বিপণিবিতানের ভেতরে ক্রেতাদের ভিড়। কেউ এসেছেন বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে। কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। আবার অনেকে একা কেনাকাটা করতে এসেছেন। নিজের ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য পছন্দের পোশাক বাছাই করছেন তারা। যাচাইবাছাই করে কিনে নিচ্ছেন পছন্দের পোশাক।
শুক্রবার দেখা যায়, নগরের অভিজাত বিপণিবিতানে পুরোদমে জমে উঠেছে ঈদের বেচাকেনা। নগরের আফমি প্লাজা, মিমি সুপার মার্কেট, জিইসি মোড়ের সেন্ট্রাল প্লাজা, আমিন সেন্টার ইত্যাদি বিপণিবিতানে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
ব্যবসায়ীরা জানান, কেনাকাটা করতে প্রচুর মানুষ আসছেন। বিকেলের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় বেশী। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তাদের আশাবাদ।
আফমি প্লাজার দেশি দশে পোশাক কিনতে আসা কর্মজীবী দম্পতি মাহবুবা শারমিন জানালেন, কর্মব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে এত দিন পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য কেনাকাটা করেছেন। এখন নিজেদেরটা কিনবেন। সময় বেশি নেই, তাই পুরোদিন নিজেদের কেনাকাটার জন্য বরাদ্দ রেখেছেন।
স্যানমার ওশান সিটির নিচতলায় রয়েছে শৈল্পিক, ম্যানজ, ক্যাটস আই, মুন ওয়াকার, ক্রোকোডাইলের মতো সুপরিচিত ব্র্যান্ডের দোকান। চারতলায় রয়েছে পাঞ্জাবিওয়ালা, ম্যানহুড।
এসব দোকানে ক্রেতাদের আগ্রহ ছিল ঈদের পাঞ্জাবি ঘিরে। ব্যবসায়ীরা নিয়ে এসেছেন বিভিন্ন ধরন ও নকশার পাঞ্জাবি। এর পাশাপাশি রয়েছে ফতুয়া, শার্ট, প্যান্ট। দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা দামের পাঞ্জাবির প্রতি ছেলেদের আগ্রহ বেশি। মেয়েদের পোশাকের জন্যও খ্যাতি রয়েছে স্যানমার ওশান সিটির। এই বিপণিবিতানের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে বেশ কিছু গয়নার দোকান। তৃতীয় তলায় আছে শখ, ফেইম, আপন ফেব্রিকস ও চন্দ্রছায়ার মতো বিভিন্ন বুটিকস হাউস।
সাধ ও আর সাধ্যের মধ্যে ঈদের কেনাকাটা করতে চট্টগ্রামের অনেকের পছন্দ নগরের পৌর জহুর হকার্স মার্কেট ও ফুটপাত। নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ পদচারণায় সেখানেও ঈদের বেচাকেনা জমে উঠতে শুরু করেছে।
পৌর জহুর হকার্স মার্কেটে ছেলের জন্য শুক্রবার দুপুরে পোশাক পছন্দ করছিলেন নির্মাণশ্রমিক আবুল খায়ের; তিনি বলেন, ‘সময়-সুযোগের অভাবে এতদিন আসতে পারিনি। আজকে বাচ্চাকে নিয়ে ঈদের পোশাক কিনতে এসেছি। লোকজনের ভিড়ে মার্কেটে হাঁটা কঠিন। কাল-পরশু নিজের জন্য কিনতে আসব।’
নগরের নিউমার্কেট, ইপিজেড, আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, ২ নম্বর গেট ও বহদ্দারহাট এলাকায় হকাররা ঈদ উপলক্ষে পোশাক, বেল্ট, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্যের অস্থায়ী দোকান খুলেছেন। ঈদ উপলক্ষে বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে ফুটপাত ও হকার মার্কেটের দোকানিরা। বৃষ্টি হওয়ায় ফুটপাতের দোকানগুলোর ওপরে ত্রিপল দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন হকার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম মিয়া বলেন, ফুটপাতের দোকানগুলোর ক্রেতা মূলত নি¤œ ও মধ্য আয়ের লোকজন। তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ পোশাকশ্রমিক। যারা এখনো বেতন-বোনাস পাননি। ফলে পুরোদমে ফুটপাতের বেচাকেনা পুরোপুরি জমে উঠতে আরও কয়েকদিন লাগবে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের সোনালি লুঙ্গি হাউজের স্বত্বাধিকারী আশিক হোসেন জানালেন, এবার সাধারণ ছাপা লুঙ্গির পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে নকশা করা লুঙ্গি এনেছেন দোকানে। নকশি, টাইডাই, কাতানের কাজ করা, এমনকি হাতের কাজ করা লুঙ্গিও বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। কাপড় ও নকশাভেদে দেড় শ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকার মধ্যে লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি ও খুচরা শাড়ির জন্য বিখ্যাত টেরিবাজারের শাড়ির দোকানগুলোতেও ক্রেতার প্রচন্ড ভীড়। বিক্রেতারা জানালেন, ঈদের আগের এই সময়ে ক্রেতারা উপহারের জন্য শাড়ি কিনছেন বেশী। সুতি, টাঙ্গাইলের জামদানি, কাতান, বালুচরি, হাফ সিল্ক এসব শাড়িই বেশি বিক্রি হচ্ছে।
প্রসাধনী ও গয়নার দোকানেও উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে তরুণীরা গয়না কিনছেন। সোনা, রূপার সঙ্গে রুবি, পান্নাসহ বিভিন্ন পাথরের ঝিকিমিকি, মিনার কারুকাজ, গলার মালায় কয়েক স্তরের ঝালর, হাতের রতনচূড়াসহ বিভিন্ন গয়না ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায়। এ ছাড়া টুপি, জায়নামাজ, আতরও বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। দেশি ও বিদেশি টুপি পাওয়া যাচ্ছে ৭০-৮০০ টাকার মধ্যে। জায়নামাজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০০ টাকায়।
মার্কেটকেন্দ্রিক যানজটে নগরবাসীর দুর্ভোগ বেড়েছে। যানজট মোকাবিলায় ট্রাফিক পুলিশ হিমশিম খাচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) আনোয়ার হোসেন বলেন, যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা কাজ করছে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষ গভীর রাত পর্যন্ত নির্বিঘেœ যাতে কেনাবেচা করতে পারে সে জন্য বিপণিবিতান ও সড়কের স্থানে স্থানে পুলিশের টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে।