মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

রক্ত দিয়ে গোসল করার হুমকি, স্বমহিমায় কাউন্সিলর কাদের!

প্রকাশিতঃ ১৫ জুন ২০১৭ | ৫:৩৬ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম : তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নগরীর মোগলটুলিতে আলী মেম্বার নামের এক বয়োবৃদ্ধকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছেন ওয়ার্ড কমিশনার আবদুল কাদের প্রকাশ মাছ কাদের। কাদের ও তার অনুসারীদের হামলায় এই ঘটনায় আহত হয়েছেন একই পরিবারের আরো দুজন। এসময় ওই বাড়িটির মূল্যবান জিনিসপত্র ভাংচুর করা হয়। অভিযোগ ভুক্তভোগী ও স্থানীয় জনসাধারণের।

এদিকে, পবিত্র রোজার দিনে তারাবি নামাজের আগ মুহূর্তে খোদ জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে এই ধরনের হামলায় দক্ষিণ পাঠানটুলি ওয়ার্ডের জনসাধারণের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে বলছেন, জনপ্রতিনিধি যেখানে হামলা থেকে মানুষকে রক্ষা করেন, নিরাপত্তা দেন, সেই তিনিই যদি সন্ত্রাসী হামলার নেতৃত্ব দেন তাহলে সাধারণের মাঝে আতঙ্ক তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। এছাড়া একসময়ের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মাছ কাদেরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এখনো এলাকার মানুষের কাছে ভয়ঙ্কর স্মৃতি হয়ে আছে।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখলের মাধ্যমে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর গেল দুইবছর প্রকাশ্যে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেননি; ফলে এলাকার লোকজন আস্তে আস্তে তাকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু এরমধ্যেই তুচ্ছ ঘটনায় এমন ‘কাণ্ড’ ঘটানোর পর স্থানীয়দের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে, মাছ কাদের কি তাহলে আগের চেহারায় ফিরে যাচ্ছেন!

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার বিকেলে ইফতার সামগ্রী কিনে গলির মুখে জড়ো হয়ে থাকা কয়েকজন যুবককে সরিয়ে স্থানীয় আলী মোহাম্মদ মেম্বারের ছেলে আলী হোসেন রনি বাসায় ফিরছিলেন। এ নিয়ে বাদানুবাদের এক পর্যায়ে মাছ কাদেরের অনুসারী, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের প্রাক্তন সদস্য ওবায়দুল করিম মিন্টু ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা রনির ওপর চড়াও হয়। পরে আলী মেম্বারের মধ্যস্থতায় ঘটনার মীমাংসা হলে তিনি ছেলেকে নিয়ে বাসায় চলে আসেন। কিন্তু ইফতারের পর পরই স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল কাদের (মাছ কাদের) তার একদল অনুসারী নিয়ে আলী মেম্বারের বাড়িতে হামলা চালান। এতে মোহাম্মদ আলী মেম্বার (৬৩), রাজিয়া সুলতানা (৫০) ও মো. আকবরের মাথা ফেটে যায়। তাদেরকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কাউন্সিলর আবদুল কাদের বুধবার তারাবির পরে এসে পরিবারের লোকজনের রক্ত দিয়ে গোসল করবেন বলেও শাসিয়ে গিয়েছেন বলে বাড়ির লোকজন অভিযোগ করেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাউন্সিলর আবদুল কাদের নিজের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, আলী মেম্বারের ছেলে রনি একজন ইয়াবার সেবনকারী ও ব্যবসায়ী। ইফতারের আগমুহূর্তে মাতাল অবস্থায় ইফতারসামগ্রী কিনে বাড়ি ফেরার সময় গলির মুখে বসে থাকা আমার অনুসারী যুবলীগ নেতা মিন্টুসহ কয়েকজনের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। তাদের সঙ্গে রনির বাদানুবাদের একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাথর ছোড়াছুড়িতে কয়েকজন আহত হয়েছে বলে শুনেছি। এর বাইরে আমি আর কিছু জানি না।

এদিকে, এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে যুবলীগ নেতা ওবায়দুল করিম মিন্টুসহ ৮ জন এবং অজ্ঞাত আরো ৪০-৫০ জনকে আসামী করে ডবলমুরিং থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিউদ্দিন সেলিম একুশে পত্রিকাকে জানান, কিছুক্ষণ আগে মামলাটি হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মাছ কাদের মামলার আসামী নয় কেন জানতে চাইলে ওসি বলেন, তদন্তে দোষী প্রমাণ হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যতবড় শক্তিশালীই হোক তাকে আইনের আওতায় আসতে হবে।

র‌্যাব ও পুলিশের নথি অনুযায়ী, মাছ কাদেরের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্র, অপহরণের অভিযোগে প্রায় ২৯টি মামলা ছিল। সাক্ষীরা ভয়ে সাক্ষ্য না দেওয়ায় ২৩টি মামলায় খালাস পান কাদের। আ-লীগ ক্ষমতায় এলে রাজনৈতিক বিবেচনায় চারটি হত্যা মামলা প্রত্যাহার করা হয়। চাঞ্চল্যকর আজাদ হত্যাসহ দুটি মামলার একটি মাছ কাদেরের আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতে স্থগিত রয়েছে, আরেকটি মামলা বিচারাধীন আছে।

একসময় মাছ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নিতেন বলে তাঁকে মাছ কাদের বলা হয়। ২০০০ সালের ১ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন কাদের। নয় বছর পর ২০০৯ সালের ১৮ এপ্রিল কারগার থেকে মুক্তি পান। এর আগে মামলাগুলো থেকে জামিন ও খালাস পেলেও ‘প্রোটেকশন ওয়ারেন্ট’ নিয়ে কারাগারে থেকে যান। মূলত এক-এগারোর সময় ধরপাকড় ও র‌্যাব-পুলিশের ক্রসফায়ার থেকে রক্ষা পেতে তিনি এ কৌশল নেন।