মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ধসে উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেয়া দুই কর্মকর্তাসহ চার সেনাসদস্য নিহত

প্রকাশিতঃ ১৪ জুন ২০১৭ | ১:২১ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রাম : রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ধসে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর সময় দুইজন সেনা কর্মকর্তাসহ চারজন সেনাসদস্য নিহত হয়। মঙ্গলবার সকালে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন ১০ জন সেনাসদস্য।

এর আগে মঙ্গলবার ভোরে রাঙ্গামাটির মানিকছড়িতে একটি পাহাড়ধসে মাটি ও গাছ পড়ে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়ক বন্ধ হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে রাঙ্গামাটি জোন সদরের নির্দেশে মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল ওই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালে সকাল ১১টার দিকে পাহাড়ের একটি বড় অংশ উদ্ধারকারীদলের উপর ধসে পড়লে তাঁরা মূল সড়ক থেকে ৩০ ফিট নিচে পড়ে যান। এতে দুইজন সেনা কর্মকর্তাসহ চার জন সেনাসদস্য নিহত এবং ১০ জন সেনাসদস্যকে আহত হন। পরে একই ক্যাম্প থেকে আরও একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত নিহতদের উদ্ধার করে।

মঙ্গলবার বিকালে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রেজা-উল করিম শাম্মী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

নিহতরা হলেন- মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, ক্যাপ্টেন মো. তানভীর সালাম শান্ত, কর্পোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হক ও সৈনিক মো. শাহিন আলম।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক মঙ্গলবার বিকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং উদ্ধার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। তিনি হতাহত সকল সেনাসদস্য ও তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, গত তিনদিনের প্রবল বর্ষণের ফলে গতকাল থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধস শুরু হয়। এতে করে সমগ্র এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার এবং পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য বিভিন্ন সেনা ক্যাম্পের সদস্যরা গতকাল থেকেই উদ্ধারকার্যে অংশগ্রহণ করে।

আহতদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে যাওয়া হয়।

উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর সময় ভূমিধসে নিহত মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হক ১৯৮১ সালের ১৬ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার সিংড়াইলে। তিনি ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে যোগদান করেন এবং ৪৪ বিএমএ লং কোর্সের সাথে কমিশন প্রাপ্ত হন। তিনি বিবাহিত এবং পাঁচ বছর বয়সী এক ছেলের জনক।

ক্যাপ্টেন মো. তানভীর সালাম শান্ত ১৯৯০ সালের ৩০ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানায়। তিনি ২০০৯ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে যোগদান করেন এবং ৬৪ বিএমএ লং কোর্সের সাথে কমিশনপ্রাপ্ত হন। তিনি সদ্য বিবাহিত।

কর্পোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হকের জন্ম ১৯৭৬ সালের ১ মে। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জে। তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যোগদান করেন। তিনি বিবাহিত এবং এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক।

সৈনিক মো. শাহিন আলমের জন্ম ১৯৮৮ সালের ০১ আগস্ট। গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার আদমদিঘীতে। তিনি ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি বিবাহিত এবং এক ছেলের জনক।

নিহত সৈনিক মো. আজিজুর রহমান ১৯৮৭ সালের ২০ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে। তিনি ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি বিবাহিত এবং এক মেয়ের জনক।