সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

খাগড়াছড়িতে ৩০ জুন পর্যন্ত সকল সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ

প্রকাশিতঃ ৮ জুন ২০১৭ | ১০:৫৮ অপরাহ্ন

শংকর চৌধুী, খাগড়ছড়ি : পার্বত্য জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত খাগড়াছড়িতে জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সকল প্রকার সভা সমাবেশের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে জেলা প্রশাসন। সাম্প্রতিক সময়ে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় জেলা প্রশাসন বিশেষ আইন শৃঙ্খলা সভা থেকে এই স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মো: রাশেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভায় বলা হয় সম্প্রতি সময়ে রাঙামাটির লংগদু ঘটনা ও কল্পনা চাকমা অপহরণের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আঞ্চলিক কিছু সংগঠন পাল্টাপাল্টিা কর্মসূচি পালন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করছে।

যারা পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি বাঙালিদের সহাবস্থানের সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করতে চায় তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান আইনশৃঙ্খলা সভায় উপস্থিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ।

জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জনপ্রতিনিধি, আঞ্চলিক সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে প্রশাসনকে বৈঠকে বসার পরামর্শ দেন সভায় উপস্থিত অনেকে।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও চাঁদাবাজি বন্ধ ছাড়া পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি ও উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, পাহাড়ে আওয়ামী লীগ সরকারের চলমান উন্নয়নের ধারাকে বাধাগ্রস্ত করতে কিছু কুচক্রী পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক হামলার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। তারা সংখ্যায় খুব কম। তাদের চিহ্নিত করে সামাজিকভাবে প্রতিহত করা এবং পাহাড়ে থাকা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক মো: রাশেদুল ইসলাম বলেন, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত জেলার জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে কোনো প্রকার সভা সমাবেশ করতে প্রশাসন অনুমতি দিবে না। বিশেষ প্রয়োজনে অনুমতি সাপেক্ষে তা শিথিল করা হবে। জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সকলের সহযোগিতার পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পৌর সভার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। এছাড়া আগামী ১১ জুন জেলায় পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের আহুত অর্ধদিবস হরতাল কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে সংগঠনটির সাথে যোগাযোগ করতেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সভায়।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান, সদর জোন কমান্ডার জি এম সোহাগ, খাগড়াছড়ি রিজিয়নের ব্রিগেড মেজর মাশেকুর রহমান, ৩২ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল হাসানুজ্জামান, জেলা আনসার অ্যাডজুট্যান্ট এস এম মুজিবুল হক পাভেল, এনএসআই খাগড়াছড়ি জেলার যুগ্ম পরিচালক নাসির উদ্দিন, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের প্রধান নির্বাহী কৃষ্ণ চন্দ্র চাকমা, জেলা পরিষদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ জাহেদুল আলম, পৌর মেয়র রফিকুল আলম, সড়ক পরিবহন মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম শফি।

উপস্থিত ছিলেন উপজাতি নেতা রবি শংকর তালুকদার, প্রেস ক্লাব সভাপতি জীতেন বড়ুয়া, সাংবাদিক এইচ এম প্রফুল্ল,খাগড়াছড়ি প্রতিদিন ডটকম’র সম্পাদক অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদারসহ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা ও সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা।

বুধবার জেলা সদরের স্বনির্ভর এলাকায় কল্পনা চাকমা’র অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দেওয়ায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর সাথে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় ৩ বিজিবি ও ৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়। এসময় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ২ নেত্রীসহ ১৯ জনকে আটক করে পুলিশ। দলীয় নেতাকর্মীকে আটকের ঘটনার জের ধরে জেলার বিভিন্ন সড়কে ২৫টি গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ইউপিডিএফ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কর্মীরা।

এদিকে বুধবার ৭ই জুন রাতে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করে ৩২ বিজিবির নায়েক সুবেদার আব্দুল হক বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন ।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারেক মো. আব্দুল হান্নান জানান, মামলায় ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ২০/৩০জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

অপরদিকে বুধবার আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় আটককৃতদের বৃহস্পতিবার দুপুরে অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া বেগমের আদালতে তোলা হলে মহালছড়ি ক্যায়াংঘাট এলাকার পিপি চাকমা (২০) মিকিনা চাকমা (৩৫) ও সোনালী চাকমা (৩৮) কে বাদ দিয়ে বাকিদের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।