শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১

চিনি ও ছোলার বাজারে ‘অস্থিরতা’

| প্রকাশিতঃ ২ জুন ২০১৬ | ২:১৭ পূর্বাহ্ন

:: একুশে প্রতিবেদক ::

Screenshot_2চট্টগ্রাম: এক সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে ছোলার দাম ছিল ৮০ থেকে ৮৫টাকা, গতকাল বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ৯৪ টাকায়। একই সময়ে চিনির দাম ছিল খুচরা পর্যায়ে ৪৮ থেকে ৫৮টাকা, কিন্তু গতকাল ৬২ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ এ সময়ের মধ্যে বিশ্ববাজারে এসব পণ্যের দাম বাড়েনি। এমনকি ছোলা-চিনির ঘাটতিও তৈরী হয়নি দেশে। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে রমজানে চাহিদার শীর্ষে থাকা এই দুটি পণ্যের দাম।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করে হুঁশিয়ারি দেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। পাইকারী ও খুচরা বাজারের চিত্র দিন দিন পালাচ্ছে। অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে দাম।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ছোলা এসেছে ৭৫ হাজার টন। এর বিপরীতে দেশে বছরে ছোলার চাহিদা ৬০ হাজার টন। গত এপ্রিল থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার ছোলা আমদানি হয় ৬০ থেকে সর্বোচ্চ ৬৮ টাকায়। বন্দর থেকে ছোলা খালাসসহ আনুষঙ্গিক খরচ পড়ে কেজিতে তিন টাকা। সে ছোলা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৪ টাকায়।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে চিনি আমদানিতে এলসি খোলা হয়েছে ৫ লাখ ৮১ হাজার ৩৮০টি। এ সময়ের মধ্যে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৬ লাখ ২৩ হাজার ৫২৬টি। এ বছরের প্রথম চার মাসে প্রতি কেজি চিনির গড় আমদানি মূল্য পড়েছে ২৬ টাকা। গতকাল চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায়। আর খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হয় কেজি প্রতি ৬২ থেকে ৬৫ টাকায়। অথচ গত এক সপ্তাহ আগেও খুচরা বাজারে চিনি ছিল কেজি প্রতি ৪৮ থেকে ৫৪টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ছোলা ও চিনির বাজার অস্থির হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে বেশকিছু কারণ। এর মধ্যে রয়েছে- এসব পণ্যের আমদানিকারকের সংখ্যা কমে যাওয়া, ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা না থাকা, নানা উপলক্ষে কোন পণ্যের বাড়তি চাহিদা তৈরি হলে গুদামজাত করে সেটার কৃত্রিম সংকট তৈরী করা ও প্রশাসনের উদ্যোগে বাজার মনিটরিং জোরদার না থাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছর ৯৮টি প্রতিষ্ঠান ছোলা আমদানিতে যুক্ত ছিল। এ বছর আমদানিকারকের সংখ্যা নেমে এসেছে ৫৬ জনে। শুধু তাই নয়; এ বছর ছোলা আমদানিও কমেছে। অন্যদিকে দেশে চিনি আমদানি করে মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। অথচ আট বছর আগেও অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনি আমদানি করতো ৮২টি প্রতিষ্ঠান।

এ প্রসঙ্গে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবারই সর্বোচ্চ পণ্য আমদানি হয়েছে। তাই রমজানে অস্বাভাবিক দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, রমজানসহ নানা উপলক্ষ এলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিত্য পণ্যের দাম কমানো হয়। আর আমাদের দেশে নানা উপলক্ষকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত টাকা কামানো হয়। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ছোলা ৮০ টাকার বেশী বিক্রি করা যাবে না। এবার বাজার কারসাজি ঠেকাতে বাণিজ্যমন্ত্রী মহোদয়ের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। নির্ধারিত মূল্যের বেশী দামে পণ্য বিক্রি ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।