কাউন্সিলর বেলালের কল্যাণে যুবদল নেতা রাতারাতি যুবলীগে!


একুশে প্রতিবেদক : ক’দিন আগেও যুবদলের রাজনীতিতে সরব ছিলেন লালখানবাজার এলাকার যুবক মোস্তফা কামাল। থাকতেন বিএনপির মিছিল-মিটিংয়ে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের একনিষ্ঠ সমর্থক; বিভিন্ন সময় মিছিলও করেছেন ডা. শাহাদাতের মুক্তির দাবিতে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেই যুবকই এখন ‘মস্তবড়’ যুবলীগ নেতা!

অভিযোগ আছে, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি ১৪ নং লালখানবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলালের কল্যাণে রাতারাতি যুবদল থেকে যুবলীগে তরি ভিড়িয়েছেন তিনি। এখন বেলালের সাথে নিয়মিত উঠাবসা তার, পেয়েছেন সদ্য সমাপ্ত মহানগর যুবলীগের সম্মেলন উপলক্ষে ডেলিগেট কার্ড।

আর সেই কার্ড নিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন দ্য কিং অব চিটাগাংয়ে অনুষ্ঠিত যুবলীগ সম্মেলন ও ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারের দ্বিতীয় অধিবেশন। অথচ সারাজীবন যুবলীগ আঁকড়ে থেকেছেন এমন অনেকেই সম্মেলনের কাউন্সিলর বা ডেলিগেট কার্ড পাননি বলে অসংখ্য অভিযোগ আছে। আর এসব কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব; যারা কাউন্সিলর, ডেলিগেট কার্ড ইস্যুর দায়িত্বে ছিলেন।

শুধু তাই নয়, নগরের ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ড বিএনপির কর্মী সালাউদ্দিনও পেয়েছেন নগর যুবলীগের সম্মেলন উপলক্ষে কাউন্সিলর কার্ড। এ নিয়ে বুধবার (১ জুন) ‘চট্টগ্রামে যুবলীগের সম্মেলনে কাউন্সিলর বিএনপিকর্মী‘ শিরোনামে একুশে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট মহলে তোলপাড় শুরু হয়।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত কিছুদিন আগে হঠাৎ আবুল হাসনাত বেলালের হাত ধরে রাতারাতি যুবলীগ নেতা হয়ে উঠেন লালখান বাজার তুলাপুকুর পাড়ের ইমন হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি যুবদল নেতা মো. মোস্তফা কামাল। এলাকায় তিনি এখন কথিত ‘যুবলীগ নেতা’ পরিচয়ের পাশাপাশি কাউন্সিলর বেলালের একনিষ্ঠ কর্মী, অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

বেলালকে অভিনন্দিত করে, শুভ কামনা জানিয়ে ফেসবুকে প্রায় সময় পোস্ট দিচ্ছেন যুবলীগ নামধারী এ মোস্তফা। মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও আসন্ন কমিটিতে সভাপতি পদপ্রত্যাশী মাহবুবুল হক সুমনকেও শুভ কামনা জানিয়ে পোস্ট দিতে দেখা যাচ্ছে মোস্তফা কামালকে।

জানা গেছে, যুবলীগের সম্মেলনে ডেলিগেট কার্ড পাইয়ে দিতে তাকে ১৪ নং লালখান বাজার ওয়ার্ড যুবলীগের ‘সদস্য’ বানাতেও দ্বিধা করেননি আবুল হাসনাত বেলাল; অভিযোগ-আর এক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন মাহবুবুল হক সুমন।

তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, যুবলীগে কি নেতার এমন আকাল পড়েছে যে, যুবদল নেতাকে ধরে এনে যুবলীগের ডেলিগেট বানাতে হবে? অভিযুক্তরা কেন, কার স্বার্থে এই কাজ করছেন, সংগঠনের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করছেন তা তারাই ভালো বলতে পারবেন– এমন অভিমত চট্টগ্রামের রাজনীতি-সচেতন ব্যক্তিদের।

যুবদল থেকে কীভাবে যুবলীগ নেতা হয়ে গেলেন, ডেলিগেট কার্ডই বা পেলেন কী করে জানতে চাইলে মো. মোস্তফা কামাল একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘মাহবুবুল হক সুমন ভাইয়ের পক্ষে আমি সম্মেলনে গিয়েছিলাম। কোনো পদ-পদবিতে না থাকলেও আমি যুবলীগের একজন সমর্থক। সেই জায়গা থেকেই আমি সুমন ভাইকে সমর্থন জানাতে সম্মেলনে ডেলিগেট হিসেবে গিয়েছিলাম।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কখনোই বিএনপি-যুবদলের রাজনীতি করিনি। আমি গ্রুপিং রাজনীতির শিকার। আমি কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলাল ভাইয়ের সমর্থক, তার রাজনীতি করি। তাই তার প্রতিপক্ষ দিদারুল আলম মাসুমের সাথে আমার সম্পর্ক ভালো না। তারাই এসব মিথ্যা প্রচার করছে। আর ছবি সবার সাথেই থাকতে পারে। আবার অনেকে প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানোয়াট ছবিও বানাতে পারে।’

যুবদল নেতাকে যুবলীগ নেতা বানানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলাল একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘তাকে আমি চিনি। কিন্তু আমি বলছি, বিএনপির রাজনীতি করেছে এমন কেউ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পায়নি? আর আপনাদের কাছে আমি ছাড়া নিউজের কোনো টপিক নেই? না থাকলে বলেন।’

কথোপকথনের এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন বেলাল। বলেন, ‘ফোন করা বন্ধ করেন মিয়া, যা মন চায় তা লেখেন মিয়া।’ এসময় প্রতিবেদককে বিশ্রি ভাষায় গালি দিয়ে ফোন কেটে দেন বেলাল।

একজন যুবদল নেতা কী করে যুবলীগের সম্মেলনে কাউন্সিলর কার্ড পেলেন প্রশ্নে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহবুবুল হক সুমন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ধরনের অনুপ্রবেশের অসংখ্য, অভিযোগ আমাদের কাছে প্রতিনিয়ত আসছে। যদি আমাদের হাতে নেতৃত্ব আসে তাহলে বিএনপি-জামায়াত ও হাইব্রিড নেতাদের মত অনুপ্রবেশকারীরা দলে আসতে পারবে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দলের প্রশ্নে, সংগঠনের প্রশ্নে আমার কাছে কোনো আপস নেই। যাকে তাকে যুবলীগ নেতা কিংবা কাউন্সিলর বানানো যাবে না। সে আবুল হাসনাত বেলালের অনুসারী হোক কিংবা দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারী হোক, যদি সে বিএনপির লোক হয় এ ধরনের প্রমাণ থাকে তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’