চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ‘পছন্দের লোকদের’ নির্বাচনী কেন্দ্রের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
বুধবার সকাল ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে তাকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ উঠে।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, কয়েকদিন আগে বাহারছড়া ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যানপ্রার্থী তাজুল ইসলাম ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা (প্রিজাইডিং অফিসার) নিয়োগের জন্য তাকে ‘একটি তালিকা’ দিয়েছিলেন। ওই তালিকাতে থাকা ব্যক্তিদের বাহারছড়া ইউনিয়নের সকল ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দিতে বলেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাচন অফিসের পক্ষে ওই তালিকা অনুযায়ী সবকটি ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, বুধবার সকালে এমপি আমাকে ইউএনও কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ না দেওয়ার কারণ জানতে চান। এক পর্যায়ে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করেন। এসময় এমপির সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন মারধর করেন। তাদের মধ্যে ওলামা লীগ নেতা মাওলানা আক্তার ও চেয়ারম্যানপ্রার্থী তাজুল ইসলামও ছিলেন। এমনকি বাঁশখালী থানার একজন এসআইও ঘটনাস্থলে থাকলেও তিনি বাঁধা দেননি। তবে ঘটনার সময় ইউএনও স্যার তার কার্যালয়ে ছিলেন না।
এদিকে বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী তাজুল ইসলামকে স্থানীয়রা চিনেন চট্টগ্রামের বাঁশখালী আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন জানান, ইউপি নির্বাচনে তার অনুসারীদের নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ও তার অনুসারীরা। এ বিষয়ে ঢাকাস্থ নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ছনুয়া ইউনিয়নের কাদেরীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ফরহাদ উদ্দিন নামে এক শিক্ষককে বাহারছড়া ইউনিয়নে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেন নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম। আমি খবর নিয়ে দেখলাম ওই বিদ্যালয়ে এই নামে কোন শিক্ষক নেই। বুধবার উপজেলা প্রশাসনের অফিসে একটি মিটিংয়ে আমি তার কাছ থেকে বিষয়টি জানতে চাই। তখন তিনি আমাকে ধমক দিয়ে বলেন, আমার কাছে জবাব দিতে রাজি নন। তখন উপস্থিত অন্যরা তাকে বকঝকা করে। এই ঘটনাকে রং লাগিয়ে প্রচার করছে সে। মারধরের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচনী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি এমন কোন কথা বলিনি। এরপরও যদি আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকে তাহলে তিনি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে অভিযোগ দিতে পারতেন। আমাকে তিনি মারধর করতে পারেননা। মারধরের সময় স্যারকে (আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা) আমি ফোন করতে চাইলে পুলিশের একজন এসআই আমার ফোনটি কেড়ে নেন।
এদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে বাঁশখালী থানার ওসি আলমগীর হোসেনের মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।