জোবায়েদ ইবনে শাহাদাত : চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সম্মেলনে কাউন্সিলর ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচনে বরাবরই বিরোধিতা করে আসছিলেন প্রার্থীরা। বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই যুবলীগের কমিটি না থাকায় কাউন্সিলর সিলেকশন প্রক্রিয়া নিয়েও ছিল প্রশ্ন। শেষ পর্যন্ত কাউন্সিল ভোট না হলেও কাউন্সিলর সিলেকশনে অনিয়মের অভিযোগে এবার তোপের মুখে পড়েছেন নগর যুবলীগের দায়িত্বশীল নেতারা।
অভিযোগ উঠেছে, মহানগর যুবলীগের সম্মেলনে লিস্টেড কাউন্সিলরদের নিয়ে। নিজেদের মন মতো লোকজনকে কাউন্সিলর সাজিয়েই এসব তালিকা করা হয়েছে। প্রায় সকল ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তালিকায় বিএনপি-জামায়াত, মাদকাসক্ত ও বিতর্কিতদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এক্ষেত্রে নগর যুবলীগের সম্মেলনে ভোটাভুটি হলে এসব বিতর্কিতরাই প্রার্থী বাছাই করতেন।
গত ৩০ মে কেন্দ্রীয় যুবলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সম্মেলনের ২য় অধিবেশনে পদপ্রত্যাশিদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতা ও কাউন্সিলররা। এসময় এমন কিছু মুখের দেখা মিলে যারা পারিবারিক সূত্রে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়। যেমন, ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মো. সালাউদ্দিন।
২০২১ সালের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের সাথে কোমর বেঁধে প্রচার-প্রচারণায় নেমেছিলেন তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। সেসময় ডা. শাহাদাতের কোতোয়ালি ক্যাম্পেইনে প্রকাশ্যে গণসংযোগ করছেন থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন এবং তার শ্যালক ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মো. সালাউদ্দিন।
সালাউদ্দিনের পারিবারিক আদর্শ ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের পুরোটা জুড়েই বিএনপি। কোন দলকে সমর্থন করা দোষের কিছু না হলেও একজন বিএনপি নেতার হঠাৎই আওয়ামী রাজনীতিতে পদার্পণ ও যুবলীগের সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাতারাতি কাউন্সিলর বনে যাওয়াকে মোটেও ভালোভাবে নিচ্ছেন না স্থানীয় রাজনীতিবিদরা।
তারা জানান, সালাউদ্দিন ও তার পরিবার অনেক আগে থেকেই বিএনপি করে বিষয়টা এলাকার সকলেরই জানা। তার মত একজন ব্যক্তিকে হঠাৎ মহানগর যুবলীগের সম্মেলনে দেখে অনেকটা অবাক হয়েছেন অনেকেই। এমন অনুপ্রবেশের ঘটনায় সালাউদ্দিনকে নয় বরং ওয়ার্ড ও নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের দায়ী করছেন তারা।
শুধু সালাউদ্দিনই নন, ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য কিংবা কেউই নন এমন ব্যক্তিকেও (ইকরাম চৌধুরী আকিজ) কাউন্সিলর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নগর যুবলীগের সভাপতি চন্দন ধর ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমানের সময় (দীর্ঘ ১৯ বছর আগে) ঘোষিত ওয়ার্ড কমিটিতেও নেই তাদের নাম। বিষয়টি ঢাকতে এই কমিটির অনুমোদন পত্রটিও গায়েব করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে, এ বিষয়ে আসন্ন কমিটির এক প্রার্থী প্রতিবাদ করেছিলেন নগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ নেতাদের কাছে। যদিও বিষয়টিকে তারা (আহ্বায়ক ও যুগ্ম-আহ্বায়ক) তেমন একটা গুরুত্ব দেননি। আরও অনেক প্রার্থীই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ হলেও প্রতিবাদ করলে পদ-প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তা সমস্যার কারণ হতে পারে মনে করে চুপচাপ সহ্য করে গেছেন।
জানতে চাইলে ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ উদ্দিন আনছারী একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই ভদ্রলোক (মো. সালাউদ্দিন) ১৯ বছর আগে গঠিত ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি তিনি বিএনপির রাজনীতি করেন না। আর ডা. শাহাদাতের প্রচারণার বিষয়টিও ভুল। মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় কে বা কারা ছবিটি তুলেছে।’
এসময় ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড যুবলীগের কমিটির তালিকা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি সেটি আছে বলে দাবি করেন। তবে প্রতিবেদক সেই তালিকাটি দেখতে চাইলে দিতে অসম্মতি জানান তিনি। বলেন- ‘আমি কার কাছে দিবো, আপনার কাছে? আমি কি আপনাকে তালিকাটি দিতে বাধ্য? আপনাকে এই অভিযোগ কে করেছে সেটা বলুন।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমেই নির্দিষ্ট অর্গানোগ্রামে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এক্ষেত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতি হওয়া স্বাভাবিক বিষয়। যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই এর সমাধানের একটা পথ আমরা বের করে ফেলবো। দায়িত্বে না থাকলেও এব্যাপারে আমরা সহযোগিতা করবো।’