সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

কোন ক্যাটাগরিতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে সিভি দিলেন তারা?

যুবলীগের উত্তর, দক্ষিণ, মহানগর সম্মেলন

প্রকাশিতঃ ২৭ মে ২০২২ | ৯:১২ অপরাহ্ন


একুশে প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী রাশেদ খান মেনন গিয়েছিলেন সিভি জমা দিতে। সিভিতে চট্টগ্রাম সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি পদ ছাড়াও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি।

ক্রাইটেরিয়ায় বলা আছে- জেলা বা মহানগর ছাত্রলীগ, যুবলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক অথবা উপজেলা বা থানা ইউনিটের নিদেনপক্ষে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হতে হবে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে সিভি জমাদানের ক্ষেত্রে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগের বর্তমান বা সাবেক সদস্য থাকলেও সিভি জমা দেওয়া যাবে।

পূর্বোক্ত রাশেদ খান মেনন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য হলেও এর স্বপক্ষে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারছিলেন না। ফলে আটকে যায় মেননের সিভি জমাদান কার্যক্রম। শেষমেশ তিনি যেই কমিটির সদস্য ছিলেন সেই কমিটির সভাপতি লিয়াকত সিকদারের সাথে ফোনে সংযুক্ত করে দেন সিভি গ্রহণের দায়িত্বে থাকা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগকে। লিয়াকত সিকদার তার কমিটির সদস্য ছিল মর্মে জানানোর পর অবশেষে রাশেদ খান মেননের সিভি জমা নেওয়া হয়।

একইভাবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের রিপন-রোটন কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেনের সিভি জমা নিয়ে সৃষ্টি হয় ভোগান্তির। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য উল্লেখ করলেও সাজ্জাত এর স্বপক্ষে কোনো কাগজ দিতে পারেননি। ফলে সিভি জমা নেওয়া হচ্ছিল না। বেকায়দায় পড়েন সাজ্জাত। কবেকার সেই সদস্যপদ প্রদানের চিঠি এখন কই পাবেন? ঢাকা বসেই ছোটভাইকে ফোন দিয়ে পুরোনো কাগজপত্র থেকে চিঠিটা খুঁজে বের করার দায়িত্ব দিলেন। দিনভর তল্লাশি চালিয়ে সেই চিঠি খুঁজে বের করা হয়। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে সেই চিঠি প্রাপ্ত হয়ে পরদিন প্রিন্ট কপি দেওয়ার পর গৃহীত হয় সাজ্জাতের সিভি।

পক্ষান্তরে এমন কড়াকড়ির মাঝেই কোনো ক্রাইটেরিয়াতে পড়ে না এ ধরনের বেশ কয়েকজনের সিভি গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কীসের জোরে, কার তদবিরে, কোন যাদুবলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের জন্য তাদের সিভি জমা নেওয়া হলো?

অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হতে সিভি জমা দেওয়া সুমন চৌধুরী চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছাড়া থানা-উপজেলা, জেলা কিংবা কেন্দ্রের কোনো দায়িত্বে ছিলেন না। এরপরও বাধাহীনভাবে সিভি জমা দিয়েছেন তিনি।

একইভাবে মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন মিঠুন ছিলেন ২০০০ সালে চট্টগ্রাম আইন কলেজ ছাত্রসংসদের জিএস। যুবলীগের বেঁধে দেওয়া ক্রাইটেরিয়াতে পড়ে এমন কোনো দায়িত্বে ছিলেন না। তবুও তিনি চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের জন্য সিভি জমা দিতে পেরেছেন।

এ বিষয়ে জানতে আজ শুক্রবার জসিম উদ্দিন মিঠুনের নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

অন্যদিকে, সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের ছোটভাই বিজিএমইএ’র প্রথম সহ সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়িক সংগঠনের সাথে জড়িত থাকলেও রাজনীতিতে উল্লেখ করার মতো পরিচয় হচ্ছে তিনি মোহরা ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে তিনিও কোনো ভোগান্তি ছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সভাপতি পদের জন্য সিভি জমা দিয়েছেন সোহাগের কাছে।

কোনো ক্রাইটেরিয়াতে না পড়েও কীভাবে সিভি জমা দিয়েছেন জানতে চাইলে সৈয়দ নজরুল ইসলাম একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আপনি যেটার কথা বলছেন সেটা রাজনৈতিক ক্রাইটেরিয়া। সেটা অনুযায়ী আমার ম্যাচ হয় না। তবে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও অনেক কর্মী মাঠ পর্যায়ে আছে যারা যোগ্যতা রাখে। সেজন্য কেন্দ্র পরবর্তীতে আবারও সিভি কালেকশান (সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ব্যতীত অন্যান্য পদে ১০ মে সিভি আহ্বান করা হয়) করেছে। সেসময় আমি সিভি পাঠিয়েছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেই বিজ্ঞপ্তিতে অন্যান্য পদের কথা বলা হয়নি। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদের ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী যারা সিভি দিয়েছে, এর বাইরেও যারা দিতে চায়, তাদের সিভি দিতে বলা হয়েছে। যেহেতু আগের সিভিতে কেন্দ্র যোগ্য নেতৃত্ব পায়নি তাই পুনরায় সিভি আহ্বান করেছে। কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেবে কাকে কোন পদ দেবে। সে অনুযায়ী আমি সিভি পাঠিয়েছি। আমি জানি আমি কীভাবে সিভি দিয়েছি।’

যদিও ১০ মে কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ স্বাক্ষরিত সেই বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ব্যতীত অন্যান্য পদ-প্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত আহ্বান করার কথা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে হোয়াটসঅ্যাপে বিষয়টি জানতে চেয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।