জোবায়েদ ইবনে শাহাদাত : চট্টগ্রাম মহানগরের বেশ কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতার চোখ এখন যুবলীগের কমিটির দিকে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ। আগামী ৩০ মে মহানগর যুবলীগের সম্মেলন ও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের কথা রয়েছে। নেতৃত্ব কাদের হাতে যাচ্ছে, নেতা-কর্মীদের আলোচনায় ঘুরেফিরে এ বিষয়টি প্রধান্য পাচ্ছে।
যুবলীগ সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এবার মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সম্পাদকসহ অন্যান্য পদের প্রার্থী তালিকায় সাবেক ছাত্রনেতাদের গুরুত্ব বাড়তে পারে। ছাত্রলীগ নেতাদেরকে যুবলীগের দায়িত্ব দিলে সংগঠনের ভালো করার সম্ভাবনা থাকে। এ কারণে সাবেক ছাত্রনেতারা গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার দৌড়ে আছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের নতুন কমিটিতে সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন মুহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন; তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য, ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১৯৯১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সংগঠনটির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ সালে বিএনপি সরকারের রোষানলের শিকার হয়ে ৬ মাস জেলও খাটতে হয়েছে তাকে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর একদল তরুণকে নিয়ে ‘করোনা আইসোলেশন সেন্টার, চট্টগ্রাম’ গড়ে তুলে আলোচিত হন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাজ্জাত।
জানতে চাইলে মুহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘নতুন কমিটিতে বিতর্কিত ও অভিযুক্তদের বাদ দেওয়া গেলেই যোগ্যরা মূল্যায়িত হবেন। এজন্য অবশ্যই ডোপ টেস্ট করা প্রয়োজন। আর চট্টগ্রামের কমিটিগুলোতে গ্রুপিংয়ের প্রভাব আমরা দেখে আসছি। আমরা চাই এই ধারার বিপরীতে গিয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগ ইতিহাস গড়ুক। আমরা আশা করছি, এবার ভালো কিছু হবে।’
মহানগর যুবলীগের আসন্ন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হতে চান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দেবাশীষ পাল দেবু; তিনি বলেন, ‘আমি সাবেক ছাত্রনেতা, তৃণমূলে রাজনীতি করেছি। আমাদের ত্যাগের মূল্যায়ন হোক, তা আমরা চাই। আর আমার মনে হয় এবার যোগ্যতার মূল্যায়ন করা হবে, হওয়া উচিত। যেহেতু এই যুবলীগ একেবারে আলাদা, তাই কোন অনুপ্রবেশকারী-হাইব্রিড নেতারা সুবিধা করতে পারবে না।’
পদপ্রত্যাশীদের ডোপ টেস্ট করানো জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছতা আনতে দলের হাইকমান্ড যদি বলে ডোপ টেস্ট করাতে হবে, তাহলে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব আনতে গেলে প্রশ্ন উঠবে। যেহেতু মহানগর যুবলীগের ওয়ার্ড কমিটি নেই। তবে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যদি হস্তক্ষেপ করেন তাহলে নেতৃত্ব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আর ব্যক্তিগত পছন্দ কিংবা গ্রুপিংয়ের প্রভাব এই কমিটিতে পড়ুক, সেটা আমরা চাই না। আশা করছি, এমনটা এবার হবে না।’
এদিকে মহানগর যুবলীগের সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়া সুরঞ্জিৎ বড়ুয়া লাভু ছাত্ররাজনীতিতে দীর্ঘ সময় পার করেছেন। তিনি ওমর গণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তার কথায়ও উঠে এসেছে সাবেক ছাত্রনেতাদের মূল্যায়নের বিষয়টি। একুশে পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘অনেকে টেন্ডারবাজি করতে গিয়ে মামলা খেয়েছেন, আর আমরা যারা দলের দু:সময়ে ছিলাম, তারা মামলা খেয়েছি দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে। এখন যদি বলা হয় টেন্ডারবাজির মামলার আসামি ত্যাগী, সেটা আমাদের জন্য কষ্টের। এভাবেই সাবেক ছাত্রনেতারা মূল্যায়িত হন না।’
সুরঞ্জিৎ বড়ুয়া লাভু আরও বলেন, ‘মাদকাসক্ত ও বিতর্কিতরা যাতে দলে আসতে না পারে। এজন্য ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। ত্যাগী, যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হোক। যুবলীগের নেতৃত্বে যাতে বিতর্কিতদের আনা না হয়। আর কাউন্সিলর ভোট কিংবা সমঝোতা যা-ই হোক না কেন স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। এক্ষেত্রে কেন্দ্র যে প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করছে সেটা আমরা অবজারভেশন করছি। আর অনেক সময় গ্রুপিং রাজনীতির প্রভাবে যোগ্যদের বঞ্চিত হতে হয়, আশা করছি এবার এমন কিছু হবে না।’
যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে ডোপ টেস্টের বিকল্প দেখছেন না যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ওয়াহিদুল আলম শিমুলও; তিনি একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘নেতৃত্ব তৈরিতে স্বচ্ছতার জন্য ডোপ টেস্টের বিকল্প নেই। এছাড়া অনেক প্রার্থীই মিথ্যা তথ্য দিয়ে সিভি জমা দিয়েছেন। বিষয়গুলো যাচাই করা প্রয়োজন। আর আমরা চাই সাবেক ছাত্রনেতাদের মূল্যায়ন করা হোক। কেন্দ্রও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আশা করছি, এবার অবহেলিতদের মূল্যায়ন করা হবে।’
‘এখানে নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কাউন্সিলর ভোট এবং সমঝোতা নিয়েও একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আছে। সমঝোতায় কখনো যোগ্যরা মূল্যায়িত হয় না। আর ভোটের কথা যদি বলি, মহানগর যুবলীগের বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই আজ পর্যন্ত সম্মেলন হয়নি। সেক্ষেত্রে কাউন্সিলর ভোট কীভাবে সম্ভব? যদি কাউন্সিলর ভোটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে তাহলে কেন্দ্রের মনিটরিং অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া চট্টগ্রামে গ্রুপিং রাজনীতির একটি প্রভাব রয়েছে, এটাই বাস্তবতা। আমরা চাই সার্বিকভাবে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হোক।’ বলেন ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল আলম শিমুল।
মহানগর যুবলীগের সভাপতি পদে সিভি জমা দিয়েছেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম, ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন প্রমুখ। মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের তালিকায় আছেন ওমর গণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান তারেক, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াছ উদ্দিন, কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুমন চৌধুরী প্রমুখ।
এদিকে, গত ১২ মে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম তার বক্তৃতায় সাবেক ছাত্রনেতাদের মূল্যায়ন করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দুর্দিনের কর্মীদের তুলে আনতে। আপনারা দেখবেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের কমিটিতে সাবেক ছাত্রনেতা ও দুর্দিনের কর্মীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আমরা সারা দেশের যুব রাজনীতিতে জিনিসটা আনতে চাই। বিতর্কিতরা ছিটকে পড়বে, আর দলের দু:সময়ের যে সাথীরা ছিটকে পড়েছেন তাদের আবার ফিরিয়ে আনা হবে।’
এ অবস্থায় মূল্যায়ন পাওয়ার আশা করছেন সাবেক ছাত্রনেতারা। অন্যদিকে যুবলীগের কমিটিতে চট্টগ্রামের জন্য চমক আছে বলে সম্প্রতি একুশে পত্রিকাকে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাে. মাইনুল হােসেন খান নিখিল। রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের মতে, অবহেলিত ছাত্রনেতাদের মূল্যায়নই হতে পারে সেই চমক।