শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

রাঙ্গুনিয়ায় আওয়ামী লীগের কমিটিতে ‘বিএনপি নেতা’

প্রকাশিতঃ ১৭ মে ২০২২ | ৯:৩৭ অপরাহ্ন


এম মোয়াজ্জেম হোসেন, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়মনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটিতে ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক পদ পেয়েছেন আবু বক্কর ছিদ্দিক; যিনি আবার একই ইউনিয়নে বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক পদে আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে অভিযোগ করে উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসিরউদ্দিন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আবু বক্কর ছিদ্দিক বিএনপির রাজনীতি করেন। ২০০৯ সালে গঠন করা মরিয়মনগর ইউনিয়ন বিএনপির কমিটিতে তিনি যুগ্ম সম্পাদক পদে আছেন। সেই কমিটি এখনও বহাল আছে। বিষয়টি আমি তথ্যমন্ত্রী মহোদয় ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে জানিয়েছি। তথ্যমন্ত্রী মহোদয় নির্দেশ দিয়েছেন যাচাই বাছাই করে বিতর্কিতদের সরিয়ে দিতে।’

তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনের পর অনেকেই আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। মরিয়মনগর ইউনিয়ন বিএনপির কমিটিতে থাকা আবু বক্কর ছিদ্দিক ও ইসমাইল নামের দুইজন ২০০৮ সালের পর তথ্যমন্ত্রীর হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছিলেন। আওয়ামী লীগে যোগদান করার দুই বছর পর আবু বক্কর ছিদ্দিককে আওয়ামী লীগের স্থানীয় মহল্লা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং সর্বশেষ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক পদ দেয়া হয় তাকে।’

যদিও আবু বক্কর ছিদ্দিক একুশে পত্রিকার কাছে দাবি করেছেন, অতীতে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। ব্যবসার কাজে ঢাকায় থাকতেন। ২০০৯ সালের দিকে যখন চট্টগ্রামে থাকা শুরু করেন তখন তথ্যমন্ত্রী তাকে মরিয়মনগর ইসলামীয়া আলিম মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেন। তিনি একই মাদ্রাসায় পরপর তিনবার একই পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। গত চার বছর আগে আওয়ামী লীগের মহল্লা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী ড. হাছান মাহমুদের এজেন্ট ছিলেন।

আবু বক্কর ছিদ্দিক অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাকে বিএনপি নেতা বানানোর গুজব ছড়াচ্ছেন নাসিরউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। মরিয়মনগর ইসলামীয়া আলিম মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হয়েছেন সোলাইমান পিনু। নাসিরউদ্দিন মনে করছেন মন্ত্রী মহোদয়কে বলে পিনুকে আমি সভাপতি বানিয়েছি। তাই তিনি আমার বিরুদ্ধে গুজব ছড়াচ্ছেন।’

তবে ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন মরিয়মনগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ সৈয়দ; তার দাবি আবু বক্কর ছিদ্দিক তার কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। তবে বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নেন না আবু বকর সিদ্দিক।

জানতে চাইলে মরিয়মনগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ সৈয়দ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলাম। ২০০৯ সালে যখন বিএনপির কমিটি হচ্ছে, তখন দেশে আসি। আর তখন এলাকার মুরুব্বিরা আমাকে সভাপতি হতে বললে, আমি দায়িত্ব নিই। তখনই এ কমিটি সাজানোর জন্য এলাকার আরও অনেকের নাম দেন এলাকার মুরুব্বিরা। সে কমিটিতেই আবু বক্কর ছিদ্দিকের নামও ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘আবু বক্কর ছিদ্দিককে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, যেহেতু আমার এলাকারই সন্তান। তবে বিএনপির কমিটিতে আবু বক্কর ছিদ্দিকের নাম থাকলেও কখনো বিএনপির কোনো মিটিং, মিছিল কিংবা সমাবেশে তাকে দেখা যায়নি এবং দলীয় বিষয়েও তার সাথে কখনো আলাপ হয়নি। আর আবু বকর দীর্ঘদিন এলাকায় ছিলেনও না।’

আবু বক্কর ছিদ্দিক আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন কি না, সে বিষয়ে কিছু জানেন না বলে উল্লেখ করেন মরিয়মনগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ সৈয়দ।

এদিকে ২০০৯ সালে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠনের যে কাগজ একুশে পত্রিকার হাতে এসেছে, তাতে যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে মো. আবুল সিদ্দিকের নাম দেখা যায়; অন্যদিকে গত ১৪ মে গঠিত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটিতে ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের নামের পাশে আবু বক্কর ছিদ্দিক লেখা।

এ বিষয়ে মরিয়মনগর ইউনিয়ন বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে একুশে পত্রিকাকে জানান, ‘আবু বক্কর ছিদ্দিক ও আবুল সিদ্দিক একই মানুষ। একই ব্যক্তিকে এলাকায় দুই নামে চিনেন তারা।’