ভূমি মালিকদের মামলার ফাঁদে ফেলে ‘কমিশন-বাণিজ্য’

মোহাম্মদ রফিক : চট্টগ্রামে সংঘবদ্ধ চক্রের দায়ের করা মামলার ফাঁদে আটকা পড়ে সাত বছর ধরে জমির ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন না ভূমির শত শত মালিক। শুধু চট্টগ্রামের তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে দায়ের করা একটি মামলার কারণে দুটি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণের অন্তত এক হাজার কোটি টাকা আটকে রয়েছে সরকারি কোষাগারে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় জমির মালিকদের হাতে ক্ষতিপূরণের চেক দিতে পারছে না জেলা প্রশাসন। উক্ত মামলাটি করেছেন বৃটিশ আমলের জমিদারের বংশধর দাবি করা নগরের হালিশহর এলাকার বাসিন্দা এম আহসান উল্লাহর ছেলে মো. রকিবুল হাসানসহ কয়েকজন।

প্রকল্প দুটি হলো- বে-টার্মিনাল এবং সিটি আউটার রিং রোড (ফিডার রোড-১)। আউটার রিং রোড প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ শেষ হলেও তিনটি ফিডার রোড বা সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হচ্ছে না মামলার জটিলতার কারণে। ভুক্তভোগীরা গত সাত বছর ধরে জেলা প্রশাসনের এলএ অফিসে গিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও মামলার কারণে ক্ষতিপূরণের চেক দিতে পারছে না জেলা প্রশাসন।

অভিযোগ উঠেছে, শত শত ভুক্তভোগীকে মামলার ফাঁদে আটকে দিয়ে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ কমিশন বাণিজ্যে নেমেছে সংঘবদ্ধ চক্র। ভূমির যেসব মালিক ক্ষতিপূরণের ২০ থেকে ৪০ শতাংশ টাকা হাতে দিতে রাজি হচ্ছেন, তাদেরকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিচ্ছে চক্রটি। পরে আদালতে হলফনামা জমা দিয়ে চক্রটি ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে তুলে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

কথিত বৃটিশ আমলের জমিদারের বংশধর দাবি করা রকিবুল হাসানই মূলত মামলার বিষয়গুলো দেখছেন; তার বাড়ি চট্টগ্রাম নগরের সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায়। রকিবুল হাসানের দাবি, তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলার (৬২১/২০১৪) ৬৮ জন বাদী বৃটিশ আমলের জমিদার শেখ আবদুল আলী মালুমের বংশধর। শেখ আবদুল আলী মালুমের তিন স্ত্রীর মধ্যে এক স্ত্রীর সন্তান জমি বিক্রি করতে করতে আজ এটুকুতে নিয়ে এসেছেন। বাকি দুই স্ত্রীর সন্তানেরা সকল সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তারা বঞ্চিতদের দলে। ১৮৮৫ সালের একটি দলিল এবং আবদুল আলী মালুমের পাঁচ শতাধিক উত্তরাধিকারীর তালিকা আছে। আর এ তালিকাকে পুঁজি করেই আদালতে মামলা করেছেন রাকিব। এ মামলার বিবাদীর সংখ্যা এক হাজার ৫৬৮ জন।

রকিবুল হাসান বলেন, ‘আমি কিছু লোককে মামলা থেকে অব্যাহতি দিচ্ছি। তাদের সাথে নেগোসিয়েশন হয়েছে। যাদের কাগজ আছে, ক্ষতিপূরণের টাকা থেকে ২০-২২ শতাংশ আমাকে দেওয়া হবে এমন চুক্তির মাধ্যমে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিচ্ছি।’

ভুক্তভোগী প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রকিবুল হাসানের নেতৃত্বে চক্রটি আমাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমিশন দাবি করছেন। আমরা জমির খাজনা দিচ্ছি। ভবন তৈরির জন্য নকশাও অনুমোদন দিয়েছে সিডিএ। ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে শত শত ভুক্তভোগী সাত বছর ধরে এলএ অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। দালাল ও সিন্ডিকেট চক্রে দিশেহারা ক্ষতিগ্রস্তরা। উক্ত চক্রের মধ্যে দোস্ত মোহাম্মদ, দ্বীন মোহাম্মদ, উত্তম মহাজন প্রকাশ নব মহাজন, হাবীব, রাজিব দাশ, আবুল কাশেম, হাটহাজারীর কথিত প্রফেসর মুছা কলিমুল্লাহ, নগরের খেজুরতলা এলাকার জনাব আলী, হাবীব ও বারেক রয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। এছাড়া চক্রটির সঙ্গে যুক্ত আছে সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যাংকার, দলিল লেখক, এলএ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশও।

জানা গেছে, ‘মামলাবাজ’ চক্রটিকে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমিশন না দিলে কোনোভাবেই মিলছে না ক্ষতিপূরণের চেক। জাহেদুল ইসলাম নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘১৯৬১-৬২ সালে এলএ কেইস (১০৫) মূলে সরকার আমাদের উত্তর পতেঙ্গা মৌজায় আমাদের পুনর্বাসন করে। ২০১৫-২০১৬ এলএ কেইস (৯) মূলে জেলা প্রশাসন আমাদের সরকার কর্তৃক বরাদ্দ দেওয়া জমি অধিগ্রহণ করে। মামলাবাজ রকিবুল হাসান ও তার সহযোগীরা আদালতে মামলা করে ক্ষতিপূরণের টাকা আটকে দিয়েছে। সাত বছর ধরে আমরা ভুগছি। অথচ সরকারি তরফ থেকে আমরা আইনি কোন সহায়তা পাচ্ছি না।’

আরেকজন ভুক্তভোগী আহমদ আলী বলেন, ‘আমরাই ক্ষতিপূরণের টাকা পাব। কিন্তু আমাদেরকে এলএ অফিসে ঢুকতে দেওয় হয় না। এলএ অফিসে কদর দালালদের। এলএ অফিসে যেতে যেতে হাঁটুর মগজ শুকিয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বছরের পর বছর ঘুরে যখন আপনি ক্ষতিপূরণের টাকা পাবেন না, তখন আপনাকে ‘আশার আলো’ দেখাবে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ ঘুষ বা কমিশন। আর তাতে রাজি হলেই মিলবে ক্ষতিপূরণের সেই টাকা।’

গত বছরের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কমিশন বাণিজ্য নিয়ে একটি অনুসন্ধান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন, চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২। এ সংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকায় দুদকের সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। উক্ত প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পকে ঘিরে ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ক্ষতিপূরণের টাকার ২০-৩০ শতাংশ ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে ১৮ জনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে দুদক। যাদের মধ্যে ৬ জন ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ৬ জন উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারী। দুজন দলিল লেখক ও চারজন সুবিধাভোগী দালাল। প্রতিবেদন দাখিলের প্রায় এক বছর পার হয়ে গেলেও ওই ১২ কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানা যায়নি। বন্ধ হয়নি কমিশন বাণিজ্য।

জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ঘিরে সরকার গ্রহণ করেছে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প। প্রকল্পগুলোর প্রাথমিক ধাপই হচ্ছে জমি অধিগ্রহণ। বর্তমানে চট্টগ্রামে শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ভূমি অধিগ্রহণ চলছে। এর মধ্যে কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ, রাঙ্গুনিয়া সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প, এলএনজি গ্যাস লাইন স্থাপন, কর্ণফুলী উপজেলা ভবন, চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল, মিরসরাই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, দোহাজারি-ঘুমধুম রেললাইন স্থাপন প্রকল্প। কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর চাক্তাই খাল থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ। এসব প্রকল্পের অধীনে শত শত কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে।

প্রসঙ্গত, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করার ক্ষেত্রে সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের জমির প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ২০০ শতাংশ অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করে থাকে। কিন্তু এ টাকার ওপর নজর পড়েছে দালাল ও মামলাবাজ চক্রের। জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, মামলার ফাঁদে আটকে দিয়ে পরে কমিশন বাণিজ্যে লিপ্ত চক্রটির মূল হোতা রকিবুল যাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন, তাদের অনেককেই তিনি চিনেন না।
একজন ভুক্তভোগীর দাবি, মামলা পরিচালনা করার জন্য রকিবুলের টাকা-পয়সা নেই। দ্বীন মোহাম্মদ এবং দোস্ত মোহাম্মদ নামে উত্তর পতেঙ্গার দুই ব্যবসায়ী রকিবুলকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন। যারা অসংখ্য মানুষকে ভুক্তভোগী বানিয়ে ফেলেছেন। জমি অধিগ্রহণের কমিশন বাণিজ্যের সিন্ডিকেট থেকে রেহায় পাচ্ছেন না ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা। ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশে দফারফা হচ্ছে সিন্ডিকেটের সাথে। অভিযোগ আছে, উক্ত সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য মহেশখালীর মাতারবাড়ির সাইটপাড়ার মোজাফফর আহমদের ছেলে নজরুল ইসলাম। ক্ষতিপূরণের টাকা থেকে ৩০-৪০ শতাংশ প্রদানের শর্তে দুটি পৃথক দাগে নজরুল ইসলামকে আম-মোক্তারনামা দেন নগরের দক্ষিণ হালিশহর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ হাবীবুর রহমান ও আবদুল আজিজ সিকদার।

হাবীবুর রহমান যে জমির জন্য আম-মোক্তারনামা দেন সেটি হলো- উত্তর পতেঙ্গা মৌজার বিএস ৫৩৬৪ খতিয়ানের অধীন বিএস ৩৫৪৬ দাগের আন্দর .০৪৪০০ শতাংশ জায়গা। একই গ্রহীতাকে ২ নং দাতা মো. আবদুল আজিজ সিকদার দেন একই মৌজার অধীন বিএস ৬৮৮৮ খতিয়ানের বিএস ৩৫৪৫ দাগের আন্দর ০.০৯০০ শতাংশ জায়গা। এল এ কেইস নং-৯/২০১৫-২০১৬।

চুক্তিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আমমোক্তারনামা দাতাগণ নিজ নিজ সম্পত্তি বিষয়ে তদবির করা এবং মামলার বিষয়ে প্রতিহত ক্রমে আমমোক্তারনামা দাতাগণের টাকা অবমুক্ত করিতে আমমোক্তারনামা দাতাগণ নানাবিধ কারণে অক্ষম হওয়ায় তাহাদের পক্ষে একজন আমমোক্তার নিয়োগ করা যুক্তিযুক্ত বিবেচনায় আমমোক্তারনামা গ্রহিতা আমমোক্তারনামা দাতাগণের নামীয় সম্পত্তির ক্ষতিপূরণের টাকা অবমুক্ত করিয়া দিতে সম্মত হওয়ায় নিম্ন বর্ণিত শর্তাধীনে কার্যাদি করিতে আমাদের আমমোক্তার রূপে আমেমোক্তারনামা গ্রহিতাকে নিয়োগ করিলাম।”
জানা গেছে, ভূমি অধিগ্রহণ থেকে পাওয়া ৯১ লাখ টাকার চেক এবং ঘুষের ৭ লাখ টাকাসহ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে দুদকের হাতে ধরা পড়ে ভূমি অধিগ্রহণ শাখার চেইনম্যান নজরুল ইসলাম। এরপর জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার ৩৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একযোগে বদলি করা হয়। কিন্ত এরপরও থামেনি কমিশন বাণিজ্য।

জানা গেছে, বছরখানেক আগে এলএ শাখায় ইকবাল নামে একজন দলিল লেখকের অবাধ বিচরণ ছিল। তিনি কমিশন বাণিজ্যের সিন্ডিকেটে যুক্ত। তবে এখন তিনি সেখানে যান না। এখন যান রাজিব দাশ, আবদুস সালামসহ কয়েকজন। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিবেদনে উঠে আসে, বিগত দুই বছরে চট্টগ্রামের এলএ শাখায় জাল দলিলে ক্ষতিপূরণের অন্তত ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সংঘবদ্ধ চক্র।

এদিকে ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দালালদের দৌরাত্ম বন্ধে সম্প্রতি ১৩৮টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান। সিসি ক্যামেরার সার্ভার তিনি রেখেছেন নিজের কক্ষে। এরপর থেকে ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দালালদের আনাগোনা অনেকটাই কমে গেছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল।

অভিযোগ আছে, ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ৮ ধারা (পূর্বের স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল অধ্যাদেশ, ১৯৮২-এর ৭ ধারা) নোটিশ জারির পর মানুষকে হয়রানির উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ‘মামলাবাজ’ একটি চক্র টাইটেল মোকদ্দমা দায়ের করে আসছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এসব মামলার কারণে একদিকে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, অপরদিকে জমির প্রকৃত মালিকেরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র জারির পরও কেন মামলার বিষয়টি আমলে নেওয়া হচ্ছে-জানতে চাইলে এলএ শাখার এক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র দিয়ে পরিস্থিতি কাভার দেওয়া যাচ্ছে না। এজন্য ‘ভূমি অধিগ্রহণ বিধিমালা-২০২০’ নামে একটি প্রস্তাব তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেটি কার্যকর করা হলে জমির প্রকৃত মালিকদের ভোগান্তি কমে আসবে।’

চট্টগ্রাম জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী রফিকুল ইসলাম একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘সংবিধানের ৪২ (২) অনুচ্ছেদে ক্ষতিপূরণসহ বাধ্যতামূলকভাবে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে আদালতে কোনও প্রশ্ন উত্থাপন বা মামলা না করার বিষয়ে বলা হয়েছে। স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৭ এর ৪৭ ধারায় অধিগ্রহণ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমা না করার বিষয়েও বিধিনিষেধ রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে আইনের ৪ ধারা (আগের আইনের ৩ ধারা) এবং ৮ ধারা (আগের আইনের ৭ ধারা) নোটিশ জারির পর আর কোনো অভিযোগ গ্রহণের সুযোগ নেই। এ কারণে উক্ত আইনের ৪৭ ধারা যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করে ২০১৯ সালের ২১ মে পরিপত্রও জারি করেছিল ভূমি মন্ত্রণালয়। এরপরও সংঘবদ্ধ চক্র মামলার ফাঁদে ফেলে জমির প্রকৃত মালিককে কমিশন-বাণিজ্য করছে।’

দালালচক্র সক্রিয় থাকার বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের টাকা কখন ছাড় হবে সে সময়ের জন্য চক্রটি ওঁৎ পেতে থাকে। একটি এলএ কেইস (ভূমি অধিগ্রহণ মামলা) ম্যাচিউর হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট জমির মালিককে টাকা গ্রহণের জন্য ৮ ধারার নোটিশ দেয়া হয়। এসময় চক্রটি বেশ সক্রিয় হয়ে উঠে। ৮ ধারার নোটিশ জারির পর চক্রটি তথ্য নিয়ে জমির মালিকের খোঁজে মাঠে নামে। এরপর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষতিপূরণের টাকা হাতিয়ে নিতে নানা ফন্দি করে। তবে ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ২০১৯ সালের ২১ মে জারি করা পরিপত্র অনুসরণ করা হচ্ছে।’