নওফেলের সাথে এমপি লতিফের সখ্যতা নিয়ে নানা প্রশ্ন

আবছার রাফি : চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের সাংসদ এমএ লতিফের সঙ্গে আমৃত্যু বিরোধ ছিল চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর। বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করার অভিযোগে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা একাধিক মামলাও দিয়েছিলেন লতিফের বিরুদ্ধে।

এর আগে ২০১২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) টেন্ডার ও ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের কর্তৃত্ব নিয়ে বিরোধের জের ধরে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করেছিলেন এমপি লতিফকে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতিসহ নানা ইস্যুতেও মুখোমুখি অবস্থানে ছিলেন মহিউদ্দিন-লতিফ।

এ কারণে মহিউদ্দিন চৌধুরীর জীবদ্দশায় তার বাড়িতে অনেকটা নিষিদ্ধ ছিলেন এমপি লতিফ। কিন্তু মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর গলে গেছে সম্পর্কের বরফ। তাঁর সন্তান শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সাথে এখন দারুণ সখ্যতা লতিফের। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর চশমা হিলের বাড়িতে একাধিকবার গেছেন তিনি। নওফেলও প্রয়োজনে যোগাযোগ করছেন লতিফের সঙ্গে।

এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার (১৪ মে) রাতে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের চশমা হিলের বাসভবনে যান সাংসদ এম এ লতিফ। তিনি থাকাবস্থায় চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ৫ র্শীষ নেতা যান শিক্ষা উপমন্ত্রীর বাসায়। তারা হলেন- মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, যুগ্ম-আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, দিদারুল আলম ও মাহবুবুল হক সুমন।

এদিকে, বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির প্রতিবাদে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নগরীর লালদীঘি মাঠে আয়োজিত এক জনসভায় লতিফকে চট্টগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। তাকে গ্রেফতারের জন্য ১৫ দিনের আল্টিমেটামও দিয়েছেন তিনি। দিয়েছেন কুলাঙ্গার আখ্যা।

সেসময় নেতা-কর্মীদের সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছিলেন, ‘প্রতি এলাকায় লাঠি নিয়ে সংগঠিত হবেন। লতিফকে দেখলেই মাথায় আঘাত করবেন। আর লতিফের সহযোগীদের তালিকা করবেন। এক মাস সময় দেওয়া হলো। তালিকা করে তা আমাকে দেবেন। যে যত শক্তিশালীই হোক না কেন, আমার জীবনবাজি রেখে হলেও অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এরপর মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে নগরীর ১৬ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সাংসদ এমএ লতিফ। জিডিতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য জনসভায় লতিফকে হত্যার হুমকির অভিযোগ আনা হয়।

প্রয়াত নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে এমন বৈরি সম্পর্ক মিটিয়ে ফেলতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর থেকেই তৎপর এমপি লতিফ। সেই ধারাবাহিকতায় মহিউদ্দিন-পুত্র ব্যারিস্টার নওফেলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করার চেষ্টা করেন তিনি।

অবশ্য মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে বিরোধ যখন তুঙ্গে তখন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৎকালীন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের তরীতে ভিড়েন এমপি লতিফ। পরবর্তীতে বন্দরসহ নানা ইস্যুতে তাদের সেই সম্পর্কে ছিড় ধরে। এর ফলশ্রুতিতেই লতিফ মূলত নওফেলের সঙ্গে ভিড়েছেন বলে রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।

রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, এমপি লতিফ স্বার্থের জন্য কখন কার সঙ্গে ভিড়েন, আবার কাকে ছাড়েন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তিনি তো রাজনীতির লোক নন। রাতারাতি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এসে এমপি হয়ে গেলেই যে রাজনীতি বুঝবেন, দলের জন্য নিবেদিত হবেন-এমনটা আশা করার কোনো কারণ নেই।

এসব ব্যাপারে কথা বলতে রোববার (১৫ মে) এম এ লতিফ এমপিকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

তবে এই ইস্যুতে এমপি লতিফ একসময় গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘রাজনীতিতে চিরস্থায়ী শত্রু বলে কিছু নেই। মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে অনেক কিছুতে আমার দ্বিমত থাকলেও আওয়ামী লীগে তার অবদান কখনও অস্বীকার করিনি আমি। তার মৃত্যুর পর কোনো রাগ-ক্ষোভ থাকতে পারে না। সবকিছু ভুলে একাধিকবার গিয়েছি তার বাড়িতে। ওনার ছেলে ব্যারিস্টার নওফেল উচ্চশিক্ষিত ও ভদ্র। আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদকও তিনি। আমি যখনই যাই তার বাড়িতে আমাকে সুন্দরভাবে গ্রহণ করেন তিনি।

একই প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল রোববার একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এমপি লতিফ আওয়ামী লীগের এমপি। আমি আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীসভার সদস্য। আমার কাছে তিনি আসতেই পারেন। আমার বাবার মৃত্যুর পর তিনি ছুটে এসেছেন, মেজবানে এসেছেন। এরপর একাধিকবার আমার বাসায় এসেছেন তিনি। আমিও তার কাছে গিয়েছি। রাজনীতিতে ডিবেট ও মতপার্থক্য থাকতে পারে। তাই বলে স্থায়ী কোনো বিরোধ থাকা উচিত নয়। আমার সাথে কারো কোনো বিরোধ নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন আমি সেভাবেই কাজ করছি।