বিয়ে পাগলা!


শান্তনু চৌধুরী : যার বিয়ে তার খোঁজ নাই, পাড়াপড়শির ঘুম নাই’। শুনতে যেমনই হোক, এটাই বাস্তব এবং স্বাভাবিকও। যে দেশ বা যে সমাজই হোক না কেন, প্রাচীন এ প্রথাই এখনো পরিবার গঠনের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত। ফলে বিয়েকে কেন্দ্র করে পাড়াপড়শিদের ঘুম হারাম হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। বছর দুয়েক আগে ঢাকার বিমানবন্দরে প্রবাসফেরত এক ব্যক্তিকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া নিয়ে দুই স্ত্রীর বাদানুবাদ, ধাক্কাধাক্কি ও টানা-হেঁচড়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়।

ভিডিও দেখে বোঝা যাচ্ছে, প্রথম বিয়ের তথ্য গোপন করে ওই ব্যক্তি দ্বিতীয় বিয়ে করেন, এবং দেশের ফেরার পর তাকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে এসেছেন দুই স্ত্রীই। খবরের কাগজে মাঝেমধ্যেই এ ধরনের খবর ছাপা হতে দেখা যায়। খবরে তথ্য-পরিচয় গোপন করে প্রতারণা করে বহু বিবাহের ঘটনা নিয়ে অনেক হাস্যরসও হয়, যেমন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ‘বিয়ে পাগল’ উপাধি দিয়ে দেয়া হয়।

২০১৯ সালের নভেম্বরের শেষদিকে ঢাকার তেজগাঁও থানার পুলিশ জাকির হোসেন ব্যাপারি নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেন, যিনি তথ্য-পরিচয় গোপন করে, প্রতারণা করে ২৮৬টি বিয়ে করেছেন। এই বিপুল সংখ্যক বিয়ে করার জন্য তিনি ১৪ বছর সময় নিয়েছেন। বিয়ে নিয়ে এমন নানা আজব আজব ঘটনাও পৃথিবীতে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে।

পঞ্চগড়ে দুই প্রেমিকাকে একসঙ্গে বিয়ে করে সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন রোহিনী চন্দ্র বর্মণ রনি নামের এক যুবক। আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীদ্বার গ্রামে এ বিয়ে হয়। স্থানীয়রা বলছেন, বলরামপুর ইউনিয়নের গাঠিয়াপাড়া এলাকার ইতি রানীর সঙ্গে দীর্ঘদিন রনির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ৪-৫ মাস আগে তারা মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করেন। তবে পারিবারিক কারণে বিয়ের বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন। এর মধ্যে নতুন করে একই ইউনিয়নের লক্ষ্মীদ্বার গ্রামের মমতা রানীর সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন রনি। মমতা রানীর সঙ্গে রাতে দেখা করতে যান তিনি। সেখানে দুজনকে একত্রে দেখে ফেলেন মমতার পরিবারের লোকজন। এক পর্যায়ে তাকে আটকে রেখে পরদিন বিয়ে দেন তারা। পরে দুই প্রেমিকাকেই তাকে বিয়ে করে ঘরে তুলতে হয়।

বয়স মাত্র ৩০, এরই মধ্যে ৪৬ সন্তানের বাবা তিনি। কয়েক মাসের মধ্যেই আরও ৯ সন্তান আসতে চলেছে পৃথিবীতে। না, কোনো রূপকথার কল্পকাহিনি বলছি না। আমেরিকার ক্যালিফর্নিয়ার বাসিন্দা কইল গর্ডির কথা বলছিলাম। তার ইচ্ছা ১০০ সন্তানের বাবা হবেন। কইল গর্ডি পেশায় একজন স্পার্ম ডোনার। সুস্থ-সবল সন্তানের জন্য ব্রিটেন এবং আমেরিকার বহু দম্পতি এখন তার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। ২০১৪ সালে প্রথমবার স্পার্ম ডোনেট করেন কইল। স্পার্ম ডোনেটের জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয় কইলকে। শরীরের দিকে নজর রাখতে হয়। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হয়।

বিয়ের আসরে বর কনের বদলে যাওয়ার ঘটনা আগে প্রায়শই ঘটতো। বিশেষ করে এক মেয়েকে দেখিয়ে অন্য আরেকজনকে বিয়ে দেয়ার ঘটনাও কম নয়। সম্প্রতি ভারতে এমন একটি ঘটনা ভাইরাল হয়েছে। তিন মেয়ের একসঙ্গে বিয়ে দিচ্ছেন বাবা। সব আয়োজন সম্পন্ন। বিয়ের আসরে উপস্থিত বর-কনেরা। সঙ্গে রয়েছেন পুরোহিত, অতিথিরাও। হঠাৎ দেখা দেয় বিদ্যুৎ–বিভ্রাট। কিন্তু লগ্ন বয়ে যাচ্ছে। তাই আঁধারের মধ্যেই বিয়ের রীতি এগিয়ে চলে। আর তাতেই বাধে বিপত্তি। অন্ধকারে ভুলবশত অদলবদল হয়ে যায় বর। যদিও শেষ রক্ষা হয়েছে। একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে মস্ত এই ভুল ধরা পড়ে। ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মধ্যপ্রদেশের আসলানা গ্রামে বসেছিল বিয়ের ওই আসর। স্থানীয় বাসিন্দা রমেশ বিহারি তাঁর তিন মেয়ে নিকিতা, কোমল ও কারিশমার বিয়ে দিচ্ছিলেন। একই সময়ে ও একই জায়গায় তাঁদের বিয়ের আসর বসেছিল। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, নিকিতার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কথা ভোলার। আর কারিশমার হবু বরের নাম গণেশ। কিন্তু বিয়ের আসরে নিকিতার সামনে বসেন গণেশ। আর কারিশমার সামনে বসেন ভোলা।

সংবাদমাধ্যমকে তাঁরা জানান, এটা ভুল করে ঘটে যায়। বিদ্যুৎ না থাকায় বিয়ের মণ্ডপটি অন্ধকার হয়ে ছিল। আর তিনজন কনেই একই রকম পোশাক পরে ছিলেন। এ জন্য গুলিয়ে ফেলেন ভোলা ও গণেশ। এবার জানিয়ে দিচ্ছি বিয়ের বিচিত্র কিছু রীতির কথা। একেক জাতি একেক রকমের নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে থাকে বিয়েতে। আর কিছু কিছু জাতির বিবাহ নীতিতে এমন সব বৈচিত্র্যের দেখা মেলে, যা বিস্মিত করে অন্যদের। কারও গায়ে থুথু ছিটানো খুবই আপত্তিকর। কিন্তু এ কাজটাই কেনিয়ার মাসাই জাতির বিয়ের অনুষ্ঠানের খুবই স্বাভাবিক একটি দৃশ্য। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে বিদায় নেওয়ার আগে কনের বাবা তার মেয়ের মাথায় ও বুকে থুথু ছিটিয়ে আশীর্বাদ করেন। বরের হাত ধরে চলে যাওয়ার সময় ভুলেও পিছনে ফিরে তাকানোর অনুমতি নেই কনের। মনে করা হয়, এ কাজ করলে কনে পাথরে পরিণত হবে।

দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ার দ্বীপ মারকুয়েসাসে মানুষকে পদদলিত করে বিয়ের আসর থেকে বিদায় নেয় বর-কনে। অনুষ্ঠান শেষে কনের নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীদের মাটিতে সারিবদ্ধ হয়ে শুয়ে পড়তে হয়। এরপর তাদের মানব-কার্পেটের মতো ব্যবহার করে উপর দিয়ে হেঁটে যায় নবদম্পতি। ভারতের আসামে বিয়ে করতে হলে বরকে শুধু শক্তিশালী হলেই চলে না, হতে হবে বুদ্ধিমানও। কনের কাছে পৌঁছানোর জন্য বরকে বিভিন্ন প্রকার ধাঁধাঁর সমাধান করতে হয়। ধাঁধাঁ সমাধানের পর কনের পরিবার ও বন্ধুদের তৈরি মানব দেয়াল শক্তির জোরে পার করতে হবে তাকে।

স্কটিশরা বিয়ের আগে বর ও কনেকে রাজ্যের যাবতীয় ময়লা, পচা ডিম, বাসি দুধ, গন্ধযুক্ত মাছ ইত্যাদি ছুড়ে দেওয়া হয়। বিশ্বাস করা হয় হবু দম্পতি যদি এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে, তবে ভবিষ্যতের যেকোনো খারাপ পরিস্থিতি সামলানো তাদের জন্য সহজ হবে।

চীনের তুজিয়ান জাতির বিয়ের এক মাস আগে থেকে কনেকে নিয়ম করে কাঁদতে হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে একঘণ্টা করে তা করতে হয় বিয়ের দিন পর্যন্ত। কনের পরিবারের অন্য সদস্যরাও এই কান্নায় যোগ দেয়। কনে কান্না শুরু করার দশ দিন পর কনের মা কান্নায় যোগ দেয়, বিশ দিন পর যোগ দেয় কনের নানি।

লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক।