সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : সীতাকুণ্ড এতিহ্যবাহী আলীয়া মাদ্রাসা। প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৮৬। প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ওবায়দুল হক। তিন শতাব্দীর প্রাচীন এই মাদ্রাসাটি আজ লোভী পরিচালনা কমিটির হাতে পড়ে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। কিছু দিন আগে চক্রটি মাদ্রাসার পশ্চিম পাশের জায়গাটি বিক্রি করে দেয়। এখন তাঁরা মাদ্রাসার বিজ্ঞান ভবন ভেঙে মার্কেট নির্মাণ করছে বলে পৌরসদর বাজারের দোকানদার ও মুসল্লিরা অভিযোগ করেন। এ নিয়ে প্রাক্তন, বর্তমান ছাত্রসহ স্থানীয়দের মাঝেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে লাগোয়া মাদ্রাসার ভিতরে মার্কেট নির্মাণের কাজ হচ্ছে জোরেশোরে। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি মার্কেট তৈরির জন্য মাদ্রাসার বিজ্ঞান ভবনও ভেঙে ফেলা হয়েছে। মাদ্রাসাটিতে ইবতেদায়ি থেকে শুরু করে কামিল পর্যন্ত শত-শত ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার পরিবেশ ও খেলাধুলার পর্যাপ্ত জায়গার প্রয়োজন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার জন্য ভবন তৈরি না করে মার্কেট নির্মাণ করছে চক্রটি।
মার্কেট নির্মাণে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার সমস্যার পাশাপাশি দোকানে আসা ক্রেতাদের দ্বারা শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে ছাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়াসহ ইভটিজিংয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র মো: আরিফ হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ডেভেলপার কোম্পানীর কাছে আবাসিক ছাত্রদের থাকার হোস্টেল-এর নির্ধারিত জায়গা বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ভবন তৈরি না করে মার্কেট নির্মাণ করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
মাদ্রাসায় অধ্যায়নরত এক ছাত্র জানান, শ্রেণীকক্ষের সংকট রয়েছে। ফাজিল এবং কামিলের ছাত্রদের মসজিদ ও অন্যান্য কক্ষে ক্লাস করতে হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষকেরও সংকট রয়েছে। এবার দাখিল পরীক্ষায় একজনও এ প্লাস পাইনি। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ১২ জন ফেল করে। ছাত্রদের পড়ালেখার মান উন্নয়নে কারো খেয়াল নেই। সবার লক্ষ্য শুধু ব্যবসা আর পকেট ঠিক রাখা।
বাজারের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইন অমান্য করে নির্মিতব্য মার্কেটে প্রতি দোকানের সালামি বাবদ ১০-১৫ লক্ষ টাকা নেয়া হচ্ছে। মার্কেট নির্মাণের জন্য ২০০০ সালে ফাউন্ডেশন দিয়ে মজবুত করে তৈরি করা শ্রেনীকক্ষ ভেঙে ফেলা হয়েছে।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শাহ আলম বলেন, তারা ডিসির অনুমতি নিয়েই মাঠের জায়গা ছেড়ে দিয়ে মার্কেট নির্মাণ করছেন। এতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি মো: কামাল উল্লাহ বলেন, আমার জানা মতে খেলার মাঠে কোন মার্কেট নির্মান হচ্ছে না। প্রয়োজনে আমাদের ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে পুনরায় পরিমাপ করা হবে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: মামুন জানান, খেলার মাঠে কেউ মার্কেট নির্মান করে থাকলে সেটা অন্যায় এবং তবে কেউ করে থাকলে সরকার আইনগত ব্যবস্থা নিবে।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো: মাহমুদুল হক বলেন, এইখানে কোনো খেলার মাঠ ছিল না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। আজকে শুনলাম, খোঁজ নিয়ে দেখব।