একুশে প্রতিবেদক : বার্ধক্যে উপনীত ৮২ বছর বয়সী নুরুল ইসলাম বিএসসি আসন্ন সম্মেলনে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে চান। সম্প্রতি পাঠানটুলি ওয়ার্ডের কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গেলে তাদের কাছে নুরুল ইসলাম বিএসসি প্রাসঙ্গিকক্রমে তার এ আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন। তারাই আবার একুশে পত্রিকার কাছে নুরুল ইসলাম বিএসসি’র এই মনোভাবের কথা জানিয়েছেন।
‘আপনি বয়স্ক মানুষ, ঘর থেকেও বের হন না। দীর্ঘদিন কোনো কর্মসূচিতেও যান না। এতবড় দায়িত্ব পেলে সামলাতে পারবেন কি– পাঠানটুলি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের এমন প্রশ্নে নুরুল ইসলাম বিএসসি জানিয়েছেন, ‘বয়স হলেও আমি সুস্থ, সপ্রতিভ। এখন কোনো দায়িত্বে নেই বলে ঘরে বসে আছি। দায়িত্ব পেলে নতুন করে জেগে উঠব, সবাইকে নিয়ে দলকে শক্তিশালী করতে পারবো।’
তথ্য মতে, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির অন্যতম সহ সভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসির কোষাধ্যক্ষ পদপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে নগর আওয়ামী লীগে দৃশ্যমান অনুপ্রবেশ। একসময় তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের অন্যতম ডোনার। ২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা নুরুল ইসলাম বিএসসি ১৯৯১, ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে প্রথমবার সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও দ্বিতীয়বার মোরশেদ খানের কাছে পরাজিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে এই আসনে তিনি মনোনয়নবঞ্চিত হন, মনোয়ন পান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি বর্তমানে কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালাম। অবশ্য তিনিও জিততে পারেননি সেই নির্বাচনে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে অনেক নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে চট্টগ্রামের সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস আসন খ্যাত কোতোয়ালী থেকে মনোনয়ন পান সানোয়ারা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা নুরুল ইসলাম বিএসসি। সেই নির্বাচনে বিএনপিতে নবাগত ইলিয়াস ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সামশুল আলমকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো এমপি হন তিনি।
স্বাধীনতার পর থেকে এই আসন থেকে যিনিই এমপি হয়েছেন, তার দল সরকার গঠন করেছে এবং তিনি সেই সরকারের মন্ত্রী হয়েছেন। ব্যতিক্রম ছিল কেবল নুরুল ইসলাম বিএসসি’র বেলায়। তিনি মন্ত্রী হননি; হয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও তিনি মনোনয়নবঞ্চিত হন। জোটগত স্বার্থ বিবেচনায় জাতীয় পার্টির সদ্য প্রয়াত মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মনোয়ন দিলেও নুরুল ইসলাম বিএসসিকে নিরাশ করেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন নুরুল ইসলাম বিএসসি। সাড়ে তিন বছর দায়িত্ব পালন করে জাতীয় নির্বাচনের আগে নিয়মতান্ত্রিকভাবে মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হয় তাকে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে ফের মনোনয়নবঞ্চিত হন নুরুল ইসলাম বিএসসি। তার আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয় রাজনীতিতে নবাগত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে।
ওইসময় বিএসসি’র অনুসারীরা ভেবেছিলেন এই ‘ছাড়’ বা ত্যাগের জন্য মূল্যায়িত হবেন তিনি। কিন্তু গত সাড়ে তিন বছরেও তিনি আর মূল্যায়িত হননি। খোদ বিএসসিই মনে করেন এবার তিনি মূল্যায়িত হবেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ প্রাপ্তির মধ্যদিয়ে।আর এ পদ পেলে বয়সের ভারে নুয়ে পড়াকে পদদলিত করে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগকে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দিতে তিনি সক্ষম হবেন।
অবশ্য এই বক্তব্য নুরুল ইসলাম বিএসসির নয়, তার উদ্ধৃতি দিয়ে শুভার্থীরাই বলছেন এমন কথা। তবে এ ব্যাপারে অনেক চেষ্টা করেও একুশে পত্রিকা নুরুল ইসলাম বিএসসির বক্তব্য জানতে পারেনি। তার মুঠোফোনটি প্রায়ই বন্ধ থাকতে দেখা যায়।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরের আগে যে কোনো সময় হতে যাওয়া চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে শীর্ষ দুই পদের জন্য কেন্দ্রের কাছে বিবেচনায় আছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সহ সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সহ সভাপতি সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, বর্তমান কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, বর্তমান কমিটির সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একটি বড় অংশেরই ধারণা, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ প্রকাশ ডলফিন দোভাষ গত তিন বছরে নতুন কোনো উদ্যোগ বা প্রকল্প গ্রহণ করা দূরের কথা, পুরোনো প্রকল্পগুলোও ঠিকমত এগিয়ে নিতে পারেননি। কাজেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ একজনকে নগর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো অদূরদর্শিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ভুল আওয়ামী লীগ করবে বলে তারা মনে করেন না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সামনের দিনগুলো হবে আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত কঠিন ও পরীক্ষার। সেই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো শক্তি, সামর্থ্য কিংবা নিজস্ব কোনো কর্মী-সমর্থক জহিরুল আলম দোভাষের নেই।
এছাড়া সিটি মেয়রের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ সামাল দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে। কিছুদিন আগে এ প্রসঙ্গে একুশে পত্রিকাকে তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আই এম নট ইন্টারেস্টেড এট অল। মেয়রের দায়িত্বটা ঠিকমত পালন করাটাই এখন আমার লক্ষ্য।’
সেই হিসেবে আ জ ম নাছির উদ্দীন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু ও ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলই শীর্ষ দুই পদে আসার সম্ভাবনা বেশি বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন নীতি নির্ধারণী মহলের নির্ভরযোগ্য সূত্র।
সূত্র বলছে, হয় নাছির-আলতাফ কমিটি অথবা নাছির-নওফেল কমিটি দিয়ে সাজানো হতে পারে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আগামী কমিটি। তুলনামূলকভাবে আলতাফ হোসেন চৌধুরীর কর্মী-সমর্থক কম থাকলেও আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং বাবার কল্যাণে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বিপুল কর্মী-সমর্থক ও অনুসারী রয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরের রাজনীতিতে। অবশ্য নওফেলের কর্মী-সমর্থক থাকার অন্যতম প্লাসপয়েন্ট হচ্ছে ‘মন্ত্রীত্ব’ বা তার গাড়িতে পত পত করে উড়া জাতীয় পতাকা।