পকেটে টাকা নেই, মধ্যরাতে ঝুমবৃষ্টিতে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরেন মেয়র রেজাউল!

একুশে প্রতিবেদক : সময়টা ১৯৭৮ সাল। আজকের চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী তখন চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক। শহরের হোটেল আমানিয়ার কাছে সিটি আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রচার সম্পাদক ছালেহ জহুরের অফিস। সেখানে আড্ডা হতো আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সিরাজ মিয়ার মতো সিনিয়র নেতাদের। সেই আড্ডায় যোগ দিতেন তৎকালীন ছাত্রনেতারা। আসতেন উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও। নেতাদের ঘিরে তারা মেতে উঠতেন হৈ-হুল্লোড়ে। সাথে চা-নাশতার আপ্যায়ন, নানারকম খাবার-দাবার। সিনিয়র নেতারাই হতেন এসবের স্পন্সর। আবার মাঝারি পর্যায়ের ছাত্রনেতারাও নিজের পকেটের টাকা খরচ করে একে অপরকে খাওয়াতেন। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো তৎকালীন ছাত্রনেতা রেজাউল করিমও বাবার টাকা খরচ করে রাজনীতি করতেন, সহযোদ্ধাদের এটা-ওটা খাওয়াতেন।

সেদিনও যা ছিল খরচাপাতি করে পকেট একদম খালি রেজাউল করিমের। মফস্বলের নেতারা রাত হওয়ার আগেই বাড়ির পথ ধরতেন। কিন্তু নিজের বাড়ি কাছে বা শহরে বলে সিনিয়র নেতাদের সাথে আড্ডায় কাটিয়ে দিতেন রেজাউল। সেদিন রাত দুটা। আকাশ মেঘলা। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। বহদ্দারহাটের দিকে বাড়ি এমনও এক নেতা সঙ্গী হলেন রেজাউলের। ভেবেছিলেন জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রেজাউল করিমের সাথে গেলে অন্তত গাড়ি ভাড়াটা বাঁচবে, রিকশায় চড়ে বাড়ি যাওয়া যাবে।

রেজাউল করিম ইচ্ছে করলে বাবু ভাই কিংবা মোশাররফ ভাইয়ের কাছ থেকে ২০-৫০, ১০০ টাকা চেয়ে নিতে পারতেন। চাইলে আরও বেশিও দিতেন। কিন্তু এত আবদার, এত অধিকার; মুখ ফুটে একবারও বলতে পারেননি পকেটে বাড়ি ফেরার টাকা নেই। ওই যে সংকোচ, ব্যক্তিত্বের প্রশ্ন!

এ প্রসঙ্গে রেজাউল করিম বললেন, আমাদের সময়কার রাজনীতিতে ব্যক্তিত্বের ব্যাপারটি ছিল প্রকট। বাবু ভাই বা মোশাররফ ভাইয়ের কাছে টাকা চাইলে ছোট হয়ে যাব, তা কিন্তু নয়; তবুও কেমন জানি লাগত। রাজনীতিতে সময় দিয়েছি, ঘাম ঝরিয়েছে। বাবার টাকা খরচ করেছি। কিন্তু মুখ ফুটে চাওয়া বা পাওয়ার কথা বলতে পারিনি সহজে।

সে যাই হোক বহদ্দারহাটমুখী সহযোদ্ধাকে নিয়ে লালদিঘি থেকে হাঁটতে শুরু করেন রেজাউল করিম। হাঁটা যেই শুরু, সহকর্মীর বারবার তাগাদা– রিকশা নেওয়া হচ্ছে না কেন? রেজাউল আশ্বস্ত করলেন, আন্দরকিল্লা গিয়েই রিকশা নেওয়া হবে। যখনই আন্দরকিল্লা আসা হলো আবারও তাগাদা– রিকশা নেওয়ার। একপর্যায়ে রেজাউল বলেই ফেললেন– ‘আঁত্তে টেয়া আছে না ব্যাটা, পকেটত যা আছিল বেয়াইগগুনরে চা-নাশতা হাবাই ফেলাই ন দেহস!’

সহযোদ্ধার প্রশ্ন– তুমি বললে কি বাবু ভাই, মোশাররফ ভাই গাড়িভাড়া দিতো না! হ্যাঁ দিত, কিন্তু মাঝে মাঝে হাঁটলে কী আর অসুবিধে! বলেই সিরাজদৌল্লাহ রোড ধরে সহযোদ্ধার হাত ধরে হাঁটতে শুরু করলেন রেজাউল। যেই কয়েক কদম বাড়ালেন, ঝুমবৃষ্টি। সেই বৃষ্টিতে দৌড়তে দৌড়তে বহদ্দারবাড়ি।

রোববার (২৪ এপ্রিল) রাতে অসুস্থ একুশে পত্রিকা সম্পাদক আজাদ তালুকদারকে তার পূর্ব নাসিরাবাদের বাসায় দেখতে গিয়ে প্রসঙ্গক্রমে একুশে প্রতিবেদকের কাছে এসব স্মৃতি রোমন্থন করেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

তিনি বলেন, এখনো আমার কোনো উচ্চাভিলাস নেই। পকেটে টাকা থাকলেও সমস্যা নেই। না থাকলেও সমস্যা নেই। আমার কোনো টেনশন নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও চট্টগ্রামবাসী যে দায়িত্ব কাধে দিয়েছেন সে দায়িত্ব ঠিকমতো সম্মানের সাথে পালন করতে পারাটাই এখন আমার একমাত্র লক্ষ্য। যে দায়িত্ব পেয়েছি সেটি সামলাতে গিয়ে দিনরাত চলে যাচ্ছে। নতুন কোনো পদপদবী চাই না। আই এম নট এ ইন্টারেস্টেড এট অল– নগর আওয়ামী লীগের আসন্ন কমিটিতে বড়সড় পদপ্রাপ্তির বিষয়ে এভাবেই নিজের অনাগ্রহের কথা তুলে ধরেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।