কুমিল্লা : ৭৮ বছর বয়সী একজন বাদী আদালতে দাঁড়িয়ে জবানবন্দি দিচ্ছিলেন। তা শুনে লিখছিলেন বিচারক। একপর্যায়ে বিচারক দেখতে পেলেন গরমে ক্লান্ত হয়ে বয়স্ক বাদী ফ্লোরে বসে পড়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে লেখা বন্ধ করে দিলেন বিচারক।
যদিও বিবাদীর আইনজীবী ওই বৃদ্ধকে প্রশ্ন করেই যাচ্ছিলেন। এ চিত্র দেখে বিচারক বলে উঠলেন, ‘লার্নেড স্টপ’। জেরা করা বন্ধ হলো।
বিচারক ওই প্রবীণ ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেন, আপনার কেমন লাগছে? তখন অসহায় চোখে বিচারকের দিকে শুধুই তাকিয়ে ছিলেন ওই বৃদ্ধ।
তাৎক্ষণিক আদালতে উপস্থিত পুলিশ সদস্য, নিজের পিয়ন ও পেশকারকে বিচারক নির্দেশ দিলেন, ওই বয়স্ক লোককে যেন দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়। দ্রুত এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা হলো। যথারীতি সংশ্লিষ্টরা হাসপাতালে নিয়ে গেলেন অসুস্থ বৃদ্ধকে। এরপর আবার আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।
মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) এমন নজিরবিহীন মানবিকতা দেখিয়েছেন কুমিল্লার মুরাদনগর সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক তৌফিকুল ইসলাম।
সংশ্লিষ্ট আদালতের একজন কর্মচারী একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘স্যার (সিনিয়র সহকারী জজ তৌফিকুল ইসলাম) সবসময় বলেন, জনগণের টাকায় আমার বেতন হয়, আমার সিকিউরিটি সকল সুযোগ সুবিধা জনগণের টাকায়। জনগণই দেশের মালিক। আমার বসার জায়গাটা প্রায় ৩ ফুট উপরে। বিচারকের আসনে যখন আসীন হই, আমি সব দেখতে পাই।’
‘এই মন-মানসিকতা ধারণ করে কাজ করে যাওয়া আমাদের স্যারের নজরে আসে ওই বয়স্ক লোকের অসুবিধার বিষয়টি। সেদিন ভীষণ গরম পড়েছিল। রোজা রেখে তিনি ক্লান্ত, অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ওই প্রবীণ ব্যক্তি। স্যারের এমন মানবিকতায় অবাক হন ওই বৃদ্ধ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এজলাসে বসার জায়গা অপর্যাপ্ত। অনেকে দাঁড়িয়ে থাকেন। অথচ কোড অব কন্ডাক্ট অব কোর্টস-এ বলা আছে আদালতে কেউ দাঁড়িয়ে থাকবেন না, সকলে বসবেন। কিন্তু বসার তেমন ব্যবস্থা তো নেই।’
‘আমাদের দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে, হয়তো আরও হবে। একদিন বিচারপ্রার্থীদের একটু আরামে বসার ব্যবস্থা হয়তো হবে।’