শান্তনু চৌধুরী : চারদিকে এতো এতো সমস্যা একটু মজার কিছু লিখবো তা আর হয়ে উঠে না। যারা শহরে থাকি বিশেষ করে ঢাকা শহরে যানজট আর গরমে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। এর মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। রয়েছে টিপ নিয়ে লতা সমাদ্দর, স্কুল পলিটিক্সের শিকার শিক্ষিকা অমোদীনি পাল, বিজ্ঞান পড়িয়ে কারাগারে হৃদয় মণ্ডল। এমন শত শত ঘটনা প্রতিদিন ঘটে চলছে। এর প্রভাব পড়ে নিজের জীবনেও। তাই রোমান্টিকতা নিয়ে কিছু লেখা যেমন হয়ে উঠে না, তেমনি মজাদার কিছু লেখাও যায় না। কিন্তু আমি জানি, চিঠি দিও কলামের পাঠকরা একটু রিলাক্স চান। চান মজার মজার কিছু জানতে। ফেসবুক থেকে পাওয়া একটা আবেগীয় লেখা দিয়ে শুরু করি।
আমরা যারা ১৯৯৫ সালের আগে জন্মেছি তারা বিশেষ ভাগ্যবান আজকের পৃথিবীতে। কেন? আমরা সমস্ত প্রযুক্তির ব্যবহার জানি এবং উপভোগ করি। কিন্তু…আমরা কখনো বইয়ের পাহাড় মাথায় করে বিদ্যালয় যাইনি। আমাদের মা বাবাকে কখনো আমাদের পড়াশোনার চিন্তায় নিজেদের জীবন ব্যতিব্যস্ত করতে হয় নি…! স্কুলের পরেও সূর্যাস্ত পর্যন্ত বন্ধুদের সাথে চুটিয়ে খেলতাম প্রাণ খুলে…আমরা প্রাকৃতিক বন্ধুদের সাথে জীবন কাটাতাম। যখনই তৃষ্ণার্ত থাকতাম মন খুলে কল থেকে জল খেতাম, জীবাণু নিয়ে ভাবতাম না। তাও অসুস্থ হয়ে পড়িনি। আমরা এক টাকার আইসক্রিম ৪ জন ভাগ করে খেয়েও পেট খারাপ করে বসিনি। আমরা প্রতিদিন পেট ভরে ভাত আর প্রাণ খুলে মিষ্টি খেয়েও মোটা হয়ে পড়িনি। খালি পায়ে জমিতে ফুটবল খেলার পরও পা ভেঙে ফেলিনি। খেলনা আমরা নিজেরাই বানিয়ে খেলতাম। মা বাবার কাছে থেকেই মানুষ হয়েছি।
আমরা সব ভাই বোনেরা একরকম জামা কাপড় পরে মজা পেতাম। শরীর খারাপ হলে ডাক্তার আমাদের কাছে আসতেন, আমরা ওই অবস্থায় যেতাম না। আমাদের কাছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাজার হাজার বন্ধু ছিল না। কারণ আমাদের কাছে সত্যিকারের বন্ধু আছে। বন্ধুকে না জানিয়ে তার ঘরে গিয়ে একসাথে খাওয়া দাওয়া করে মজা পেতাম। কখনো ফোন করে অনুমতি নিতে হয়নি। মেকি বন্ধুত্বের কারণে জীবনের অনেক কিছুই এখন মেকি হয়ে গেছে। বিপদে পড়লে টের পাওয়া যায় ক’জন এগিয়ে আসেন। সবাই যেন নিজ নিজ ভাবনা নিয়ে ব্যস্ত। তাই, নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন আপনার প্রমোশনের খবরে ফেসবুকে ‘কনগ্রেটস’ আর ‘শুভকামনা’র বন্যা বয়ে যায়! আবার সেই আপনিই যখন ‘চাকরি নাই, চাকরি চাই’ বলে ফেসবুকে লিখেন দেখুন দৃশ্যপট কত দ্রুত বদলে যায়।
আপনি বিপদে পড়লে কাছের বন্ধুরাই আপনাকে এড়িয়ে চলা শুরু করবে। আর যদি সামনাসামনি পড়ে যায়, তাহলে দেখবেন ব্যস্ততা দেখিয়ে কেটে পড়েছে; পাছে যদি আপনি চাকরি বা টাকা ধার চেয়ে বসেন! আপনার জীবনের রঙ ঢঙের ছবি ফেসবুকে দিয়ে দেখুন লাইক-কমেন্টস’র বন্যা বয়ে গেছে। এসব দেখে ভাববেন না যে, এরা সবাই আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী। একটু বেকায়দায় পড়লে দেখবেন আশপাশে কেউ নাই। যতদিন আপনার পকেটে টাকা আছে, যতক্ষণ আপনি অন্যের পেছনে টাকা খরচ করতে পারবেন, ঠিক ততক্ষণই আপনি সবার প্রিয় পাত্র। টাকা নাই তো সম্পর্কও নাই। বাস্তবতা হচ্ছে- মুখোশ পরা অত অত শুভাকাঙ্ক্ষীর ভিড়ে দিন শেষে আমরা বড়ই একা। তাই ফেসবুকে কনগ্রেটস, শুভকামনা আর লাইকের কথা ভুলে যান। সত্যিকারের বন্ধুকে খুঁজে নিন। পরিবারকে সময় দিন।
মনে রাখবেন-অন্ধকারে নিজের ছায়াও নিজেকে ছেড়ে চলে যায়। এই পরিবারকে সময় দেয়ার কথাটি ইদানিং বেশ উঠছে। বিশেষ করে করোনার সময়ের পর থেকে। যদিও করোনায় আমরা দেখেছি পরিবারের অনেক সদস্যও পাশে থাকে না। এ প্রসঙ্গে সুলেখক তানভীর শাহরিয়ার রিমনের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে কয়েকটি লাইন ধার নেয়া যেত পারে। তিনি লিখেছেন, ‘বাইরের মানুষের কাছে সদাচারী পরিচিতি হয়ে কোনো লাভ নেই যদিনা আপনার স্পাউসের (স্বামী/স্ত্রী) সাথে আপনি ভালো আচরণ করেন। যদিনা আপনার সন্তান, পিতা-মাতা, ভাই-বোনের সাথে ভালো আচরণ করেন। বাইরের লোকের কাছে মহান সাজার আগে নিজের পরিবারের সদস্যদের সাথে সদাচারী হওয়া জরুরি’।
তবে যাকেই ভালোবাসা হোক না কেন সেটা যাতে বিস্কিট আর চায়ের সম্পর্কের মতো না হয় সেটা মনে রাখা জরুরি। কথাটা এজন্য বলা বিস্কিট নাকি চায়ে বেশি চুবানো থাকলে কাপের নিচে তলিয়ে যায় সে কারণে তলিয়ে যাওয়ার আগেই নিজেকে উঠিয়ে নেয়া ভালো ওই ভেজা পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু নিজেকে গলিয়ে ফেললেই সর্বনাশ। বিস্কুট নিয়ে যখন কথা উঠলো একটি মজার তথ্য শেয়ার করছি। চট্টগ্রামে বেলা বিস্কুটের বেশ সুনাম। গণি বেকারির বেলা কিনতে দূরদূরান্ত থেকে লোক আসতো। এখন নানা নামে কুকিজ এসেছে পুরনো বিস্কিটের স্থান দখল করেছে। তবে দ্রুত খাওয়া এবং পেট ভরে যাওয়ার উপাদান হিসেবে বিস্কুটের সুনাম রয়েছে। ৮৩ শতাংশ মানুষ সঙ্গীকে নিয়ে ঘোরার চেয়ে চায়ের সঙ্গে বিস্কুট খেয়ে সময় কাটাতে বেশি ভালোবাসেন। যুক্তরাষ্ট্রে চালানো একটি জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
আমাদের দেশের বিবেচনায় তথ্যটির বাস্তবতা যা–ই হোক না কেন, বিস্কুট যে মানুষের প্রিয় একটি খাবার, তা কিন্তু অস্বীকার করা যায় না। অতিথি আপ্যায়নে বা হালকা খিদেয় বিস্কুটের কদর জগৎজোড়া। ছোটবেলার বিস্কুট দৌড়ের কথাও মনে আছে নিশ্চয়ই। মানুষের পছন্দের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাজারে রয়েছে নোনতা, মিষ্টি, ঝাল নানা স্বাদের বিস্কুট। এই বিস্কুট বেশ পুরোনো খাবার। প্রাচীন গ্রিক, রোমান ও মিসরীয় সাম্রাজ্যের সামরিক বাহিনীর সদস্য ও ব্যবসায়ীদের বছরের একটি দীর্ঘ সময় সমুদ্র বা দুর্গম অঞ্চলে কাটাতে হতো। তখন এমন একটি খাবারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, যা হবে ওজনে হালকা, পর্যাপ্ত ক্যালরিসমৃদ্ধ এবং সহজে নষ্ট হয় না। বিষয়গুলোর সমন্বিত সমাধান হিসেবে উদ্ভাবিত হয় এই দারুণ খাবার। তবে, এই রমজানে ‘হালাল’ খাবার নিয়ে বেশ কথা উঠছে। এর সাথে সাথে এও উঠছে খাবারটা হালাল চিন্তা করলেও ‘ঘুষ খাওয়া’ ‘অন্যের হক মেরে খাওয়া’ যে হারাম সেটি নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না।
এবার খাবার নিয়ে আরো কিছু তথ্য। আপনি কি জানেন? মরিচ একটি ফল। চল্লিশ বছর আগের তুলনায় ২৬৬ শতাংশ বেশি চর্বি বহন করছে এখনকার মুরগি। জরুরি প্রয়োজনে ডাবের পানি রক্তের প্লাজমার বিকল্প হিসেবে কাজ করে। মধুই একমাত্র খাবার, যা কখনও পচে না। মায়ের বুকের দুধ ছাড়া আর কোনো খাবারে মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান নেই। উড়োজাহাজের খাবারে স্বাদ কম। আকাশে উড্ডয়নকালে খাবারের স্বাদ ও গন্ধ ২০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে যায়। খাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতি সেকেন্ডে এক হাজার ৭৭৬টি প্রাণি হত্যা করা হয়। মুম্বাই বা দিল্লির চেয়ে লন্ডনে বেশি ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট রয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্ববাসী নিরামিষভোজী হলে বছরে ৭০ লাখ মৃত্যু ঠেকানো যাবে।
খাওয়া দাওয়া নিয়ে মজার ছড়া লিখেছেন সুকুমার রায়। সেখানে তিনি বলছেন,
‘ব্যাঙ খায় ফরাসিরা (খেতে নয় মন্দ),
বার্মার ‘নাপ্পি’তে বাপরে কি গন্ধ!
মাদ্রাজী ঝাল খেলে জ্বলে যায় কণ্ঠ,
জাপানেতে খায় নাকি ফড়িঙের ঘণ্ট!
আরশুলা মুখে দিয়ে সুখে খায় চীনারা,
কত কি যে খায় লোকে নাহি তার কিনারা’।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক।