একুশে প্রতিবেদক : দেশের বিভিন্ন নিউজপোর্টালকে নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রকাশে ওয়েব র্যাংকিং ওয়েবসাইট ‘অ্যালেক্সা ডটকম’ এর দ্বারস্থ হতে দেখা যাচ্ছে; প্রশ্ন উঠেছে, অ্যালেক্সার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু?
শুরুতেই বলে নিই, আগামী ১ মে থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অ্যালেক্সা ডটকম। যার কারণে গত বছরের ৮ ডিসেম্বরের পর নতুন করে অ্যালেক্সার ‘সাবস্ক্রিপশন’ নেওয়া হচ্ছে না। তবে যাদের দীর্ঘমেয়াদী ‘সাবস্ক্রিপশন’ নেওয়া আছে তারা ১ মে পর্যন্ত অ্যালেক্সার সুবিধা পাচ্ছেন।
‘সাবস্ক্রিপশন’ মানে হচ্ছে অ্যালেক্সা তার গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেয়। টাকার পরিমাণ কত সেটা এখন অ্যালেক্সা ডটকমে গিয়ে জানার উপায় নেই, যেহেতু তারা এখন টাকা নেওয়া বা সাবস্ক্রিপশন নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
তবে অতীতে অ্যালেক্সা কী পরিমাণ টাকা নিত তা ‘ওয়েব্যাক মেশিন’ ব্যবহার করে জানা সম্ভব। ২০১৪ সালের ৬ নভেম্বর অ্যালেক্সা ডটকম থেকে নেওয়া একটি স্ক্রিনশটে তাদের চার ধরনের মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি নিতে দেখা যায়। ৯ ডলার থেকে শুরু করে ৪৯ ডলার, ১৪৯ ডলার ও সর্বোচ্চ ৭৯৯ ডলার সাবস্ক্রিপশন ফি ধরা হয়েছিল তখন। সে সময় কত টাকা দিলে পেইজভিউ থেকে শুরু করে অ্যালেক্সা কী কী সুবিধা দিত সেটি এখানে ক্লিক করলে দেখা যাবে।
২০২০ সালের ১ আগস্ট নেয়া একটি স্ক্রিনশটে দেখা যাচ্ছে, একটি সাইট ও একজন ইউজারের জন্য অ্যালেক্সার মাসিক ফি ১৪৯ ডলার; আবার ২০ জন ইউজার ও ৩৫টি সাইটের জন্য তাদের মাসিক ফি ২৯৯ ডলার। এই টাকা দিলে গ্রাহক তার সাইটের জন্য কী কী সুবিধা অ্যালেক্সা থেকে পেতেন তার বিবরণ জানা যাবে এখানে ক্লিক করলে।
সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৭ মে নেয়া একটি স্ক্রিনশটেও দেখা যাচ্ছে, একজন ব্যবহারকারী বা একটি ওয়েবসাইটের জন্য অ্যালেক্সার সর্বনিম্ন মাসিক ফি ১৪৯ ডলার; আবার ২০ জন ইউজার ও ৩৫টি সাইটের জন্য তাদের মাসিক ফি ২৯৯ ডলার। এই টাকায় কী কী সুবিধা অ্যালেক্সা দেয় তা এই লিংকে ক্লিক করলে জানতে পারবেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, কোন ওয়েবসাইট কত জনপ্রিয় সেটি অ্যালেক্সা নির্ধারণ করে কীভাবে? অ্যালেক্সা বলছে, যারা তাদের ‘ইউজার’ তাদের তথ্য নিয়েই সাইটের র্যাংকিং নির্ধারণ করে তারা। কথা হলো এই অ্যালেক্সা ‘ইউজার’ কারা? যারা অ্যালেক্সার ‘টুলবার বা অ্যাড-অন’ ব্যবহার করে তারাই শুধু ইউজার। এসব টুলবার ও অ্যাড-অনের কাজ ডাটা সংগ্রহ করে অ্যালেক্সাতে প্রেরণ করা।
আপনি কি অ্যালেক্সার টুলবার কিংবা অ্যাড-অন ব্যবহার করেন? বেশিরভাগ পাঠকের ক্ষেত্রে উত্তর হয়তো ‘না’। কারণ সাধারণ মানুষের জন্য এসব টুলবার ব্যবহারের কোনও প্রয়োজনই নেই। ব্যবহার করলেও হাতেগোনা অল্প কয়েকজন হবে। আর তাদের ওয়েবসাইট ভিজিটের উপর ভিত্তি করে র্যাংকিং প্রকাশ করা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?
ধরা যাক, কোনও একটি ওয়েবসাইটে একজন অ্যালেক্সা ইউজারও ঢুকলেন না, কিন্তু ১ লাখ সাধারণ ভিজিটর ঢুকলেন। কিন্তু অন্য একটি ওয়েবসাইটে একজন মাত্র অ্যালেক্সা ইউজার প্রবেশ করলেন। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় সাইটের র্যাংকিং ভালো হবে প্রথমটি থেকে!
এছাড়া অ্যালেক্সার সাবস্ক্রিপশন কিনলে সাইটে ভেরিফিকেশন কোড বা ফাইল আপলোড করে ভেরিফাই করা যায়। ফলে সাইটে ১০০ জন প্রবেশ করলে ১০০ জনই গণনা করা হবে এবং সেভাবে র্যাংকিং হবে। কিন্তু অ্যালেক্সার সাবস্ক্রিপশন না কেনা কোন সাইটে এক হাজার জন ঢুকলেও তারা জানতে পারবে না, যেহেতু ওই সাইটের সঙ্গে অ্যালেক্সার কোনও ধরনের সংযোগ তৈরি হয়নি। ফলে র্যাংকিং হবে মনগড়া!
অ্যালেক্সা ব্যাকলিংকও হিসাব করে, যদিও তাদের মূল গণনা হয় ‘অ্যালেক্সা ইউজারের’ ওপর ভিত্তি করে।
তবে এটা ঠিক, টাকা দিয়ে সাবস্ক্রিপশন কিনলে অ্যালেক্সার ভাভাস্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে সঠিকভাবে সাইটের ইউনিক ভিজিটর, মোট ভিজিটরসহ নানা পরিসংখ্যান দেখা সম্ভব। কিন্তু যে র্যাংকিং তারা প্রকাশ করে সেটি সঠিক নয়। অ্যালেক্সাও কোথাও একবারও বলেনি, তাদের র্যাংকিং সঠিক। বরং তারা এটা বলেছে যে এটি আনুমানিক হিসাব মাত্র।
এদিকে অ্যালেক্সার র্যাংক কমিয়ে আনার জন্য ‘র্যাংকবুস্টআপ ডটকমের’ মতো কিছু ওয়েবসাইটও রয়েছে। এ ধরনের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে অন্যের সাইট দেখে ‘মিনিট আয়’ করা যায়। আবার সেই ‘মিনিট’ নিজের ওয়েবসাইটের জন্য খরচ করা যায়, যাতে অ্যালেক্সার র্যাংক কমিয়ে আনা যায়। এছাড়া টাকা দিয়েও ‘র্যাংকবুস্টআপ ডটকমের’ কাছ থেকে ‘মিনিট’ কেনা যায় বা ‘ভিজিটর’ পাওয়া যায়।
‘র্যাংকবুস্টআপ ডটকমের’ ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, ১০ ডলার দিলে ১২ হাজার মিনিট (৭২ হাজার হিট), ৩০ ডলার দিলে ৪২ হাজার মিনিট (২ লাখ ৫২ হাজার হিট), ৭৫ ডলার দিলে দেড় লাখ মিনিট (৯ লাখ হিট), ২০০ ডলার দিলে ৪ লাখ ৯০ হাজার মিনিট (২৯ লাখ ৪০ হাজার হিট), ৬০ ডলার দিলে ১৭ লাখ ১৫ হাজার মিনিট (১ কোটি ২ লাখ ৯০ হাজার হিট) দেবে তারা।
অর্থ্যাৎ একবার ‘হিট’ বলতে ওয়েবসাইটে একবার প্রবেশ করা। আর এক মিনিট বলতে ওয়েবসাইটে এক মিনিট অবস্থান করা।
এভাবে টাকার বিনিময়ে অ্যালেক্সার র্যাংকিং নির্ধারণ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির সুনামও নষ্ট হচ্ছিল। এক পর্যায়ে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর এক বিবৃতির মাধ্যমে ২৫ বছরের যাত্রার ইতি টানার কথা জানায় অ্যালেক্সা ডটকম।
ঠিক কী কারণে অ্যালেক্সা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে সেটি বিস্তারিত না জানালেও চলতি বছরের ১ মে থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এটি নিশ্চিত করেছে অ্যালেক্সার মূল মালিক প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন।
এরইমধ্যে যারা অ্যালেক্সা ব্যবহার করছেন অ্যামাজন তাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেছে, তারা যেন এই সময়ের মধ্যে তাদের প্রয়োজনীয় ডাটা অ্যালেক্সা থেকে ডাউনলোড করে নেয়।
দিনের পর দিন অ্যালেক্সার ব্যবহারকারী কমে যাওয়ায় অবশেষে এটি বন্ধ করে দেয়ার মত কঠিন সিদ্ধান্ত অ্যামাজনকে নিতে হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।