একুশে প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম ১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী, খুলশী, হালিশহর) আসনের এমপি ও শিক্ষামন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ডা. আফছারুল আমীন দুবছর ধরে অসুস্থ। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তার ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ার ফলে চিকিৎসকরা নিরাময়যোগ্য বলে আশাবাদী। তিনি নিয়মিত কেমোর পর বর্তমানে রেডিয়েশন থেরাপি নিচ্ছেন। এ অবস্থায় সংসদে এবং সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। সবশেষ গত ২০ মার্চ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে ডা. আফছারুল আমীনের এই অসুস্থতার সুযোগে অতি উৎসাহী একটি গ্রুপ এখনই এমপি মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। তাদের কেউ কেউ মনে করছেন আফছারুল আমীন বেশিদিন বাঁচবেন না, অতএব সেই আসনে উপ নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে তারা এমপি হবেন।
এজন্য এখন থেকে মাঠে নেমে পড়েছেন কেউ কেউ। কেন্দ্রের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। আকার-ইঙ্গিতে জানিয়ে দিচ্ছেন তাদের ইচ্ছের কথা।
জানা গেছে, আওয়ামী যুবলীগের সাবেক এক প্রেসিডিয়াম মেম্বার চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই এই লক্ষ্যে ঢাকার আশরাফি হোটেলে এক সপ্তাহ অবস্থান করেছেন। এসময় নিজের চেনা-জানা নেতাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করেছেন। চট্টগ্রাম থেকে এক সংগঠক তার আয়োজনে মেধাবী শিক্ষার্থী সংবর্ধনায় অতিথি করতে যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক হুইপ ও প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের সাথে সাক্ষাৎ করতে ঢাকায় যান। বিষয়টি জানতে পেরে যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম মেম্বার ওই সংগঠককে আশরাফি হোটেলে নিয়ে এসে বেশ খাতিরযত্ন করেন এবং রুম ভাড়া করে হোটেলে দুইদিন রেখে দেন। তারপর মির্জা আজমকে দাওয়াত দিতে তিনিও সঙ্গে যান। ব্যস্ততার কারণে তিনি অতিথি হতে না পারলেও তাদের আদর-আপ্যায়ন করেন এবং এক প্রতিমন্ত্রীকে বিশেষ অতিথি হিসেবে ঠিক করে দেন। এসময় জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম কমিটির যুবলীগের সাবেক ওই নেতা নিমন্ত্রণের ফাঁকে কথিত উপ নির্বাচনে কৌশলে নিজের আগ্রহের কথাও বলে ফেলেন।
অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের এক প্যানেল মেয়রও আফছারুল আমীনের আসনে এমপি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর বলে শোনা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই লক্ষ্যে তিনিও তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন। গণযোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি বাড়িতে লঙ্গরখানা খুলেছেন, বাড়িয়ে দিয়েছেন দান-অনুদান। তার অনুসারীরা বলে বেড়াচ্ছেন, ‘আফছার ভাইয়ের কিছু হলে তাদের নেতা (প্যানেল মেয়র) উপ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। মনোনয়ন নিশ্চিত করতে সবধরনের চেষ্টাই চালাবেন। আশা করি তিনিই মনোনয়ন পাবেন।’
এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই আসন থেকে মনে মনে এমপি হওয়ার ইচ্ছা পুষে রেখেছেন মহানগর আওয়ামী সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন বাচ্চু, বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাবেক সিটি মেয়র বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা এম মনজুর আলম, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর এম এ আজিজের ছেলে মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ। এদের মধ্যে কেউ কেউ অতি সন্তর্পণে, কৌশলে আগালেও বিষয়টি দৃষ্টিকটু হবে ভেবে এখনই প্রকাশ্য হচ্ছেন না। গেলবার মনজুর আলম মনোনয়ন-দৌড়ে বেশ এগিয়ে গিয়েছিলেন। পরে নানা বিশ্লেষণ ও চূড়ান্ত সমীকরণে শেষপর্যন্ত আফছারুল আমীনের হাতেই নৌকা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। অবশ্য এক্ষেত্রে আফছারুল আমীনের ঘাম জড়ানোর কথা স্বয়ং তিনিই তার ঘনিষ্ঠ শুভার্থীদের কাছে স্বীকার করেছিলেন তখন।
মনোনয়ন চাওয়া প্রসঙ্গে নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ ক্ষুদেবার্তায় একুশে পত্রিকাকে বলেন, প্রত্যেক রাজনৈতিক নেতার মনের ঈশান কোণে জনপ্রতিনিধি হওয়ার একটা ইচ্ছে থাকে। তবে তা কারো অমঙ্গল চেয়ে নয়। আফছার ভাই ত্যাগী, যোগ্য, পরিচ্ছন্ন নেতা। তিনবার এমপি, একবার মন্ত্রী। দুইবার সংসদীয় কমিটির সভাপতি। আমি অন্তর থেকে তাঁর সুস্থতা ও দীর্ঘজীবন কামনা করছি। তিনি আরও অনেক বছর এই পদে থাকুন আমি সেটাই চাই।
কিছু মানুষের এমন উদগ্র ইচ্ছা ও আচরণে নগর আওয়ামী লীগের এক নেতা ক্ষোভ ঝারেন। তিনি একুশে পত্রিকাকে পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমাদের একশ্রেণির নেতার লোভ-লালসা ও চাহিদার রকমফের দেখে রীতিমতো অবাক হতে হয়। একজন মানুষ অসুস্থ। যেন তাকে জোর করে এখনই কবরে ঢুকিয়ে দিতে হবে, আর যেনতেনভাবে এমপি হতে হবে– এমন চিন্তা অত্যন্ত নৃশংস ও দুঃখজনক।
জানতে চাইলে ৭১ বছর বয়সী ডা. আফছারুল আমীন এমপির ব্যক্তিগত সহকারী দিদার উর রহমান তুষার একুশে পত্রিকাকে বলেন, এমপি স্যার সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। দেশে ফিরেও নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন। আল্লাহর রহমতে চিকিৎসায় স্যারের ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। স্যারের মনোবল শক্ত। তিনি এ অবস্থায়ও নিয়মিত সংসদের অধিবেশন ও সংসদীয় কমিটির মিটিংয়ে যোগ দিচ্ছেন। গত রোববার (২০ মার্চ) তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেছেন এবং বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
এদিকে, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি সুত্র জানিয়েছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সৎ ও স্পষ্টবাদিতার কারণে ডা. আফছারুল আমীনকে পছন্দ করেন। সে কারণে পরপর পাঁচবার (১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮) তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। ২০০৮ থেকে ২০১৮ তিনবার এমপি হয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে প্রথমে নৌপরিবহনমন্ত্রী ও পরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী করেছেন। গত দুই সংসদে তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি করেছেন। সুত্রটি বলছে, একদিন সবাইকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে এটাই বাস্তবতা। আফছারুল আমীনের অনুপস্থিতিতে তার যোগ্য সন্তান কেউ থাকলে তারাই হয়তো নৌকার হাল ধরার সুযোগ পাবেন।
জানা গেছে ডা. আফছারুল আমীন ও ডা. কামরুন্নেছা দম্পতির জ্যেষ্ঠ সন্তান ফয়সাল আমিন উচ্চশিক্ষা শেষ করে ব্যবসায় নিজের ক্যারিয়ার দাঁড় করাচ্ছেন। এলাকার মানুষের সাথে আছে চমৎকার যোগাযোগ। ছোট ছেলে ডা. মাহিদ বিন আমিন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার। বাবার অনুপস্থিতিতে এলাকার উন্নয়ন কাজগুলোও তিনিই ল তদারক করেন। তাদের নামকরা চিকিৎসক মা অধ্যাপক কামরুন্নেছা ২০১৮ সালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে অবসর গ্রহণ করেন।