শরীফুল রুকন : ১৪ মার্চ, ২০২২; সকাল ১০টা ১৭ মিনিট। স্থান চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌরসভার এলকে সিদ্দিকী স্কয়ার। একটি ওষুধ কোম্পানির নাম লেখা ছোট একটি কাভার্ডভ্যান থেকে ছোট-বড় বেশ কিছু বাক্স নামানো হচ্ছে। হলুদ রংয়ের কিছু বাক্সে লেখা ‘জা এন জি আইসক্রিম’। কিছু বাক্সে ‘পোলার আইসক্রিম’ লেখা। কিছু বাক্সে লেখা, ‘রাইট চয়েস বিস্কুট’। আবার কিছু বাক্স ‘ফ্রেশ কোকোনাট বিস্কুট’-এর। ‘কোকাকোলা’ লেখা বাক্সও গাড়িতে দেখা গেল। ‘ভেনাস ব্র্যান্ড’ লেখা বড় তিনটি বাক্সে আলগা কাগজে লেখা, ‘কাঁচের জিনিস, সাবধানে নাড়াচড়া করুন।’ ওষুধ কোম্পানির গাড়িতে এ ধরনের বাক্স দেখে জানতে চাইলে চালক বলেন, এগুলো ওষুধ। ‘ওষুধ তো দেখা যাচ্ছে না’- বলার পর চালক চুপ থাকেন। কিছুক্ষণ পর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যান। অন্যদিকে বড় তিনটি বাক্স তিনটি রিকশায় তুলে দেওয়া হয়। আর বিস্কুট, আইসক্রিম লেখা ছোট বাক্সগুলো তিন ব্যক্তি তিনটি মোটরসাইকেলে তুলে তিন দিকে রওনা হওয়া রিকশা তিনটিকে অনুসরণ করতে থাকলেন।
চোখে ভাসল, কাভার্ডভ্যানটার গায়ে লেখা ছিল ‘এরিস্টোফার্মা’। এটি দেশের অন্যতম স্বনামধন্য ওষুধ প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠান। একটি ওষুধ কোম্পানির গাড়ি থেকে নাটকীয়ভাবে অন্য পণ্যের বাক্স নামানোর দৃশ্য এবং চালকের ‘জায়গায় দাঁড়িয়ে মিথ্যাচার’ বেশ কৌতূহল জাগালো। তিনজনের মধ্যে একজনকে অনুসরণ করে দেখা গেল, সীতাকুণ্ড পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের আমিরাবাদ তিন রাস্তার মোড়ের একটি বহুতল ভবনের সামনে গিয়ে মোটরসাইকেল ও রিকশাওয়ালা দাঁড়িয়েছেন। এরপর বড় বাক্সটি দুজনে ধরাধরি করে ভবনের ভেতরে নিয়ে গেলেন।
পরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ওই ভবনে এরিস্টোফার্মার এক লোক থাকেন। তার নাম উজ্জ্বল। তিনিই রিকশার পিছে মোটরসাইকেলে করে বাক্সটি নিয়ে এসেছেন। এভাবে প্রায়ই বাসায় নানান পণ্যের বাক্স আনেন আবার পরে সেগুলো বাইরে নিয়ে যান।
এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে উজ্জ্বলের মোবাইল ফোন নম্বর নিয়ে পরদিন ১৫ মার্চ দুপুরে রিং দেওয়া হয়। ফোন রিসিভ হওয়ার পর জানতে চাইলে ওপারের ব্যক্তি নিজের নাম বলেন উজ্জ্বল এবং তিনি এরিস্টোফার্মার মেডিকেল প্রমোশন অফিসার (এমপিও) বলে পরিচয় দেন। আলাপের একসময় আগের দিনের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে উজ্জ্বল একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে মোবাইলে কিছু বলা যাবে না। আসেন, আমরা একদিন দেখা করি। চা খেতে খেতে সব বলি।’
পরে একটি ভিজিটিং কার্ডের মাধ্যমে জানা গেল, এই ব্যক্তির পুরো নাম- মো. উজ্জ্বল হোসেন। তিনি এরিস্টোফার্মার মেডিকেল ইনফরমেশন অফিসার (এমআইও)। পরদিন সকালে উজ্জ্বলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে দেখা করার স্থান জানতে চাইলে তিনি আগের দিনের কথা বেমালুম অস্বীকার করে বলেন, ‘আপনি যাকে চাচ্ছেন, সে আমি নই। হয়তো রং নাম্বার হয়েছে।’
বুঝতে আর বাকি রইলো না, এটা সেই বাণিজ্যিক কূটকৌশলের খণ্ডচিত্র, যার নাগাল খুঁজছিলাম গত ছয়টি মাস ধরে। এই অপকৌশলের জাল বিছিয়ে দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো ফেঁদে বসেছে এক মুনাফাসর্বস্ব বাণিজ্য।
বিশ্বজুড়ে চলমান করোনা অতিমারি এবং সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। দুই-তিন বেলা খাবার কিনতেই দেশবাসীর হিমশিম অবস্থা। তার ওপর দূষিত-ভেজাল খাদ্য আর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাময় জীবনযাপনের কারণে নানান জটিল রোগ-বালাইয়ের চিকিৎসা-খরচ জোগানো, বিশেষ করে অতি প্রয়োজনীয় ওষুধটা কিনে খাওয়ার মতো সামর্থ্য আর থাকছে না বেশিরভাগ মানুষের। বাংলাদেশ উন্নয়ন সমীক্ষার ১৪২২ বাংলা সালের বার্ষিক সংখ্যায় প্রকাশিত জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশের একটি পরিবারকে গড়ে মাসিক আয়ের ৯ শতাংশ ব্যয় করতে হয় চিকিৎসার পেছনে। আর দরিদ্রদের ক্ষেত্রে এই ব্যয় ৩৫ শতাংশ। এর মধ্যে আবার ৬৬ শতাংশই চলে যায় ওষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায়।
কিন্তু এদেশে ওষুধের দাম যা হওয়ার কথা, তার চেয়ে অনেক বেশি এবং এই দাম শুধুই বাড়ে, কখনোই কমে না- এই সাধারণ অভিযোগের সূত্র ধরে একুশে পত্রিকা অনুসন্ধানে নামে- কেন এদেশে ওষুধের দাম এতো বেশি। টানা ছয় মাসের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ‘মন খারাপ করা’ সব তথ্য। ওষুধ কোম্পানিগুলোর চতুরতা, স্বেচ্ছাচারিতা, অতিমুনাফালোভ এবং বিপণনের অনৈতিক-অমানবিক কৌশল; সেইসঙ্গে সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত আর শিথিল-দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন— এই সব মিলিয়ে দেশে ওষুধের দাম হয়েছে লাগামছাড়া।
অন্য সব পণ্যের মতো ওষুধের মূল্যও ঠিক করা হয়- কাঁচামালের দাম, উৎপাদন খরচ, প্যাকেজিং খরচ, বিপণন খরচ ও কোম্পানির লাভ- এই কয়টি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশে ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে কাঁচামাল ৯৫ ভাগই আমদানিনির্ভর এবং এই খাতে সরকারের ভ্যাট-ট্যাক্সসহ বিভিন্ন রকমের ছাড় আছে। উৎপাদন খরচও কম, কারণ এখানে জনবলের খরচ অন্য দেশের তুলনায় বেশ কম। একইভাবে প্যাকেজিং খরচও কম। বাকি থাকে বিপণন। আর রহস্যটা এখানেই লুকিয়ে। এখানে এমন একটা খাত রয়েছে, যা ওষুধ কোম্পানিগুলোর অসুস্থ প্রতিযোগিতার এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত; যা শুধু যে ওষুধের দামকেই আকাশচুম্বী করেছে, তা নয়; দেশের চিকিৎসক সমাজকেও ঠেলে দিয়েছে অনৈতিকতার পঙ্কিলে। উপহার-উপঢৌকন আর ক্যাশ টাকার মোহজালে আবদ্ধ করে নিজেদের কোম্পানির ওষুধ রোগীর প্রেসক্রিপশনে লিখিয়ে নেয়ার এক সর্বনাশা সংস্কৃতি চালু করেছে ওষুধ কোম্পানিগুলো। আর এই খাতটির খরচই সব থেকে বেশি, যা অবলীলায় ওষুধের দামের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে রোগীকে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ দিতে একটুও বাধে না ওষুধ কোম্পানির।
গত বছরের জুনে প্রকাশিত বাংলাদেশ উন্নয়ন সমীক্ষা নামে সরকারি প্রকাশনার এক নিবন্ধে জরিপের ফলাফল উল্লেখ করে বলা হয়, ‘ওষুধ কোম্পানিগুলোতে নিয়োজিত কর্মীদের বেশির ভাগই মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ (৪৬ শতাংশ)। তারপরেই রয়েছে বিক্রয় প্রতিনিধি (১৯ শতাংশ) ও উৎপাদন সংশ্লিষ্ট (অকারিগরি) কর্মী (১৭ শতাংশ)। বাকি কর্মীদের মধ্যে আছেন- অন্যান্য কারিগরি (৬ শতাংশ), প্রশাসনিক (৫ শতাংশ), ফার্মাসিস্ট (৪ শতাংশ), কেমিস্ট (২ শতাংশ), বায়োকেমিস্ট (১ শতাংশ) ও অন্যান্য (গাড়ি চালক, অফিস সহকারী, গার্ড) কর্মী (১ শতাংশ)।’ এই সরকারি জরিপেই স্পষ্ট যে, মার্কেটিং বা বিপণন খাতে প্রচুর টাকা ব্যয় করতে হয় ওষুধ কোম্পানিগুলোকে।
২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প’ শিরোনামে ইবিএল সিকিউরিটিজের একটি গবেষণায় সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন ও ইবিএল সিকিউরিটিজের গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়, ‘২০১৮ সালে মার্কেটিং বা বিপণন খাতে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের খরচ হয়েছে ৯৯৬ মিলিয়ন টাকা, বেক্সিমকো ফার্মার হয়েছে ৪২৮ মিলিয়ন, রেনেটার ৩৩৮ মিলিয়ন, একমির ১৬৪ মিলিয়ন, ইবনে সিনার ৯২ মিলিয়ন টাকা।’
গত বছর বাংলাদেশ উন্নয়ন সমীক্ষার গবেষণা নিবন্ধেই বলা হয়, ‘একটি নতুন ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের ক্ষেত্রে গৃহীত বিজ্ঞাপন কৌশলের অন্তর্ভুক্ত থাকে চিকিৎসকদেরকে নতুন প্রবর্তিত ওষুধের উপকারিতা বিষয়ে সরাসরিভাবে অবহিত করা (৯২ শতাংশ), ফার্মেসিগুলোর সাথে যোগাযোগ স্থাপন (৪৬ শতাংশ) এবং সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সাথে সংযোগ স্থাপন (২৭ শতাংশ)।’ অর্থ্যাৎ ৯২ শতাংশ কোম্পানি তাদের ওষুধের প্রচারের জন্য ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। এতে আরও বলা হয়, ‘দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোর বিপণন বাবদ খরচের অন্তর্ভুক্ত হলো- পণ্যের বিজ্ঞাপন ও বিতরণ খরচ এবং রিসোর্সপারসন নিয়োগ ও তাদেরকে সরবরাহ চেইন ইত্যাদির সাথে সম্পৃক্তকরণ। এসব ব্যয় হলো প্রতিষ্ঠানের সার্বিক বিপণন খরচের অংশ। জরিপকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো গত ৫ বছরে তাদের টার্নওভারের প্রায় ৩০ শতাংশ ব্যয় করেছে পণ্য বিপণন বা বাজারজাতকরণের পিছনে। ওই সরকারি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের মোট টার্নওভারের ৩ থেকে ৬০ শতাংশ খরচ করে বিপণন খাতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে ওষুধ কোম্পানিগুলো ডাক্তারদের পেছনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে, কমিশন দেয় এবং এই টাকা রোগীদের পকেট কেটে নেয়া হয়। এখানে ওষুধ বিপণনে যে যত বেশি টাকা ঢালতে পারবে, তার ওষুধের কাটতি তত বাড়বে, মুনাফা আসবে স্রোতের মতো। ওষুধ কোম্পানিগুলোর অনৈতিক ওষুধ বিপণন বহুকাল ধরে চলছে। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। চিকিৎসকের পেছনে টাকা ঢালার ক্ষেত্রে সানোফি-অ্যাভেন্টিস ও গ্লাক্সো স্মিথক্লাইনের মতো বিদেশি কোম্পানিগুলো অসুস্থ প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনি, যে কারণে তারা দেশ ছেড়েছে বলে আমি মনে করি।’
স্মৃতিচারণ করে ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘অনেক আগে একজন চিকিৎসক আমার সামনে এক বিক্রয় প্রতিনিধির কাছ থেকে একটি ক্রিস্টাল ফুলদানি নেন। এরপরই সেই কোম্পানির লোসার্টান পটাসিয়ামের ব্র্যান্ড নামটি (উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ) লিখে দিলেন এক রোগীর প্রেসক্রিপশনে। আমি হতবাক হয়ে গেলাম। সেই ওষুধের ব্র্যান্ড নামটিও চিকিৎসক আগে জানতেন না। তাৎক্ষণিক জেনে লিখে দিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসকদের কমিশন বাণিজ্যের কারণে মানুষের চিকিৎসা ব্যয় বেড়েই চলেছে। তবে ঢালাওভাবে সব চিকিৎসকের ক্ষেত্রে এ ধরনের অভিযোগ প্রযোজ্য নয়। অনেক চিকিৎসক আছেন, যারা এ কমিশন বাণিজ্যকে সম্পূর্ণ অনৈতিক জ্ঞান করে এড়িয়ে চলেন।’
ঢাকাভিত্তিক বিশেষায়িত ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ফোরপি মার্কেটিং কনসাল্টেন্সি’র বরাত দিয়ে ইবিএল সিকিউরিটিজের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময়কালে স্কয়ার ৭৪.৮০ শতাংশ ‘ডাক্তার রিচ’ করেছে। ইনসেপ্টা ৫৫ শতাংশ, বেক্সিমকো ৫৩.৯০ শতাংশ, রেনেটা ৪৪.৭০ শতাংশ, হেলথকেয়ার ৩৬.১০ শতাংশ ‘ডাক্তার রিচ’ করেছে। একই সময়ে ‘প্রেসক্রিপশন শেয়ার’ করেছে- স্কয়ার ১৩.৮০ শতাংশ, ইনসেপ্টা ৭.৩০ শতাংশ, বেক্সিমকো ৬.৩০ শতাংশ, রেনেটা ৪.৭০ শতাংশ, হেলথকেয়ার ৩.৩০ শতাংশ।’ প্রেসক্রিপশন শেয়ার বেশি হলে বিক্রিও বেশি হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
‘ডাক্তার রিচ ও ‘প্রেসক্রিপশন শেয়ার’ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওষুধ কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তা জানান, ডাক্তার রিচ মানে হচ্ছে- আগে একজন ডাক্তার তার কোম্পানির ওষুধ লিখতেন না। কিন্তু যোগাযোগ করার পর থেকে লেখেন। এখন ওই ডাক্তারের সাথে ভালো সম্পর্ক কোম্পানির। এটাকে ‘ডাক্তার রিচ’ বলা হয়। আর ‘প্রেসক্রিপশন শেয়ার’ হচ্ছে- ধরা যাক, একজন ডাক্তার এক রোগীর প্রেসক্রিপশনে মোট ২ হাজার টাকার ওষুধ লিখলেন। এখন কোন কোম্পানির কত টাকার ওষুধ লিখলেন- সেটা দেখার জন্য প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। সেটাই ‘প্রেসক্রিপশন শেয়ার’। আর একটা আছে ‘ডাক্তার লিভ’। এটার অর্থ- অনেক সময় ডাক্তারদেরকে মেডিকেল প্রমোশন অফিসাররা মোটরসাইকেল বা অন্য গাড়িযোগে চেম্বারে দিয়ে আসেন। ওষুধ কোম্পানির ভাষায় আরেকটা আছে- ‘সিটি’ বা ক্যাশ ট্রিটমেন্ট। প্রত্যেকটা কোম্পানি তার লভ্যাংশের একটি অংশ প্রতি মাসে ‘সিটি’তে বিনিয়োগ করে, অর্থাৎ ডাক্তারকে ক্যাশ টাকা দেয়।
‘প্রেসক্রিপশন শেয়ার’ বিষয়ে জানতে চাইলে ফার্মাসিউটিক্যালস্ রিপ্রেজেন্টেটিভ এসোসিয়েশনের (ফারিয়া) সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘রোগীর প্রেসক্রিপশন ধরা আইনত দণ্ডনীয়, শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে এমপিওদের দিয়ে এসব করাচ্ছে। বিভিন্ন ডাক্তারের সাথে কোম্পানির কন্ট্রাক্ট আছে। ডাক্তারদের পেছনে ওষুধ কোম্পানিগুলোর লক্ষ লক্ষ টাকা ডোনেট করা আছে। তাই এমপিওদের এসব করতেই হয়।’
এই খাতে ওষুধ কোম্পানিগুলোর খরচ দিন দিন বাড়ছে এবং ওষুধের দামও সেই হারে বাড়ছে। আইনত ওষুধ কোম্পানিগুলো পণ্যের বিজ্ঞাপন দিতে পারে না। তবুও বিপণনের পেছনে তাদের যে বিপুল ব্যয়, তা মূলত চিকিৎসকদের উপহারজালে আবদ্ধ করার কাজে। কে কী উপহার দিতে পারে, এ নিয়ে বড় কোম্পানিগুলো রীতিমতো প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, যদিও এই ব্যয়ের কথা বরাবরই তারা গোপন রাখে বলে অভিযোগ আছে।
গত ১৪ মার্চ সীতাকুণ্ডের সেই ঘটনা সম্পর্কে জানতে ১৬ মার্চ ফোন করার পর রং নাম্বার দাবি করার পাশাপাশি উজ্জ্বল হোসেন আরও বলেন, ‘আমি ভেবেছি, আমার কোনো বন্ধু মজা করে ফোন দিয়েছে।’ তখন ‘সীতাকুণ্ড পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের আমিরাবাদ তিন রাস্তার মাথা এলাকায় আপনার বাসায় তো বাক্সগুলো নেয়া হয়েছে। সেগুলো ডাক্তারদের উপহার দেয়ার জন্য কোম্পানির পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে কি না’- প্রশ্ন করলে উজ্জ্বল বলেন, ‘এখন আপনে এসব বিষয় নিয়ে কী করবেন? আপনার ছোটখাটো পত্রিকা দিয়ে কী হবে? বড় বড় পত্রিকা, টিভি আছে, নিউজ করতে পারে না এ দেশের ওষুধ শিল্প নিয়ে। আপনি আর কী করতে পারবেন? আপনার কিছু করার আছে?’ উজ্জ্বল আরও বলেন, ‘আপনি আর লোক পান নাই? যেকোনো একটা ফার্মেসির সামনে গিয়ে দাঁড়ান, ল্যাবের সামনে গিয়ে দাঁড়ান, সেখানে হাজার হাজার লোক আছে বিভিন্ন কোম্পানির। সীতাকুণ্ডেরটা দেখতে হবে, এরকম কিছু তো না। আপনার তো মনে হচ্ছে, পৃথিবীতে আমিই একমাত্র লোক, আমার কাছেই সব জানতে হবে, এরকম তো কিছু না। (উপহার) একজনের কাছে না, সব লোকের কাছে আছে। প্রত্যেকটা কোম্পানির লোকের কাছে আছে। উপহার ছাড়া কোনো কোম্পানি তার লোককে মার্কেটে ছেড়ে দেয়? অন্য কোম্পানির লোকের সঙ্গেও কথা বলেন, তারা তথ্য দেবে। আমি মনে হয়, আপনাকে বুঝাতে পেরেছি। ওকে-’ এটুকু বলেই ফোন কেটে দেন উজ্জ্বল।
ওষুধ কোম্পানির পক্ষ থেকে ডাক্তারদের উপহার দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এরিস্টোফার্মার চট্টগ্রামের ম্যানেজার (ডিস্ট্রিবিউশন) মাহবুব সিদ্দিকী একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। কারণ আমরা অফিসে কাজ করি। ডাক্তার ফ্রন্টে যারা কাজ করছেন, তারা বলতে পারবেন।’
একই বিষয়ে জানতে গত ১৪ মার্চ এরিস্টোফার্মার প্রধান কার্যালয়ে ইমেইল করা হলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সাড়া পাওয়া যায়নি।
২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন এরিস্টোফার্মার মার্কেট ইনফরমেশন অফিসার (এমআইও) মো. মিজানুর রহমান। যোগাযোগ করা হলে তিনি একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘ওষুধ কোম্পানিগুলো ডাক্তারদের সব কিছুই দেয়। যখন যা প্রয়োজন, যাকে যেভাবে ম্যানেজ করা দরকার, সেভাবে করে থাকে। যেমন শীতকালে কম্বল, গরমকালে এসি দেয়া হয়। তারপর কুকার, অলিভ অয়েল, ডিনার সেট, তৈজসপত্রও দেয়া হয়। চাকরিকালে এসব আমি নিজের হাতে দিয়েছি।’
ওষুধ কোম্পানিগুলো বিক্রয় প্রতিনিধিদের ব্যাপক চাপে রাখে জানিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, ‘বেতন হয়তো সবমিলিয়ে ২০-২৫ হাজার টাকা। কিন্তু কাজের সময় শেষ হয় না। শুক্রবারও ছুটি থাকে না। থাকলেও কাটাতে দেয় না। মাত্রাতিরিক্ত টার্গেট দেয়া হয়। পূরণ করতে না পারলে নেমে আসে নির্মম মানসিক নির্যাতন। কখনো অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ, কখনো বকাবকি, কখনো তুইতোকারি করে অপমান।’
ঘটনাচক্রে সেদিন এরিস্টোফার্মার গাড়ি সামনে পড়ে যাওয়ায় তাদের কথাটাই বারবার টানতে হচ্ছে। এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। অন্য কোনো কোম্পানির গাড়ি সামনে পড়লেও একই রকম অনুসন্ধান তুলে ধরা হতো এই প্রতিবেদনে।
দেশের আরেকটি বড় কোম্পানি ওরিয়ন ফার্মার একজন বিপণন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘ডাক্তারদের অনারিয়াম সাপ্তাহিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, বার্ষিক- বিভিন্ন পদ্ধতিতে হয়। যার রোগী যত বেশি, তার অনারিয়ামও তত বেশি। তবে ওষুধের মান না থাকলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া যায় না। কেননা, ওই ডাক্তারের একটা সুনাম আছে। খারাপ ওষুধ কয়দিন লিখবেন? একটা সময় তো তার রোগী কমে যাবে। অনেক কোম্পানিকে ডাক্তারের রুমেই ঢুকতে দেয়া হয় না। তবে অনেক ডাক্তার আছেন, যারা কোম্পানির কোনো অনারিয়াম নেন না। শুধু ওষুধ সম্পর্কে তথ্য জানতে চান।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমন ডাক্তারও আছেন, যাদেরকে দামি গাড়িও দেয়া হয়। কোনো কোনো কোম্পানি ফ্ল্যাটও দেয়। যে ডাক্তার দিনে ২০০ রোগী দেখেন, সেই ডাক্তার কোম্পানির জন্য সোনার হরিণ। তাকে গাড়ি দিলে লস নাই। কার্ডিয়াক ডাক্তারদেরকে গাড়ি, ফ্ল্যাট দেয়া হয়। কেননা, হার্টের ওষুধগুলো একবার লিখলে সারা জীবন খেতে হয় রোগীদের।’
নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের এক বিক্রয় প্রতিনিধি নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, ‘বর্তমানে ওষুধ কোম্পানি ও ডাক্তারদের বিনিময় পদ্ধতিও পাল্টে গেছে। আগে ওষুধ কোম্পানির দেয়া উপহারগুলোর কিছু ডাক্তারের সহকারীরাও পেতেন। এখন আর সেটাও নেই। সব ডাক্তাররাই নিচ্ছেন। বর্তমানে ডাক্তারদের চেম্বারে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা আগের মতো ভিড় করেন না। কারণ, আগে টুকিটাকি উপহার দিলেও এখন টিভি, ফ্রিজ, এসি, গাড়ির মতো চাহিদা ওষুধ কোম্পানিকে পাঠানো হচ্ছে ডাক্তারদের পক্ষ থেকে। কোম্পানিগুলো সেসব ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে। ভাতের চাল পর্যন্ত দিচ্ছে। ডাক্তারের চেম্বারের নামফলক, এসি, প্রেসক্রিপশন ছাপানো সবই করে দিচ্ছে ওষুধ কোম্পানি। তবে সব ডাক্তার এমন, তা-ও নয়। ভালো মানুষও আছেন, তবে সংখ্যাটা নগণ্য।’
পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসের একজন সাবেক কর্মী একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘ওষুধ কোম্পানিগুলো বিক্রয় প্রতিনিধিকে ওষুধ বিক্রির টার্গেট দেয়। আর টার্গেট পূরণ করতে পারলে বোনাস দেয়া হয়। চিকিৎসকরা যেসব প্রেসক্রিপশন লেখেন, তা সংগ্রহ করার জন্য মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এসব কাজে সফল হলে বেতন বাড়িয়ে টার্গেট পুর্ননির্ধারণ করা হয়। আবার ব্যর্থ হলে চাকরিও চলে যেতে পারে।’
২০২১ সালের জুনে প্রকাশিত বাংলাদেশ উন্নয়ন সমীক্ষার ওই গবেষণা নিবন্ধে বিভিন্ন কোম্পানির ২৫ জন বিক্রয় প্রতিনিধির সাক্ষাৎকার নেওয়ার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ‘ওষুধের বিক্রি বাড়াতে বিভিন্ন কোম্পানি ডাক্তার, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং ফার্মেসিগুলোকে নানাভাবে প্রভাবিত করে, যাতে ওরা তাদের কোম্পানির ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ বা নির্দেশনা দেয়। চিকিৎসকরা যাতে তাদের চিকিৎসাপত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ওষুধ লিখে দেন সেজন্য চিকিৎসকদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা বাবদ ব্যয়ও বিপণন ব্যয়ে অন্তর্ভুক্ত থাকে। ….. সাক্ষাৎকার প্রদানকারী বিপণন প্রতিনিধিদের মতে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফার্মেসি ও ডাক্তারদের সামান্য উপহার দেয়া হয়; আবার উপহার ব্যয়বহুলও হয়ে থাকে। যেমন, চিকিৎসকদের জন্য পারিবারিক ভ্রমণের ব্যবস্থা করা, আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা করা, এয়ারকন্ডিশনার, টেলিভিশন, ফ্রিজ, দামি মোবাইল ফোন ইত্যাদি দেওয়া। এভাবে মার্কেটিং বা বিপণন বাবদ খরচ বেড়ে যায়, যা শেষতক ওষুধ ব্যবহারকারীদের ঘাড়ে চাপে। এই বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আরও তদারকি হওয়া দরকার। ডাক্তাররা যদি কোনো বিশেষ কোম্পানির ওষুধের ব্রান্ড নাম না লিখে ওষুধের জেনেরিক নাম লেখেন, তাহলে ফার্মেসির কর্মচারীদের ক্ষমতা বাড়বে, একটি নির্দিষ্ট জেনেরিক নামের বিপরীতে কোন কোম্পানির ওষুধ দেবেন, সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে।’
তিন বছর একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেছিলেন মাসুদ রানা। এই চাকরিকে রক্তচোষা উল্লেখ করে তিনি একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘ডাক্তার রিচ থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি বিষয় কোম্পানির মিটিংয়ে এমনভাবে বলা হয় যে, তখন তাদেরকে মানুষ বলে ভাবতে কষ্ট হয়। তারা সেসব কথা এমনভাবে বলে যে, তারা দুনিয়ার কোনো কিছুর তোয়াক্কা করে না। মানুষের কী ভালো কী মন্দ, দেখার সময় নাই- এতোই খারাপ দৃষ্টিভঙ্গি তাদের। তারা বলে, যেকোনো ভাবেই হোক, আমাদের পণ্য বাজারে বিক্রি করতে হবে। এতে তুমি মরো আর বাঁচো।’
ডাক্তারের কমিশন ও উপহার নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ডাক্তারকে ওষুধ কোম্পানি একটা টার্গেট দেয়। সেটা এরকম- আপনি আমাকে দৈনিক ১৫টা প্রেসক্রিপশন দেবেন, আপনাকে মাসে ১০ হাজার টাকা করে দেব। এটা হচ্ছে ওষুধ কোম্পানির র্যাংকিংয়ে ৪০ নম্বর সিরিয়ালে থাকা আমার কোম্পানির হিসাব। তাহলে ওষুধ কোম্পানির মধ্যে এক, দুই, তিন, চার নম্বরে থাকা বড় কোম্পানিগুলো কত করে দিচ্ছে, তা অনুমান করা কঠিন না। এই নগদ টাকাকে বলা হয় ‘সিটি’, যা মাস শুরু হওয়ার আগেই দিতে হয়।’
মাসুদ রানা বলেন, ‘ওষুধ কোম্পানি এমপিওদেরকে চরম চাপে রাখে। মাস শেষে যদি চাহিদামাফিক প্রেসক্রিপশন না আসে, তখন চাকরি বাঁচাতে এমপিওরা হয় ভুয়া প্রেসক্রিপশন তৈরি করে কোম্পানিকে পাঠিয়ে দেয়, আর না হয় ফার্মেসিতে গিয়ে কোম্পানি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কমে ওষুধ বেচে দেয় এবং ওই ছাড়ের টাকা নিজের বেতন থেকে দিয়ে দেয়।’
প্রসঙ্গটি তুললে স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব রাগত স্বরে একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘তারা (ওষুধ কোম্পানিগুলো) ব্যবসার জন্য এটা করে। তারা দেয় কেন? ব্যবসা করতে গেলে এইগুলো দিতে হবে নাকি? তাদের নৈতিকতা নেই। আমি বলি, যারা দেয় তারাও দোষী।’
ওষুধ কোম্পানির মার্কেটিং খাতের অনেক টাকা ডাক্তারদের পেছনে খরচ হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ও হাডসন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শফিউজ্জামান একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা আমার জানা নেই।’
একই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ)-এর চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ ফয়সল ইকবাল চৌধুরী একুশে পত্রিকা বলেন, ‘ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা তাদের নতুন ওষুধের প্রমোশন করে, এটি সারা বিশ্বে স্বীকৃত। নতুন ওষুধ বাজারে এলে তা প্রমোশন করতেই হবে। কোম্পানিগুলো ডাক্তারদের যেসব উপহার দেয়, তা খুব বেশি দরকারি জিনিস নয়।’ বাংলাদেশ উন্নয়ন সমীক্ষার গবেষণার কথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘ওষুধ কোম্পানিগুলো ডাক্তারের পেছনে খরচ করে না, যা করে জাতির জন্য করে। তারা একটা সায়েন্টিফিক সেমিনার আয়োজন করলে, একটা মেডিকেল জার্নাল প্রস্তুত করলে সেখানে অনেক টাকা খরচ হয়। সেখানে ডাক্তারদের সাথে মতবিনিময় হয়। এতে জুনিয়র ডাক্তাররা অনেক কিছু জানতে পারে। এটি ওষুধ কোম্পানির প্রমোশন। এগুলো খারাপ কিছু না।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনো উন্নয়ন সমীক্ষা যদি ভুল গবেষণা করে তাহলে কিছু করার নাই।’
বিদেশে সেমিনারে যাওয়ার টিকিটসহ সব খরচ ওষুধ কোম্পানি দেয়- এ অভিযোগ তুললে ডা. ফয়সল ইকবাল বলেন, ‘এটা আমি জানি না।’ ওষুধ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে কিছু ডাক্তারের মাসোয়ারা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নগদ ট্রিটমেন্ট গ্রামের কোয়াক ডাক্তার, মেডিকেল সহকারীরা নিয়ে থাকে। ভালো ডিগ্রিধারী কোনো ডাক্তার এসব করে না।’
তবে এ বিএমএ নেতা বলেন, ‘আমরা ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের শক্তভাবে মানা করে দিয়েছি প্রেসক্রিপশনের ছবি না তুলতে। তারা এটি করে কোম্পানিকে বুঝাতে চায় যে, তার কারণে ডাক্তার ওষুধ লিখেছেন। আমরা এটি নিষেধ করেছি।’
সাইড স্টোরি— ওষুধ কোম্পানির টাকা খায় হাসপাতাল ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারও!