রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

তুমি হও যমুনা রাধা, আমি ডুইবা মরি

প্রকাশিতঃ ৭ অক্টোবর ২০১৫ | ৫:৫৮ অপরাহ্ন

 

:: সৌম্যব্রত ::

Love letterপ্রিয়তমা,

ফেস টু ফেস যখন দেখা হয় না, তখন ফেসবুকই ভরসা। সেদিন তোমার নতুন প্রোফাইল পিকচার দেখলাম। টানাটানা চোখে কাজল আঁকা। চুলগুলো কি লাল করেছো? মুখে একটু যে প্রসাধন লেগেছে বেশ বোঝা যাচ্ছে। নীল শাড়িতে নীলাম্বরী সাজে অপরূপ লাগছে। এইযে ‘‌‌অপ’ উপসর্গটার কথাই ধরো না যেখানেই বসে খারাপ অর্থ বোঝায়। শুধু রূপের আগেই বসলেই কেমন সৌন্দর্য বাড়িয়ে চলে। তলপেটের মেদ কায়দা করে লুকোতে চেয়েছ, এরপরও বোঝা যাচ্ছে। নতুন সম্পর্কে জড়ালে এমনই হয়, বলে জানিয়েছে ইন্দো-এশিয়ান বার্তা সংস্থা।

এক রিপোর্টে তারা বলছে, নতুন সম্পকের্র বাঁধনে জড়ালে ভালোবাসা আর সুখের জোয়ারে ভাসার সাথে সাথে বাড়তে পারে নারীর কটিদেশের স্ফীতিও! এক গবেষণা থেকে এমন ধারণা করছেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা। তুমি কপালও রাঙিয়েছ, ঠোঁটটা কি একটু বেশি রাঙা দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে, সুপারি দিয়ে বেশ করে একখিলি পান খেয়েছ। কিন্তু তুমি কি জানো এই সুপারিই প্রতিবছর হাজার-হাজার মানুষের মত্যুরও কারণ। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ার অনেক অঞ্চলে সুপারি স্থানীয় সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটিকে তাজা, শুকিয়ে বা পানপাতা দিয়ে মুড়িয়ে খিলি বানিয়ে ব্যবহার করা হয়। যদিও পানের খিলি বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে বানানো হয়, তবে সাধারণত চুন, পানপাতা, এলাচি বা দারচিনির মতো মশলা এবং তামাকের সাথে মিশিয়ে এই খিলি তৈরি করা হয়। আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা এসব উপাদানের মধ্যে এলাচি এবং দারচিনি ছাড়া বাকি সকল উপাদানকে ‘কার্সিনোজেন’ বা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। বোঝো অবস্থা! যদিও আমরা এটিকে ভালোবাসার প্রতীক এবং বদহজম ও বন্ধাত্যের মতো সমস্যার প্রতিকারক হিসেবে দেখে থাকি।

প্রিয়, তোমার কমলার কোষের মতো গোলাপরাঙা ঠোঁট আমার ভালো লাগে, তাই বলে ‌‘পান খাইয়া ঠোঁট’ রাঙা কি দরকার। আচ্ছা তোমার বিদেশ যাওয়ার কী হলো? খুবতো ইচ্ছে ছিল দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াবে। বিয়েও করলে তেমন একজনকে। কিন্তু তোমার কি স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে? যেমনটি সৌদিআরব যেতে গিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হতে হচ্ছে অনেক গৃহকর্মীর। এর কারণ কি জানো, বাসায় গৃহপরিচারিকা নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘সুন্দরীদের’ প্রতি অনীহা সৌদি গৃহকর্ত্রীদের। এজন্য নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘সুন্দরী নারী’ নিয়োগ না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সৌদি স্ত্রীরা। দেশটির গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ওই গৃহকর্ত্রী নারীরা বলেছেন, সুন্দরী নারীদের তারা গৃহপরিচারিকা হিসেবে চান না। কারণ তাদের ধারণা সুন্দরী কর্মচারী পরিবারের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারেন।

প্রিয়তমা, তোমাকে যতোই দেখি না কেনো বারে বারে আবিষ্কার করি নতুন রূপে। কবি নজরুল নীলাম্বরী শাড়ি পরে নীল যমুনায় কে যায় বলতে গিয়ে যেনো তোমার রূপেরই বর্ণণা দিয়েছেন। ‌অঙ্গের ছন্দে পলাশ, মাধবী অশোক ফুটে, নুপূর ছন্দে উঠে বেজে উঠে তুলশি মঞ্জরি। এরপরও তোমার সুঢোল স্তনযুগল যেনো পাগলপারা। ফিনফিনে স্বচ্ছ নীল শাড়ি ভেদ করে নিজ রূপে প্রকাশিত হয়েছে। এই মারাত্মক অস্ত্রে কতো পুরুষ যে ঘায়েল হয়েছে তার ঠিক নেই। ও দুঃখিত! অস্ত্র বললেতো আবার ক্ষ্যাপতে পারো। স্তন দিয়ে এক নারী নাকি ‘আক্রমণ’ করেছিলেন চীনের পুলিশ কর্মকর্তাকে! আর এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হংকংয়ের ওই নারীকে জেলে পাঠিয়েছেন দেশটির আদালত। অদ্ভুত এ রায়ের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠে হংকং। বক্ষবন্ধনী পরে প্রতিবাদ করেছেন প্রায় ৬০০ মানুষ। তারা বলে, স্তন কোনো অস্ত্র হতে পারে না। আসলে, ভালোবেসে কাউকে চাইলেতো মুশকিল নেই। কিন্তু কেউ যদি ধর্ষকের চোখে দেখে তাহলেই মুশকিল। দেশে সম্প্রতি যে হারে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে তাতে আঁতকে উঠতে হয়। আর যদি ভারতের ধর্ষক মুকেশ সিং এর মতো যুক্তি থাকে তবেতো কথাই নেই, সে যুক্তি দিয়ে বললো, ‘ধর্ষণের জন্য দায়ী মেয়েরাই’। মনে পড়ে কি ২০১২ সালে দিল্লির রাজপথে চলন্ত বাসে ধর্ষিত হওয়া নির্ভয়ার কথা। ৬ ডিসেম্বর রাতে চলন্তদ বাসে নির্ভয়া-কা-ের খবর শুনে সেদিন শিউরে উঠেছিল মানুষ। নির্ভয়াকে এরপর বাঁচানো যায়নি। অথচ এই ঘটনার জন্য নির্ভয়াকেই সম্পূর্ণভাবে দায়ী করলেন সেদিনের অন্যতম দোষী মুকেশ সিং। মুকেশ বলছে, ‘রাত ৯টার পর যে মেয়েরা বাড়ির বাইরে বেরোয়, তাদের উদ্দেশ্যই থাকে পুরুষদের আকর্ষিত করা।’ চলতি বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাাতিক নারী দিবসে বিবিসিতে সম্প্রচারিত হয় মুকেশের এই সাক্ষাৎকার। মুকেশ আরো বলেছে, ‘কোনো ভদ্র মেয়ে রাত ৯টার পর রাস্তায় বেরোয় না।‌’ আমাদের দেশের অনেক মানুষের যুক্তিও হয়তো মুকেশের সঙ্গে মিলে যাবে। শেষ করবো। কতোদিন তোমাকে দেখি না। যদি নাই বা দেখি, কেমন করে কাটে বলো আমার বেলা।

তাই কবি বিশ্বজিৎ চৌধুরীর ‘অপ্রেমের কবিতা’ থেকে ধার করে বলতে হয়, ‘তোমার চুল, দাঁতে চেপে রাখা ঠোঁট, চোখের পাতা নাচিয়ে বলা কথা। ভ্রু জোড়ার মাঝখানে ছদ্মকপটতা, এ সমস্ত ফেলে এলে কী থাকে আমার? নিয়নবাতিকে ঘিরে জমেছে কুয়াশা। বাতাসে পাতা খসে পড়া হাহাকার।‌’